কবি বেগম সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আগের সংবাদ

বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের আচরণবিধি মনে করালেন মোমেন

পরের সংবাদ

পিবিআইয়ের পর ডিবি : দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু দুর্ঘটনায় > মর্নিং সান লঞ্চের ৬ জন গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখাও (ডিবি) জানাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যুর ঘটনাটি দুর্ঘটনাজনিত। মর্নিং সান-৫ নামে একটি লঞ্চ বিপ্লবের নৌকায় ধাক্কা দিলে তিনি ডুবে গিয়ে মারা যান। এ ঘটনায় লঞ্চের ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ওই লঞ্চের মাস্টার হাফেজ মো. সাইদুর রহমান (৩৮) ও আলামিন (৩৫), ইঞ্জিন ড্রাইভার মো. মাসুদ রানা (৩৮) এবং ইমন হোসেন (২৩), সুকানি মো. সালমান (২১) ও সুপারভাইজার ইব্রাহীম (২৯)। গতকাল রবিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও ছাত্রলীগের জিএস দুরন্ত বিপ্লব গত ৭ নভেম্বর ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানার কোনাখোলা এলাকা থেকে জিনজিরা- সোয়ারিঘাট হয়ে ঢাকায় আসার পথে নিখোঁজ হন। পাঁচ দিন পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান অবস্থায় একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেদিন রাতে মরদেহটি নিখোঁজ দুরন্ত বিপ্লবের বলে নিশ্চিত করেন তার স্বজনরা। এই নিখোঁজ সংক্রান্ত প্রথমে একটি সাধারণ ডায়েরি ও পরে মৃত্যু সংক্রান্ত নিয়মিত মামলা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ডিএমপির ডিবি লালবাগ বিভাগ ও পিবিআই মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তকালে একাধিক টিম ঢাকা মহানগরী ও কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তারে সমর্থ হই আমরা।
তিনি বলেন, ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে আমরা নানাভাবে জানার চেষ্টা করেছি। দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু রাজনৈতিক কারণে নাকি শত্রæতাজনিত। আমরা কোনো শত্রæর সন্ধান পাইনি। আমরা জেনেছি, তিনি নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ ছিলেন। যদিও তার পারিবারিক ঝামেলা ছিল। তিনি কেরানীগঞ্জের কোনাখোলা এলাকায় একা থাকতেন। নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করতেন। সোনামাটি নামে একটি এগ্রোফার্ম পরিচালনা করতেন তিনি। সেখানকার বিভিন্ন পণ্য তিনি প্রতিদিনই ঢাকায় পাঠাতেন। নিখোঁজের দিন দুরন্ত বিপ্লব তার কর্মচারী হেলালকে সঙ্গে নিয়ে বিকাল ৪টা ৪৪ মিনিটের দিকে কুরিয়ার সার্ভিস বয় গোলাম রাব্বানীর কাছে কিছু সবজির প্যাকেট হস্তান্তর করে বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটের দিকে নূর ফিলিং স্টেশনের কাছাকাছি রাস্তায় সিএনজি অটোরিকশায় (ঢাকা থ-১১-৫৮৭৩) উঠেন।
অটোরিকশাচালক বিল্লালের ভাষ্যমতে, সন্ধ্যা ৫টা ১৫ থেকে ২০ মিনিটের দিকে তাকে জিনজিরা ঘাটে নামিয়ে দেয়া হয়। সিসিটিভি ফুটেজ এবং ডিজিটাল মুভমেন্ট বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা পুলিশ নিশ্চিত হয়, জিনজিরাঘাট ও কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ এলাকার নদীর পাড়ে ভিকটিম বিপ্লবের সর্বশেষ অবস্থান ছিল। এখানে তিনি অবস্থান করেও কুরিয়ার সার্ভিস বয় গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে পাঠানো সবজি নিয়ে একাধিকবার ফোনে কথা বলেছেন। জিনজিরা ঘাট থেকে সোয়ারীঘাটে চলাচল করা খেয়া নৌকার মাঝি শামসু মিয়ার তথ্যমতে, মাগরিবের নামাজের আগে-পরে পাঁচজন যাত্রী নিয়ে তার নৌকা মাঝ নদীতে এলে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া মর্নিং সান-৫ লঞ্চ সেটিকে ধাক্কা দেয়। এতে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তলিয়ে যায়। যাত্রীরা পানিতে পড়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে অন্য নৌকা এসে কয়েকজনকে উদ্ধার করতে পারলেও একজন ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া যাত্রীই নিহত দুবন্ত বিপ্লব বলে জানা যায়।
লঞ্চের কর্মচারীদের অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, সেজন্য তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে উল্লেখ করে ডিসি মশিউর রহমান বলেন, দূর থেকে নৌকার গতিবিধি দেখার কথা। নৌকা যাচ্ছিল আড়াআড়িভাবে, লঞ্চ যাচ্ছিল সোজা। লঞ্চের তো নৌকাকে পাশকাটিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেই মাপ তাদের জানার কথা। নৌকা লঞ্চকে ধাক্কা দিতে পারে না। লঞ্চই নৌকাকে ধাক্কা দিয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা সেটি স্বীকারও করেছেন। ধাক্কা দিয়ে চলে যাওয়ার পর দূরে গিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করে তারা দেখেছে সেখানে আসলে কী ঘটেছে। ততক্ষণে নৌকা তলিয়ে গেছে। নৌকা ডুবিতেই যে বিপ্লবের মৃত্যু হয়েছে তা তার জুতা উদ্ধার এবং মোবাইল টাওয়ারের সর্বশেষ অবস্থান অনুযায়ী স্পষ্ট হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের লঞ্চ চালানোর অনুমোদন ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনো বিআইডব্লিওটিএর কাছ থেকে জানতে পারিনি তাদের আদৌ অনুমোদন ছিল কিনা। তবে ২১ বছরের সুকানি সালমান পূর্ণ বয়স্ক হলেও অভিজ্ঞতা তার কতটুকু ছিল সেটা খতিয়ে দেখা হবে।
ময়নাতদন্তের প্রাথমিক বক্তব্যে চিকিৎসক বলেছিলেন, দুরন্ত বিপ্লব হত্যার শিকার হয়েছেন। এ ব্যাপারে ডিসি মশিউর রহমান বলেন, এ ধরনের কনক্লুশন দেয়ার দায়িত্ব চিকিৎসকের নয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলতে পারেন না হত্যা নাকি আত্মহত্যা। এক ব্যক্তি ছাদ থেকে লাফিয়েও আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যেতে পারেন। দুরন্ত বিপ্লব নৌকা ডুবে পানিতে তলিয়ে যান, তিনি হয়তো সাঁতারে পটু ছিলেন না বা জানতেন না। তার মরদেহ উদ্ধার করা হয় পাঁচ দিন পর। এ সময়ের মধ্যে তিনি নিখোঁজ থেকে শুরু করে উদ্ধার পর্যন্ত যে কোনো পর্যায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারেন। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলতে পারেন। কিন্তু হুট করে বলতে পারেন না এটি হত্যা, অবহেলাজনিত মৃত্যু নাকি আত্মহত্যা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়