ঢাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন ৩ ডিসেম্বর : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন ২ ডিসেম্বর

আগের সংবাদ

ভিত্তিহীন গুজবে ব্যাংকিং খাত > ব্যাংকে জনগণের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে : বাংলাদেশ ব্যাংক

পরের সংবাদ

২৫ শতক জমিতে ২২ মণ বাগদা!

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া খুলনা থেকে : খুলনার ডুমুরিয়ায় মাত্র ২৫ শতক জমিতে ২২ মণ বাগদা উৎপাদন হয়েছে। এক হাজার টাকা দরে বিক্রি করে পেয়েছেন ৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। গল্প মনে হলেও এটা সত্য। আর এই অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন ডুমুরিয়া উপজেলার ভাণ্ডারপাড়া ইউনিয়নের কানাইডাড়া গ্রামের বাগদা চাষি অভিজিৎ বিশ্বাস। এই চাষাবাদে তার খরচ হয় ৪ লাখ টাকা। সাড়ে চার মাসে তিনি ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নিট মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
এ ব্যাপারে অভিজিৎ বিশ্বাস ভোরের কাগজকে বলেন, জলাশয় প্রস্তুতের পর পানির ট্রিটমেন্ট করি। নদী থেকে নোনা পানি তুলে ব্লিচিং পাউডার, পটাশ দিয়ে পোনা ছাড়ার উপযোগী করি। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ২৩ হাজার ৪০০ পিস বাগদার পোনা দেয়া হয়। খুলনার বটিয়াঘাটার ‘দেশ বাংলা হ্যাচারি’ থেকে পোনা সংগ্রহ করি। ওই হ্যাচারিতে ভাইরাসমুক্ত স্পেসিফিক প্যাথোজেন্ট ফ্রি (এসপিএফ) পোনা পাওয়া যায়।
সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে বাগদা হারভেস্ট করা হয়। দিনে চারবার খাবার দেয়া হয়েছে। খাবারের পাশাপাশি চুন, ওষুধ ও শ্রমিক খরচ মিলে ৪ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। জাল টানা দিয়ে ৮৮৫ কেজি বাগদা পেয়েছি। প্রতিকেজি এক হাজার টাকা দরে ৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি করি। প্রতিটি বাগদার গড় ওজন হয় ৫০ গ্রাম।
তিনি জানান, অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখতে জলাশয়ে দুটি বৈদ্যুতিক মোটর বসানো হয়। বায়ো সিকিউরিটির জন্য ঘেরের পাড় নেট দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়। জলাশয় ৬ ফুট গভীরতা ও পাড় মজবুত করতে হয়েছে।
তিনি প্রথম ২০১৯ সালে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চাষ শুরু করেন। প্রথম বছর খরচ একটু বেশি হয়। প্রথম বছর ৬ লাখ টাকা খরচ হয় তার। বিক্রি হয় ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। করোনায় দাম পতনের ভয়ে ২০১৯ ও ২০২০ সালে চাষ করা থেকে বিরত থাকেন। ২০২১ সালে একই জমিতে ৪ লাখ টাকা খরচ করে ৮ লাখ টাকা বিক্রি করেছিলেন।
তিনি আরো বলেন, সিপি কোম্পানির টেকনিশিয়ান হাবিব ভাইয়ের কাছ থেকে প্রথম পরামর্শ পেয়ে উদ্বুদ্ধ হই। ওই কোম্পানির শোভন ভাইও সহযোগিতা করেন। আর ডুমুরিয়ার সিনিয়র উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু বকর সিদ্দিক সর্বদা দিকনির্দেশনা দিয়ে পাশে ছিলেন। আমার আবেগ বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ডুমুুরিয়া উপজেলায় ২৬ হাজার ৫১২টি চিংড়ি ঘেরের মধ্যে ৭ হাজার ৮০০টিতে বাগদা চাষ করা হয়। বাকিগুলোতে গলদা চাষ হয়। এ উপজেলায় মোট চিংড়ির উৎপাদন ১০ হাজার ৫০০ টন। আধা নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ এ এলাকায় বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই পদ্ধতিতে হেক্টরপ্রতি চিংড়ির উৎপাদন সাধারণ পদ্ধতির চেয়ে প্রায় ৩০ গুণ বেশি। তবে বেশ ঝুঁকি রয়েছে। ব্যাকটোরিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রোবায়োটিক ব্যবহার করতে হয়।
ঘেরে নিয়মিত অ্যারেশন কিংবা পেডেল হুইল চালিয়ে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক রাখতে হয়। চার পাশ দিয়ে নেট ব্যবহার করে বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিত করতে হয়। জলাশয়ে কমপক্ষে ৫ ফুট গভীরতা থাকতে হয়। স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত সুষম খাদ্য প্রয়োগ করতে হয়। রোগ-জীবাণু নিয়ন্ত্রণে সর্বদা সতর্ক থাকা ও পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডুমুরিয়ার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, অভিজিৎ বিশ্বাস অত্যন্ত দক্ষ একজন চিংড়ি চাষি। এ বছর তার হেক্টরে উৎপাদন প্রায় ৯ টন। মৎস্য দপ্তর থেকে তাকে সব ধরনের কারিগরি পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। অন্য বাগদা চাষিদের জন্য তিনি উদাহরণ।
তিনি আরো বলেন, আধা নিবিড় পদ্ধতির চিংড়ি চাষ অনেক লাভজনক। কিন্তু বায়োসিকিউরিটি বা জৈব নিরাপত্তা রক্ষা করতে না পারলে বেশ ঝুঁকি রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়