কাগজ প্রতিবেদক : দক্ষিণ আফ্রিকায় পলাতক ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার দুই আসামিকে বাংলাদেশে ফেরত আনতে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক বৈঠক শেষে তিনি এ তথ্য জানান। ঢাকা সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যানডিথ মাসেগো ডিলামিনির সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার দুজন আসামি আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এর মধ্যে একজনের অবস্থান আমরা নিশ্চিত। তাদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শাহরিয়ার আলম বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রচুর কয়লা রয়েছে। সেখান থেকে কয়লা আমদানি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যান্ডিথ মাসেগো ডিলামিনি বলেন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতি ও ইতিহাসের অনেক মিল রয়েছে। জননেতা নেলসন ম্যান্ডেলা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন। তারা দুজনই দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো বাড়াতে চাই। এনার্জি খাতেও সহযোগিতা বাড়ানো যেতে পারে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মাওলানা তাজ উদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে রয়েছেন।
এদিকে, কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্যোক্তাদের বাণিজ্য স¤প্রসারণ ও বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। মঙ্গলবার সকালে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে সংগঠনের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে দক্ষিণ আফ্রিকার উপপররাষ্ট্র মন্ত্রী ক্যানডিথ মাসেগোর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল। বৈঠকে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খাদ্য, জ্বালানিসহ নিত্য পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। একক বাজার নির্ভরতা কমিয়ে বাজার বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি বস্ত্র শিল্পেও দুদেশের বাণিজ্য স¤প্রসারণের সুযোগের কথাও তুলে ধরেন এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর বিদ্যমান বাজার সুবিধা পাবে না বাংলাদেশি তৈরি পোশাক। গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে দেশে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজন (ভ্যালু অ্যাডিশন) বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য দেশেই বস্ত্র শিল্পের কাঁচামালের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এছাড়াও বৈঠকে ওষুধ, চামড়া, পাট, আইসিটিসহ বেশকিছু সম্ভবনাময় খাতের কথা তুলে ধরেন মো. জসিম উদ্দিন। দেশে দক্ষিণ আফ্রিকার বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি, বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদেরও বিদেশে বিনিয়োগের সক্ষমতা এবং আগ্রহের কথা জানান তিনি। বৈঠকে বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেন দক্ষিণ আফ্রিকার মন্ত্রী ক্যানডিথ মাসেগো। তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশাল কৃষি জমি রয়েছে। সেখানে উৎপাদিত সবজি এবং ভুট্টা বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। এসব পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বাজারজাতকরণের সুযোগ রয়েছে উভয় দেশে।
পাশাপাশি ফিশারিজ, ব্লæ-ইকোনমিসহ জ্বালানি খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি ও পারস্পরিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন দক্ষিণ আফ্রিকার মন্ত্রী। এ সময় বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে উভয় দেশের উদ্যোক্তা এবং বাণিজ্য সংগঠনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তাব দেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন। এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী, মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ (এশিয়া এন্ড ব্রিকস) প্রফেসর অনিল সুকলাল, নিউ দিল্লিতে সাউথ আফ্রিকান হাইকমিশনের পলিটিক্যাল কাউন্সেলর শ্যাড্রেক রামেতসিসহ দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।