কবি বেগম সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আগের সংবাদ

বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের আচরণবিধি মনে করালেন মোমেন

পরের সংবাদ

‘সেভেন সিস্টার্সের’ সঙ্গে সুসম্পর্ক চায় বাংলাদেশ > পাইপলাইনে ভারত থেকে আসবে জ্বালানি তেল : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অভিজিৎ ভট্টাচার্য : বাংলাদেশ লাগোয়া ‘সেভেন সিস্টার্স’ খ্যাত আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার মতে এই সাত রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের যত সুসম্পর্ক হবে তত নিরাপত্তার ঝুঁকি কমে আসবে, পাশাপাশি ব্যবসায়িক সম্পর্কও বাড়বে। এতে দুই পক্ষই লাভবান হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রসঙ্গত, উত্তর-পূর্ব ভারতে ‘সেভেন সিস্টার্স’ খ্যাত রাজ্যগুলো হলো- আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, মনিপুর, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল। এর মধ্যে ঢাকা সফররত আসাম বিধানসভার স্পিকার বিশ্বজিৎ দৈমারির নেতৃত্বে বিধায়কদের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল রবিবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পরে ১০ সদস্যের আরেকটি প্রতিনিধি দল স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সীর সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে বাংলাদেশ আসাম থেকে চা, মেঘালয় থেকে কয়লা এবং চুনাপাথর আমদানির গতি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করে। পাশাপাশি আসামের বিধায়করা বাংলাদেশের পোশাক কারখানার অভিজ্ঞতা নিতে চান। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা তাদের রাজ্যে পোশাক কারখানা স্থাপন করতে চান। সফরকালে তারা প্রাণ-আরএফএলের কয়েকটি কারখানা

ঘুরে দেখবেন।
চার দিনের জন্য গত শনিবার বিকালে আখাউড়া-আগরতলা সীমান্ত দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যের ৩২ বিধায়ক বাংলাদেশ সফরে আসেন। ৩২ সদস্যের মধ্যে আসাম বিধানসভার স্পিকার বিশ্বজিৎ দৈমারির নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। প্রতিনিধিদলের বাকি তিন বিধায়ক হলেন- এআইইউডিএফের বশির আহমেদ কাসিমী, আসাম গণপরিষদের রমেন্দ্র নারায়ণ এবং কংগ্রেসের বিধায়ক ও আসাম বিধানসভার বিরোধী দলনেতা দেবব্রত সাইকিয়া। পরে বিধায়কদের এই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যুক্ত হন করিম উদ্দিন বড়ভূঁইয়া, কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, দীপায়ন চক্রবর্তী, রেকিব উদ্দিন ও তেরস গোয়ালা। তারা সবাই আসাম বিধানসভার বিধায়ক।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ঢাকা সফররত আসামের বিধায়কদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাইপলাইনের মাধ্যমে ২০২৩ সাল থেকে ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানি শুরু হবে। এজন্য ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন (আইবিএফপিএল) প্রকল্পের অধীনে পাইপলাইন তৈরি নির্মাণ করা হয়েছে, যা দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে তেল পণ্য রপ্তানি করা হবে। শেখ হাসিনা আরো বলেন, করোনাকালে বন্ধ হয়ে যাওয়া দুই দেশের সীমান্ত লাইনের বিভিন্ন অংশে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্ডার হাটগুলো আবার চালু হবে। প্রধানমন্ত্রী এই সফরের জন্য প্রতিনিধিদলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সব সময়ই প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্কের উন্নতি চায়। ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই প্রতিবেশী দেশ আলোচনার মাধ্যমে অনেক বিরোধের সমাধান করেছে। আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, প্রতিবেশী নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম ও ত্রিপুরা পারস্পরিক সুবিধার জন্য চট্টগ্রাম বিমান ও সমুদ্র বন্দর এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে। শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া কানেক্টিভিটি রুটের কথা উল্লেখ করে বলেন, রুটগুলো পর্যায়ক্রমে চালু করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দেয়ার জন্য ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। আসামের সঙ্গেও করিমগঞ্জ হয়ে রেল যোগাযোগ শুরু হবে।
আসাম বিধানসভার স্পিকার বিশ্বজিৎ দৈমারি বলেন, বাংলাদেশ সফরে তাদের খুব ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে এবং প্রতিবেশী দেশ থেকে সহযোগিতার মাধ্যমে আসামের জনগণ উপকৃত হবে। প্রতিনিধিদল এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ জোরদারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, আসাম বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে কৃষি খাতে সহযোগিতা চায়। কারণ এ খাতে বাংলাদেশের ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার মতে, বাংলাদেশ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের প্রশংসা করে প্রতিনিধিদল। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা সফররত বিধায়ক করিম উদ্দিন বড়ভূঁইয়া ভোরের কাগজকে বলেন, চারদিনের সফর হলেও রবিবারই সফরের মূল কাজ হয়েছে। এদিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় কানেক্টিভিটি, বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ সুসম্পর্কের বিষয় রয়েছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বাণিজ্য, কানেক্টিভিটিসহ সুসম্পর্ক বাড়ানোর প্রসঙ্গ বারবার উঠে এসেছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আসাম থেকে চা এবং মেঘালয় থেকে কয়লা ও সিমেন্ট তৈরির উপকরণ চুনাপাথর আমদানির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আগেও তো এসব জিনিস বাংলাদেশ আমদানি করেছে, সেক্ষেত্রে নতুন করে এই বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে যাতে কোনো জটিলতা না হয় সেদিকে জোর দেয়া হয়েছে। এর বিপরীতে সেভেন সিস্টার্স বাংলাদেশের কাছে কী চেয়েছে- এমন প্রশ্ন্রে জবাবে তিনি বলেন, বিধায়কদের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশের পোশাক খাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। কারণ বাংলাদেশে যেভাবে পোশাক খাতের অগ্রগতি হয়েছে ঠিক সেভাবে আসামেও পোশাক কারখানা করতে চায় সেখানকার সরকার। এজন্য বাংলাদেশ থেকে এর কৌশল জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে বাংলাদেশের প্রাণ-আরএফএলের পণ্যের খুব চাহিদা। এজন্য নরসিংদীতে স্থাপিত প্রাণ-আরএফএলের একটি কারখানা তারা পরিদর্শন করবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়