রাজশাহীতে শিশু ধর্ষণের মামলায় যাবজ্জীবন

আগের সংবাদ

নৌকায় ভোট দেবেন, ওয়াদা চাই : যশোরের জনসমুদ্রে শেখ হাসিনা, বিএনপির কাজই গুজব ছড়ানো, রিজার্ভের কোনো সমস্যা নেই

পরের সংবাদ

ফটিকছড়িতে দুই বন্ধুর কৃষি বিপ্লব

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দৌলত শওকত, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) থেকে : দুই বন্ধু আব্দুল হালিম ও ওসমান গণি। তারা দুজনই ফেনী সরকারি কলেজে ¯œাতকোত্তরে অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অধ্যয়নরত। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী বাগান বাজার ইউনিয়নের চিকনেরখীল এলাকায়।
তবে তাদের গল্পটা কলেজ পড়–য়া অন্য শিক্ষার্থীদের থেকে একেবারেই ভিন্ন। ২ বছর পূর্বে কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন ক্যাম্পাস ছেড়ে গ্রামে চলে আসেন তারা।
অলস সময় ব্যয় করা যাবে না, এই চিন্তা থেকে মাথায় আসে চাষাবাদ করার। যেই চিন্তা, সেই কাজ। সামান্য জমি লিজ নিয়ে প্রথমদিকে স্বল্প পরিসরে শুরু করেন সবজি চাষ। এরপর সফলতা আসতে সময় লাগলেও হাল ছাড়েননি তারা। পরবর্তীতে পারিবারের সহযোগিতায় ৫ একর জমিতে গড়ে তোলেন ‘রুপাই ভ্যালি এগ্রো ফার্ম’ নামে সবজি ক্ষেত। যেখানে লাউ, চিচিঙা, ঢেঁড়শ, তিতকরল, কাঁকরোল, টমেটো ও বর্ষাকালীন বেগুন চাষের পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন বিশাল পেঁপে বাগান। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৩ বিঘা জমির পুরো অংশে লাউ চাষ করা হয়েছ। দেখে মনে হবে যেন দিগন্ত জোড়া সবুজের সমারোহ। নাইস গ্রিন জাতের বারোমাসি লাউয়ের মাচায় ঝুলছে ফুল আর ফল। সবজির পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে পেয়ারা, কলা, কুল, ড্রাগনসহ বিভিন্ন জাতের ফলের আবাদ করা হয়েছে।
নিজেদের খামারে উৎপাদিত শাক, সবজি ও ফলমূল বিক্রি করে আর্থিকভাবে তারা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি ফার্মে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হচ্ছে অনেক মানুষের। সম্প্রতি নিরাপদ সবজি উৎপাদনকারী সফল কৃষক হিসেবে জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে স্বীকৃতিও পেয়েছেন তারা। কলেজ পড়–য়া দুই তরুণের চাষাবাদ এলাকায় বেশ সাড়া জাগিয়েছে। তাদের দেখাদেখি অনেকে এখন সবজি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এছাড়াও ক্ষেত দেখতে প্রতিদিন আশপাশের এলাকা থেকে ছুটে আসছেন নানা বয়সি মানুষ।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, দুই তরুণের সবজি ক্ষেতে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে হলুদ পাতার ব্যবহার ও পেরোমোন জৈব পদ্ধতি এবং জৈব সার ব্যবহার করা হয়েছে। এ দুটি বালাই দমন পদ্ধতির কারণে কীটনাশক ছাড়াই ক্ষেতের পোকামাকড় দমন করা সহজ হচ্ছে। পাশাপাশি জৈব পদ্ধতির চাষাবাদে খরচও তুলনামূলক কম।
জানতে চাইলে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুল হালিম ভোরের কাগজকে বলেন, মূলত আমরা দুই বন্ধু অনার্সের শিক্ষার্থী। সূচনাটা অবসর কাটানোর জন্য হলেও চাষাবাদ এখন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। শিক্ষিত এ তরুণ আরো বলেন, সফল্যের মূলমন্ত্র হচ্ছে ইচ্ছাশক্তি, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ। আমাদের দেশে কৃষি কাজকে এখনো অবহেলার চোখে দেখা হয়। এ ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
অপর উদ্যোক্তা ওসমান গণি বলেন, এবার লাউয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। লাউ বিক্রি করে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ টাকা আয় হয়েছে। গাছে আরো প্রায় ২ লাখ টাকার ফলন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ বছর দেড় বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করা হয়েছে। আশা করছি ১০ লাখ টাকার বেশি পেঁপে বিক্রি হবে। গত মৌসুমে ৭ বিঘা জমিতে কাঁকরোল চাষ করে আশাতীত ফলন এসেছে বলে জানান এ উদ্যোক্তা।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, সরকার নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে বেশি জোর দিচ্ছে। এ অবস্থায় রুপাই ভ্যালি এগ্রো ফার্মের বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদনের সফলতা সারাদেশের জন্য একটি সুসংবাদ। চাকরির পেছনে না দৌড়ে শিক্ষিত এ দুই তরুণ কৃষি ক্ষেত্রে যে সফলতা অর্জন করেছেন, তা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়