অর্থপাচার মামলা : বরকত-রুবেলের আরেক সহযোগী কারাগারে

আগের সংবাদ

আরব্য রজনীর নতুন রূপকথা : সৌদি আরব ২ : আর্জেন্টিনা ১ > মেসিদের প্রত্যাশিত হারে স্তব্ধ ফুটবল বিশ্ব

পরের সংবাদ

ঝিকরগাছায় উৎপাদিত পণ্যের ব্র্যান্ডিং নাম ‘পল্লী পণ্য’

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আতাউর রহমান জসি, ঝিকরগাছা (যশোর) থেকে : কপোতাক্ষ, বেতনা ও হরিহর নদের পলিবিধৌত যশোর জেলার মাটি যেমন উর্বরতায় সর্বোৎকৃষ্ট তেমনি এখানকার মানুষ অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং কর্মতৎপর। উৎপাদনশীলতায় ঝিকরগাছা উপজেলা যশোর জেলার যে কোনো উপজেলার চেয়ে এগিয়ে। বিভিন্ন মৌসুমে শস্য বা ফসলের পাশাপাশি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ফুল উৎপাদনকারী উপজেলা ঝিকরগাছা।
এছাড়াও গবাদি পশুপালন ও দুধ উৎপাদনেও ঝিকরগাছা উপজেলা বেশ এগিয়ে। উপজেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য হস্তশিল্প কারিগর, যারা প্রতিনিয়ত তৈরি করছেন নকশিকাঁথাসহ বহু সেলাইপণ্য, বাঁশ, বেত, কচুরিপানাসহ খেজুরের পাতার তৈরি নানা রকম হস্তশিল্প। দেশ-বিদেশে রয়েছে এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা। কিন্তু সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং সমন্বয়ের অভাবে উদ্যোক্তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের কাক্সিক্ষত মুল্য পাচ্ছেন না। ফলে উপজেলার সামগ্রিক উন্নয়ন তরান্বিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
সম্প্রতি ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এসব পণ্য দেশ-বিদেশে ব্র্যান্ডিং করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে ‘পল্লী পণ্য’। যার স্লোগান- ‘কর্মে নৈপুণ্য, সৃষ্টিতে অনন্য’। এটি পরিচালনার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে ১২ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা নিজেদের তৈরি বা উৎপাদিত পণ্য এই ব্র্যান্ড নামে দেশ ও বিদেশে বিক্রি করতে পারবে।
সম্প্রতি যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দীন ‘পল্লী পণ্য’র লোগো উন্মোচন করেন। জানা গেছে, ফুলের রাজ্য গদখালীতে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জাইকার অর্থায়নে পরিচালিত উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে উপজেলা পরিষদ কর্তৃক একটি ‘উদ্যোক্তা সমন্বয় ভবন’ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই স্থাপনাকে ই-কমার্স সেন্টার নামেও ডাকা হবে। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রির শো-রুম হিসেবে ব্যবহৃত হবে এটি। এখান থেকে ঝিকরগাছা উপজেলার ব্র্যান্ড পণ্যসমূহ ফুলের রাজধানী খ্যাত গদখালীতে আগত পর্যটকদের নিকট উপস্থাপনের জন্য ব্র্যান্ড নেম ‘পল্লী পণ্য’ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ‘পল্লী পণ্য’ ব্র্যান্ড নামে পণ্য বিক্রি করতে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আবেদন নেয়া হচ্ছে। যাছাইবাছাই শেষে তাদের সঙ্গে চুক্তি করা হবে।
এ ব্যাপারে শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত তরুণ উদ্যোক্তা মেঘনা ইমদাদ ভোরের কাগজকে বলেন, ঝিকরগাছা একটি সম্ভবনাময় উপজেলা। এখানকার কচুরিপানা, খেজুরের পাতা, সন (ঘাস) দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পণ্য, খেজুরের গুড়, সিল্কসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড়ে তৈরি নকশী পণ্য বা হস্তশিল্পের যেমন দেশ-বিদেশে সুখ্যাতি আছে তেমনি প্রচুর চাহিদাও আছে। পল্লী পণ্যের মাধ্যমে এখন থেকে উদ্যোক্তারা ন্যায্যমূল্যে এসব পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এই মহতি উদ্যোগ প্রসংশনীয়।
এ ব্যাপারে প্রকল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুল হক ভোরের কাগজকে বলেন- এটি স্থাপনের ফলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান বদলে যাবে। এ উদ্যোগের সার্বিক দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বেকাররা উৎপাদনমুখী হবে, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। এলাকার গ্রামীণ নারীদের উৎপাদিত হস্তশিল্প দেশ ও আন্তর্জাতিক বাজারে উপস্থাপন এবং বিপননের মাধ্যমে তারা সাবলম্বী হবেন। এই প্রকল্পের দ্বারা ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতায় আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
এতে রপ্তানিমুখী কার্যক্রমে জড়তা দূরীকরণ ও দক্ষ উদ্যোক্তা নিয়োগের মাধ্যমে রপ্তানি বাণিজ্য সহজীকরণ হবে। তিনি আরো বলেন, ঝিকরগাছা উপজেলার প্রতিটি গ্রামে প্রশিক্ষিত জনশক্তি যেসব পণ্য উৎপাদন করছে তার সঠিক বিপণন করবে ‘পল্লী পণ্য’।
ঝিকরগাছার উদ্যোক্তারা নারিকেল ও বাদাম দিয়ে খেজুরের গুড় তৈরি করছেন। দুধ সংরক্ষনের জন্য মোজারেলা চিজ, মাশরুম, ভার্মি কম্পোস্ট, প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত প্রশাধনী সামগ্রী, কাগজের হস্তশিল্প, রঙিন মাছের চাষসহ বিভিন্ন হস্তশিল্পের মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে।
তিনি আরো বলেন, ঝিকরগাছাকে ব্র্্যান্ডিং করার জন্য একটি লোগো তৈরি করা হয়েছে। জারবেরা ফুলের আদলে তৈরি ফুলে ১২টি পাপড়ি আছে। যার ১২টি পাপড়ির মাধ্যমে ঝিকরগাছার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাকে বোঝানো হয়েছে। ফুলের ভিতর লাল, হলুদ ও সোনালী রং সম্ভাবনাময় ঝিকরগাছাকে বোঝানো হয়েছে। ফুলের নিচের অংশ ঝিকরগাছার উপর দিয়ে বহমান কপোতাক্ষ নদকে বোঝানো হয়েছে। যা ‘পল্লী পণ্য’র ‘য ফলা’ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। পল্লী পণ্য লেখার নিচে ঝিকরগাছা লেখা থাকবে এবং ঝিকরগাছার ব্র্যান্ড লোগোটি এর সঙ্গে যুক্ত হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়