এইচএসসির বিতর্কিত প্রশ্ন, প্রণেতারা শাস্তি পেলেন : আর কোনো পাবলিক পরীক্ষার দায়িত্ব নয়

আগের সংবাদ

স্বাচিপের পঞ্চম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : চাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা

পরের সংবাদ

টাঙ্গুয়ার হাওরে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে হিজল-করচ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা এবং তাহিরপুর উপজেলার জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ টাঙ্গুয়ার হাওর। ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়া, জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে এ হাওরের অবস্থান। সারি সারি হিজল-করচ গাছ, পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকে হাওরটি।
টাঙ্গুয়ার হাওরে রয়েছে ২০৮ প্রজাতির পাখি, ১৫০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ১৫০ প্রজাতির মাছ, ৩৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ১১ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ছয় প্রজাতির কচ্ছপ, সাত প্রজাতির গিরগিটি এবং ২১ প্রজাতির সাপ।
তবে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর আয়তনের জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ আজ বিপন্ন হওয়ার পথে। চোখজুড়ানো, নয়নাভিরাম হিজল-করচের বাগান থেকে নির্বিচারে প্রতিদিন কাটা হচ্ছে গাছ। মূলত জ¦ালানির চাহিদা মেটাতেই গাছগুলো কাটা হচ্ছে। এছাড়া হাওরের জলমহালে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গোপনে গাছ ও ডালপালা কেটে নিচ্ছে ইজারাদাররা। এতে বাসস্থান হারাচ্ছে পাখিরা। একই সঙ্গে বর্ষায় উত্তাল ঢেউ (আফাল) থেকে হাওরবাসীকে সুরক্ষা দেয়ার ব্যবস্থাও এখন হুমকিতে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ১২০টি কান্দা রয়েছে। নদী, হাওর ও জলাশয়ের তীরে এসব কান্দায় বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে হিজল-করচের বাগান। নব্বই দশকে টাঙ্গুয়ার হাওর জলমহালের ইজারাদার প্রয়াত চেয়ারম্যান হাজী জয়নাল আবেদীন এসব হিজল-করচ গাছ লাগিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ সংকটাপন্ন হওয়ায় হাওরের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে। এ অবস্থায় জলজ-স্থলজ জীববৈচিত্র্যের আধার খ্যাত এ হাওরটিকে রামসার সাইট ঘোষণা করা হয়।
২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি ইরানে এক সম্মেলনে টাঙ্গুয়ার হাওরকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। তবে ওই সম্মেলনে এ হাওরকে সংকটাপন্ন ঘোষণা দেয়া হয় এবং জীববৈচিত্র্য ও হাওরের পরিবেশ পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সরকারকে নির্দেশনা দেয়া হয়। ২০০৩ সালের নভেম্বর থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরের ইজারা প্রথা বাতিল করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও রামসার নীতি বাস্তবায়নে বিশেষ উদ্যোগ নেয়। তবে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতার অভাবে হাওরের গাছ-মাছ-পাখি বিনষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে হাওরটির অরক্ষিত অবস্থার কারণে স্থানীয় লোকজন ও ইজারাদারের লোকজন চুরি করে গাছ কেটে নানা কাজে ব্যবহার করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সরজমিনে টাঙ্গুয়ার হাওরের পার্শ্ববর্তী জয়পুর, গোলাবাড়ি, রংচি, মন্দিয়াতাসহ বিভিন্ন এলাকার কান্দা ঘুরে গাছ কেটে নেয়ার দৃশ্য দেখা গেছে।
টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের গোলাবাড়ির বাসিন্দা ডালিম মিয়া বলেন, হাওরের আশপাশের কয়েকটি গ্রামের কিছু মানুষ দা, করাত দিয়ে প্রতিনিয়তই গাছ কেটে নিচ্ছে। হাওরের দুর্গম গ্রাম হিসেবে তারা বর্ষায় জ্বালানি সংকটে থাকে। তাই তারা গাছ কেটে নিয়ে যায়।
টাঙ্গুয়ার হাওরের সমাজকর্মী খসরুল আলম জানান, টাঙ্গুয়ার হাওরের হিজল-করচের বাগানে সারা বছর পাখি ও নানা উদ্ভিদ অবস্থান করে। আফাল (ঢেউ) থেকে এসব গাছের সারি প্রাকৃতিক দেয়াল হিসেবে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটের সুরক্ষা দেয়। এখন এসব গাছ কেটে মাছ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সময়ে ইজারাদাররা লুকিয়ে তাদের জলাশয়ে নিয়ে ফেলছে। এতে হাওরের জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
সদ্য বিদায়ী সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গাছ কাটা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে। টাঙ্গুয়ার হাওরসহ অন্যান্য হাওর সুরক্ষার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া আছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের সুরক্ষার দায়িত্বে যেসব আনসার রয়েছে তাদেরকে আরো সক্রিয় করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়