কবি বেগম সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আগের সংবাদ

বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের আচরণবিধি মনে করালেন মোমেন

পরের সংবাদ

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে আশা জাগাল লস ও ড্যামেজ ফান্ড

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ধনী দেশগুলো গত ৩০ বছর ধরে যে আলোচনাকে টেবিলের বাইরে রাখার চেষ্টা করেছে সেই আলোচনাটাই এবার কপ২৭ এ সামনে আসে। এতদিন তারা আলোচনাটা সামনে আসতে দেয়নি। যেহেতু তারা ঐতিহাসিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অন্যতম দায়ী, সেহেতু তাদেরই আগামী শতাব্দীর জন্য এর মূল্য দিতে হবে। ৩০ বছর আগে করা একটি প্রতিশ্রæতিতে বলা হয়েছিল যে ধনী দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে আরো বেশি প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
লস এন্ড ড্যামেজ তহবিল : শারম আল-শেখে জলবায়ু আলোচনা গত শুক্রবারই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের তাৎক্ষণিক প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য একটি নতুন তহবিলের প্রয়োজনীয়তা আলোচনার সবচেয়ে বড় বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই বিষয়টিই জাতিসংঘের আলোচনার কাঠামোতে লস এন্ড ড্যামেজ তহবিল নামে পরিচিত। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান, নাইজেরিয়া বন্যার প্রভাব এবং মিসরে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আলোচনার এজেন্ডায় পরিণত হয়েছে।
আন্তঃসরকারি প্যানেল : জলবায়ু পরিবর্তনে গরিব দেশগুলোর ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতে এবারের সম্মেলনে ব্যাপক দেন-দরবার চলছিল। শেষ পর্যন্ত স্বাক্ষর হওয়া এই ‘লস এন্ড ড্যামেজ’ চুক্তিতে ধনী দেশগুলো কীভাবে ক্ষতিপূরণ দেবে আর ক্ষতিগ্রস্তরাই বা কীভাবে ক্ষতিপূরণ পাবে তার বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। বিবিসি লিখেছে, এই ‘লস এন্ড ড্যামেজ’ টার্মটি মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের তাৎক্ষণিক প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশগুলোকে সহায়তায় একটি তহবিলের প্রয়োজনীয়তার দিকেই ইঙ্গিত করছে।
স্টিকিং পয়েন্ট : জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষয়ক্ষতির জন্য কে অর্থ দেবে সেই প্রশ্নটি সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আলোচকরা বলছেন যে এটি সমাধান করা হয়েছে, তবে একটি চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করা বাকি আছে। আয়োজক দেশ মিসর বলেছে যে তারা রাত শেষ হওয়ার আগে সামগ্রিক চুক্তিটি করতে চেয়েছিল, তবে চুক্তি কিছুটা বাকি ছিল এবং তারা আরো একটি দীর্ঘ রাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ঐতিহাসিক : সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট সামেহ শউকরি এ তহবিল গঠনকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তহবিল গঠনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও। তিনি বলেছেন, এ তহবিল গঠনই যথেষ্ট নয়। তবে জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবিলায় এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
নাটকীয় পদক্ষেপে ইইউ : বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ইইউ বলেছে যে কিছু শর্তে এই প্রস্তাবে সম্মত হওয়া যায়। ইইউ যুক্তি দেয় যে, চীন, সৌদি আরব এবং সিঙ্গাপুরের মতো বৃহত্তর উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে ও এই

অর্থ বহন করতে হবে। কারণ ৩০ বছর আগে তারাও উন্নয়নশীল দেশের দাবিদার ছিল। উন্নয়নশীল দেশের সংজ্ঞা সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে তারা মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।
একটি অনন্য মুহূর্ত : আফ্রিকা গ্রুপের প্রধান আলোচক আলফা কালোগা এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ত্রিশ বছরের ধৈর্যের ফলে এই দিনটি এসেছে। তিনি টুইট করেছেন, এটি একটি অনন্য মুহূর্ত, বিশ্বের সব নাগরিকের জন্য একটি জয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের আলোচক ডা. সিওভান ম্যাকডোনেল বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটি একটি বড় মুহূর্ত। আলোচকদের মধ্যে অপ্রতিরোধ্য অনুভূতি হলো স্বস্তি।
ভুলে গেল জীবাশ্ম জ্বালানির কথা : আলোচনার অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতিশ্রæতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। গত বছর গøাসগোতে কপ২৬-এ কয়লার ব্যবহার ‘ফেজ ডাউন’ করতে সম্মত হয়েছিল। তবে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে জোরদার কোনো অঙ্গীকার উচ্চারিত হয়নি এবারের সম্মেলনে। চূড়ান্ত অঙ্গীকারনামায় তেল, গ্যাসসহ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের কোনো উল্লেখ করা হয়নি। 
হতাশাও আছে : তবে ২৭তম জলবায়ু সম্মেলনের অগ্রগতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন গøাসগোতে অনুষ্ঠিত ২৬তম জলবায়ু সম্মেলনের সভাপতি অলোক শর্মা। ব্রিটিশ প্রতিনিধি জানান, ‘আমি হতাশ। আমরা জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণে এগিয়ে যেতে পারিনি’। শনিবার রাতেও আলোচকদের বিধ্বস্ত চেহারা কারও নজর এড়ায়নি। ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউটের সিইও অনি দাশগুপ্ত বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো কীভাবে ক্ষতি এবং ক্ষতির তহবিল তত্ত্বাবধান করা হবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট আশ্বাস ছাড়াই মিসর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ইউরোপীয় কমিশনার এবং ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ফ্রান্স টিমারম্যানস বলেছেন, মিসরের শার্ম আল-শেখে কপ২৭ জলবায়ু চুক্তি ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য হতাশার মধ্যে শেষ হয়েছে। গত বছর গøাসগোতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে প্রায় একই চুক্তি করা হয়েছিল, যে কারণে বিভিন্ন পক্ষ একে হতাশাজনক পরিণতি বলে অভিহিত করেছে।
সম্মেলনের ঘোষণা : গরিব দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে সমঝোতা হওয়ার পর এখন সম্মেলনের ঘোষণা নিয়ে আলোচনা চলছে। নানান মতবিরোধ থাকায় এটি ঠিক হতেও বেশ সময় লাগতে পারে বলে অনেকের ধারণা। সম্মেলনে অংশ নেয়া মালদ্বীপের পরিবেশমন্ত্রী আমিনাথ শোনা বলেন, ‘লস এন্ড ড্যামেজ’ নিয়ে একটি ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। তবে সেটি আজকে ভোটাভুটিতে অনুমোদিত হতে হবে। তিনি বলেন, নতুন একটা বিষয় এখানে আমরা আলোচনা করছি। সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ আমরা কীভাবে আদায় করতে পারি। আমাদের প্রথম সক্ষমতা হয়েছিল যে আমরা এটাকে এজেন্ডাতে আনতে পেরেছিলাম। এটা আমরা অনেকদিন ধরে চেষ্টা করেছি, পারিনি। এবারে আমরা সক্ষম হয়েছি। এখন আমাদের দাবি হচ্ছে, কপ২৭ এ যেন আমরা নতুন একটা তহবিল নিয়ে সম্মত হতে পারি। 
বাংলাদেশের অর্জন : জলবায়ু সম্মেলনের বাড়তি দিনে টুইটারে ডয়চে ভেলের আলোচনায় অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির জানান, এবার বাংলাদেশের অর্জন হলো বাংলাদেশ ‘লস এন্ড ড্যামেজ’ ফান্ডের বিষয়টি এজেন্ডায় তুলতে পেরেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যা যা করে সেটাকে তুলে ধরার একটা সুযোগ থাকে কপ সম্মেলনে। আর্লি ওয়ার্নিং, অ্যাডপটেশন, উইমেন লেড এমার্জেন্সির মতো বিষয়গুলোতে বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
কম নারীর অংশগ্রহণ : বিবিসির বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে জাতিসংঘের শীর্ষ সম্মেলনে ৩৪% এরও কম নারীর উপস্থিতি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারীরা সবচেয়ে বেশি বোঝা বহন করে এমন প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল নগণ্য। ব্রাজিলের মিনাস গেরাইসের ক্রেনাক জনগোষ্ঠীর আদিবাসী নারী শার্লি ডুকুর্না ক্রেনাক বিবিসিকে বলেছেন যে, নারীরা সবসময়ই এই গ্রহের জন্য ‘যোদ্ধা’। কপ২৭ সম্মেলনের উদ্বোধনী ছবিতে ১১০ জন নেতার মাত্র ৭ জন ছিলেন নারী।
আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীন : বিশ্বের দুটি বৃহত্তম গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনকে নিয়েই আলোচনা অব্যাহত ছিল। এই গ্রীষ্মে দুই দেশের মধ্যে জলবায়ু সংক্রান্ত আলোচনা স্থগিত করার পর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত সপ্তাহে বালিতে জি-২০ সম্মেলনে মিলিত হওয়ার সময় মার্কিন-চীন যোগাযোগ পুনঃস্থাপনে সম্মত হন, যা মার্কিন জলবায়ু দূত জন কেরির জন্য পথ প্রশস্ত করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়