কবি বেগম সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আগের সংবাদ

বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের আচরণবিধি মনে করালেন মোমেন

পরের সংবাদ

সিপিডির আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা : ধনী দেশের অবহেলায় গ্র্যাজুয়েশন পাওয়া দেশগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ধনী দেশগুলোর অবহেলার কারণে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়া (গ্র্যাজুয়েশন) দেশগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। জেনেভায় অনুষ্ঠিত ১২তম বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা মন্ত্রিসভা সম্মেলনেও স্বল্পোন্নত দেশের উত্থাপিত বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়নি বলে অভিমত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদরা বলেন, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেটি এলডিসি হিসাবে পাওয়া সুযোগগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করেছে। দেশটি অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা ব্যবহার করে রপ্তানি বাড়িয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো- যদি এই ধরনের সুযোগগুলো আরো চলতে থাকবে কিনা। যদি তা না হয়, তাহলে তারা কীভাবে কাজ করবে? তবে বাণিজ্য সচিব বলেন, আমি মনে করি এলডিসি-উত্তরণের পর বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বাংলাদেশের কোনো সমস্যা হবে না।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল রবিবার ফ্রেডরিখ-এবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস) বাংলাদেশের অংশীদারত্বে সেন্টার পর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘ডব্লিউটিও এমসি১২ আউকাম: এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে বাংলাদেশের পরবর্তী পদক্ষেপ’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্যবসায়ী নেতা ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন। প্রবন্ধ তুলে ধরেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তফিজুর রহমান। বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফসিসিআিই সভাপতি মো. জসিমউদ্দিন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপচিালক এম. হাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ ট্যারিফ ও ট্রেড কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান, এফইএসর আবাসিক প্রতিনিধি ফেলিক্স কলবিটজ, সাবেক বাণিজ্য সচিব সোহেল আহমদ চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. তৌফিক আলী।
অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর দাবিগুলো ডব্লিউটিও- এমসি১২-এ উপেক্ষিত হয়েছে। সম্মেলনে উন্নত ও ধনী দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডাগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান এজেন্ডা এলডিসি গ্র্যাজুয়েট। এর আগে গ্র্যাজুয়েশন পাওয়া ছয়টি দেশের বেশিরভাগই ছোট অর্থনীতির। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যারা সর্বাধিক সুবিধা নিতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু এলডিসি উত্তরণের পর অনেক সুবিধাই হারাতে হবে। রপ্তানি খাতে প্রায় ৯০ শতাংশ সুবিধা বাংলাদেশের জন্য থাকবে না। তাই রপ্তানি কর্মক্ষমতা টেকসই এবং উন্নত করতে হলে পছন্দচালিত প্রতিযোগিতা থেকে দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা-চালিত প্রতিযোগিতায় স্থানান্তরিত হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ফোরামে বাংলাদেশের স্বার্থ

একচেটিয়াভাবে আলোচনা ও সুরক্ষিত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি পৃথক এবং নিবেদিত সেল গঠন করা উচিত।
ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন বলেন, রপ্তানির সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বহু বছর ধরেই আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু তাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের গবেষণায় বাজেট বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ১ শতাংশ। অথচ অন্যান্য দেশে এটি জিডিপির ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে দরকার জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা। এজন্য জাতীয় বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ আরো বাড়াতে হবে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যেসব দেশ আগে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হয়েছে তারা জনসংখ্যা ও অর্থনীতির আকারের দিক থেকে ছোট দেশ। অর্থনীতি ও জনসংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান বৃহৎ। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেটি এলডিসি হিসাবে পাওয়া সুযোগগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করেছে। দেশটি অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা ব্যবহার করে রপ্তানি বাড়িয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো- যদি এই ধরনের সুযোগগুলো চলতে থাকবে কিনা। যদি তা না হয়, তাহলে তারা কীভাবে কাজ করবে? এমসি-১২ এর ঘোষণায় গ্র্যাজুয়েশন হওয়ার পরে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো অতিক্রম করার জন্য কোনো প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ধনী দেশগুলোর অবহেলার কারণে, গ্র্যাজুয়েশন পাওয়া দেশগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। ভবিষ্যৎ নন-এলডিসি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিবেচনা করে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
জসিম উদ্দিন বলেন, রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে সরকারি- বেসরকারি মিলে ১২টি খাত নিয়ে কাজ চলছে। আশা করছি, এখান থেকে ভালো ফল পাব। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সংকট আরো গভীর হয়েছে। তা মোকাবিলায় এফবিসিসিআই একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে এবং এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। এতে ভর্তুকি, ট্যারিফ কাঠামো ও পণ্য বহুমুখীকরণের সুপারিশ করা হয়েছে।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমাদের মোট পোশাক রপ্তানির ৬০ শতাংশ যায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের বাজারে। ২০২৬ সালের পর ওইসব দেশে আমাদের রপ্তানি ব্যাহত হবে না। যুক্তরাজ্য ঘোষিত জিএসপি নীতি বাংলাদেশের জন্য সহায়ক। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি প্লাস কর্মসূচি পালনও কঠিন হবে না।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি প্লাস কর্মসূচি পালন করা আমাদের জন্য কঠিন হবে না। কাজেই, আমি মনে করি, এলডিসি-উত্তরণের পর বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বাংলাদেশের কোনো সমসা হবে না।
হাফিজুর রহমান বলেন, বালি, নাইরোবি, জেনেভাসহ বেশিরভাগ সম্মেলনের কোনো ভালো ফল আমরা দেখিনি। ডব্লিউটিও সম্মেলনে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর ইস্যু সবসময়ই উপেক্ষিত হয়েছে। সেজন্য তাদের দিকে না তাকিয়ে উত্তরণ- পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়