অর্থপাচার মামলা : বরকত-রুবেলের আরেক সহযোগী কারাগারে

আগের সংবাদ

আরব্য রজনীর নতুন রূপকথা : সৌদি আরব ২ : আর্জেন্টিনা ১ > মেসিদের প্রত্যাশিত হারে স্তব্ধ ফুটবল বিশ্ব

পরের সংবাদ

বাজারের আগুনে ইন্ধন জোগাবে বিদ্যুতের দাম : পাইকারি পর্যায়ে বেড়েছে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ > অযৌক্তিক বলছেন জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আবেদনের পরিপ্র্রেক্ষিতে বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে বাড়িয়ে খুচরা গ্রাহকদের আতঙ্ক ধরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গড়ে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ইউনিটে বিদ্যুতের দাম ১ টাকা ৩ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে শিগগিরই বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করবে। ফলে অর্থনৈতিক সংকট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে হিমশিম খাওয়া খুচরা পর্যায়ের গ্রাহকদের পকেট আরো কাটা যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিইআরসি কর্মকর্তারাও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। যদিও বিদ্যুৎ জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়বে না বলে আশ্বস্ত করেছেন।
এদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সরকারের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক বলে জানিয়েছেন জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এই মূহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। সব পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষ এখন সংকটের মধ্যে আছে। এই অবস্থায় বিতরণ কোম্পানিগুলো খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং গ্রাহকদের পকেট থেকেই বাড়তি টাকা খসিয়ে নেবে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গতকাল সোমবার বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ায়। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করে। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটে বিদ্যুতের দাম ১ টাকা ৩ পয়সা বাড়ানো হয়। এবার নিয়ে গত ১২ বছরে বিদ্যুতের দাম ৯ বার বাড়ানো হয়। এ সময় পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রয়ারি মাসে দাম বাড়ানো হয়। ওই বছরের মার্চ মাসেই দাম কার্যকর হয়। তখন পাইকারি পর্যায়ে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর গতকাল বিইআরসি কর্মকর্তারা জানান, ব্যয়বহুল হওয়ায় ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। একই কারণে স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে না। পাইকারি দাম বাড়ানোকে বিতরণ কোম্পানিগুলো হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এবার আমরা সরকারের ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বিবেচনায় নিয়ে গড়ে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ দাম বাড়ানো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এই দাম বাড়ানোর ফলে শিগগিরই গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে।
বিইআরসি কর্মকর্তারা বলেন, সাধারণত সরবরাহকৃত বিদ্যুতের পরিমাণকে বিবেচনায় নিয়ে বিতরণ কোম্পানির রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়। সরবরাহকৃত বিদ্যুতের দামের সঙ্গে বিতরণ কোম্পানির পরিচালন ব্যয় যোগ-বিয়োগ করে খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দেয়ায় বিতরণ কোম্পানিগুলোর রাজস্ব কমে গেছে।

পাইকারি দাম বাড়ালে সেই সুযোগে তারা কম উৎপাদনকে সামনে এনে বেশি করে দাম বাড়াতে চাইবে, যা কৌশলগতভাবে উপেক্ষা করার সুযোগ থাকবে না। ফলে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে কোনো উপায় থাকবে না।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর এক প্রতিক্রিয়ায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলেও গ্রাহক পর্যায়ে এখনই দাম বাড়ছে না। এখনই জনগণের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। দাম বাড়বে কিনা সেটা মাঠপর্যায়ের তথ্যের ওপর নির্ভর করবে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিইআরসি তাদের মতো সবকিছু বিবেচনা করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে তারা ঘোষণা দিয়েও দাম বাড়ায়নি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এজন্য পুরো পৃথিবীতেই বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে। গ্রাহক পর্যায়ে এখনই দাম বাড়ছে না।
জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, এই মুহূর্তে পাইকারি ও খুচরা কোনো পর্যায়েই দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। মানুষ এমনিতেই চারদিক থেকে আর্থিক সংকটে আছে। পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। ডিসেম্বর থেকে দাম কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিতরণ কোম্পানিগুলো লোকসান দেখিয়ে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর আবেদন করবে। দেখা যাবে তখন সরকার খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেবে এবং সাধারণ মানুষের পকেট থেকেই বাড়তি দাম আদায় করবে। সব ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর প্রভাব পড়বে।
জ¦ালানি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট মেটাতে সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নিচ্ছে। এছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কাছ থেকেও সরকার আর্থিক সহায়তা নিচ্ছে। এসব সংস্থা সরকারের ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে জ¦ালানি তেল, বিদ্যুৎ খাতে দাতা সংস্থাগুলো ভর্তুকির বিরুদ্ধে। দাতা সংস্থার চাহিদার কারণেই এখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি গড়ে পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর জন্য এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছে আবেদন করে। কিন্তু পিডিবির তথ্যে অসম্পূর্ণতা থাকায় তা আমলে না নিয়ে আবারো আবেদন করতে বলে। পরবর্তীতে পিডিবি নতুন করে আবেদন করলে গত ১৮ মে বিইআরসি শুনানির আয়োজন করে। এই আবেদনের পর বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। তবে গণশুনানিতে ক্যাব ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়