রাজশাহীতে শিশু ধর্ষণের মামলায় যাবজ্জীবন

আগের সংবাদ

নৌকায় ভোট দেবেন, ওয়াদা চাই : যশোরের জনসমুদ্রে শেখ হাসিনা, বিএনপির কাজই গুজব ছড়ানো, রিজার্ভের কোনো সমস্যা নেই

পরের সংবাদ

টাকার জন্য নাতি-নাতনির হাতে খুন হলেন নানা : ট্যুরে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা, গ্রেপ্তার ৫

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর চকবাজারের বাইতুন নুর মসজিদের সভাপতি মুনসুর আহম্মেদের নাতি নাতনি ও তাদের বন্ধুরা ট্যুরে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। ট্যুরের খরচ জোগাতে নানা মুনসুর আহম্মেদকে অচেতন করে নগদ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে নাতি নাতনি। পরিকল্পনায় যুক্ত হয় নাতনির প্রেমিকসহ আরো কয়েকজন। পরে ঘটনার দিন নকল চাবি দিয়ে দরজা খুলে রাজধানীর চকবাজার খাজে দেওয়ান রোডের ফার্স্ট লেনের ছয়তলা ভবনের দোতলায় ডাকাতির জন্য প্রবেশ করে তারা। এরপর মুনসুর আহম্মেদকে অচেতন করার জন্য ইনজেকশন দিতে গেলে তিনি বাঁধা দেন। আর তখন মারধর করলে মারা যান মুনসুর আহম্মেদ।
ঘটনাস্থলে হত্যার ক্লু হিসেবে পাওয়া সিরিঞ্জের সূত্র ধরে এ ঘটনায় নাতি নাতনিসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বকশিবাজার, চাঁদপুর আর মুন্সীগঞ্জ থেকে মুনসুর আহম্মেদের দুই নাতি ও নাতনির বয়ফ্রেন্ডসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে চকবাজার থানা পুলিশ। তারা হলেন- মুনসুর আহম্মেদের মেয়ের দুই ছেলেমেয়ে আনিকা তাবাসসুম ও শাহাদাত মুবিন আলভী। তাবাসসুমের বয়ফ্রেন্ড রাজু ও রাজুর ভাই রায়হান ও তাদের পরিচিত সাঈদ।
এদিকে, আনিকা তাবাসসুম ও শাহাদাত মুবিন আলভীকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদের আদালতে তুলে ১৬৪ এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়। এ সময় আদালতে আসেন তাদের বাবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে কর্মরত ডা. মাকসুদুর রহমান ও মা আজিমপুর গার্লস স্কুলের সিনিয়র শিক্ষিকা। অন্যদিকে আনিকার বয়ফ্রেন্ড রাজু ও তার ভাই রায়হানের বাবা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মহাসচিব।
আনিকা ও আলভীর মা ভোরের কাগজকে বলেন, আমি সব হারালাম। বাবাকে হারালাম, আর এখন আমার দুই ছেলে মেয়েকে হারাতে বসেছি। আমরা এখন অসহায়। তবে আমার ছেলে মেয়ে এ ঘটনা ঘটায়নি। টাকার জন্য তারা এ কাজ করবে না। আনিকা-আলভির বাবা ডা. মাকসুদুর রহমান বলেন, আমার ছেলে আলভির উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কাল (আজ)। পকেটে তার পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিয়ে ঘুরছি। আমার ছেলেটা কাল পরীক্ষা দিতে পারবে না বলে কেঁদে দেন তিনি। রাজুর বাবা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মহাসচিব আব্দুর রহমান বলেন, আনিকার সঙ্গে আমার ছেলে রাজুর ৭ম শ্রেণি থেকে সম্পর্ক। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার পর আমার ছেলের আর পড়ালেখা করেনি। আনিকাকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে সেই নিয়ে যেতো নিয়ে আসত। তবে আমার ছেলে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। মামলার তদন্ত হলেই বের হয়ে যাবে। এছাড়া আসামি সাইদ রাজু ও রায়হানের ফুফাতো ভাই বলে জানা গেছে।
গতকাল বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, ঘটনাস্থলে একটি সিরিঞ্জ পাওয়া যায়। এই সিরিঞ্জকে কেন্দ্র করে তদন্ত মোড় নেয়। শুরুতে আমরা দস্যুতাসহ খুনের মামলা নিলেও পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যদের পরিকল্পনায় খুনের প্রমাণ পাই। পরিকল্পনায় নিহতের নাতি-নাতনি জড়িত। নাতনি আনিকা ন্যাশনার ডেন্টালে পড়েন। তিনি মূল পরিকল্পনাকারী, তার ভাই, তার ছেলেবন্ধু ও অন্যরা পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতি করতে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, এক মাস আগে পরিকল্পনা হয়। বাসা ফাঁকা থাকার সুযোগ খুঁজছিলেন তারা। আর এ সুযোগটি আসে ১৭ নভেম্বর রাতে। পরিবারের সদস্যরা চাঁন কমিউনিটি সেন্টারে একটি বিয়ের দাওয়াতে অংশ নিতে যায়। আনিকাও সেখানে যায়। কমিউনিটি সেন্টার থেকে তদারকি করেন আনিকা। আর বাড়ির আশপাশে থেকে আনিকার প্রেমিক রাজু দেখভালের কাজ করেন। ডাকাতি করতে বাসায় প্রবেশ করেন আনিকার ভাই আলভী, রাজুর ভাই রায়হান এবং সাঈদ। এরপর তারা মুনসুর আহম্মেদকে অচেতন করার জন্য ইনজেকশন দিতে গেলে তিনি বাঁধা দেন। আর তখনই তাকে মারধর করেন ডাকাতি করতে যাওয়া তরুণেরা। মারধরের একপর্যায়ে মুনসুর আহম্মেদ মারা যান। এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা বাসা থেকে ৯২ হাজার টাকা নিয়ে যায়। ঘটনার পর ১৯ নভেম্বর নিহতের ছেলে আসগার আহম্মেদ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় দস্যুতাসহ হত্যার মামলা করেন। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে মুনসুর আহম্মেদ হত্যায় তার পরিবারের সদস্যরা জড়িত।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ইনজেকশন দেয়ার সময় মুনসুর বাধা দিলে তাকে মারধর করেন রায়হান এবং সাঈদ। ঘরে থাকা ৯২ হাজার টাকা খুঁজে বের করে দেন আলভী। লুট হওয়ার টাকার মধ্যে ৬২ হাজার টাকা আনিকার বাসা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ডাকাতি করা। কারণ আনিকা ও আলভী পরিবার থেকে হাত খরচ হিসেবে খুবই সামান্য টাকা পেতেন। ঘুরতে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত টাকা প্রয়োজন হওয়ায় ডাকাতির পরিকল্পনা করেন তারা। ঘটনাক্রমে হত্যার শিকার হন মুনসুর আহম্মেদ।
ভুক্তভোগী মনসুর আহম্মেদের স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন। এ ঘটনায় আনিকা ও আলভী জড়িত থাকার বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারলেও তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ডিজিটাল ফরেনসিক, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কার কী দায় রয়েছে তা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারও করেছেন পাঁচজন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়