কবি বেগম সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আগের সংবাদ

বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের আচরণবিধি মনে করালেন মোমেন

পরের সংবাদ

দুদকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী : সফলতার পাশাপাশি আছে ব্যর্থতাও

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস এম মিজান : ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) যাত্রা শুরু হয়। দেখতে দেখতে দেড় যুগ পার করল রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধের একমাত্র প্রতিষ্ঠানটি। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির অনেক সফলতা অর্জনের পাশাপাশি কমিশন কর্তাদের ভেতর আছে কিছু ব্যর্থতা ও জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে না পারার আক্ষেপও। আজ সোমবার (২১ নভেম্বর) দুদকের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে সকাল ১০টায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা সভা ও বেলা আড়াইটার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে কমিশন। একই সঙ্গে সারাদেশের সমন্বিত বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ে নির্ধারিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে। এছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে আলোচনা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে শপথ নেয়ার কর্মসূচি রয়েছে।
১৯৫৭ সালে অ্যান্টি করাপশন অ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয় এবং এর আওতায় দুর্নীতি দমন ব্যুরো গঠিত হয়। ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর দুর্নীতি দমন ব্যুরো বিলুপ্ত হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) রূপান্তরিত হয়। কমিশন গঠিত হওয়ার পর প্রথম আড়াই বছর প্রতিষ্ঠানটি অনেকটা নিষ্ক্রিয় থাকলেও ওয়ান-ইলেভেনের (২০০৭-২০০৮ সালে) সরকারের সময় হঠাৎ করে আলোচনায় আসে সংস্থাটি। দুদক ছিল তখন আতঙ্কের আরেক নাম। দুদকের কর্মকাণ্ড তখন নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। যদিও তখনকার অনেক মামলা পরবর্তীতে দলীয় সরকারের আমলে ধোপে টেকেনি। দুদকের এ যাত্রায় এরই মধ্যে কমিশন গঠন ও পুনর্গঠিত হয়েছে ৬ বার। বিচারপতি সুলতান হোসেন খানের সমন্বয়ে গঠিত প্রথম কমিশনের যাত্রা। এরপর যথাক্রমে সাবেক সেনাপ্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরী, গোলাম রহমান, মো. বদিউজ্জামান ও ইকবাল মাহমুদের পর সবশেষ ২০২০ সালের ১০ মার্চ দায়িত্ব নেন বর্তমান দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর পেরিয়ে গেছে প্রায় ২০ মাস।
দুদকের সবশেষ পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়- ব্যুরো থেকে কমিশনে রূপান্তরের পর বড় কলেবরের আলোচিত বেশ কয়েকটি দুর্নীতির ঘটনায় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান-তদন্ত কিংবা শাস্তির আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছে কমিশন। অন্যদিকে আলোচিত কিছু প্রভাবশালীকে অনুসন্ধান-তদন্তের আওতায় আনতে না পারা কিংবা কিছু প্রভাবশালীকে অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিয়ে বিতর্কের মুখেও পড়তে হয়েছে সংস্থাটিকে। এই সময়ে অভিযোগের হার অনেক বাড়লেও জনপ্রত্যাশা সেভাবে পূরণ করতে পারেনি সংস্থাটি। যদিও সীমিত জনবল নিয়ে দুর্নীতির পাঁচ-ছয় হাজারের বেশি অনুসন্ধান ও মামলার চাপে রয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, কমিশন জনগণের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে, এটা জনগণই ভালো বলতে পারবে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। চেষ্টার কমতি নেই, চেষ্টা করে যাব। এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বলব, তোমরা দুর্নীতিবাজ পিতার সন্তান হয়ে থাকবে কিনা চিন্তা করে দেখ। নারীদের বলব, আপনারা দুর্নীতিবাজ স্বামীর অর্থে চলবেন কিনা চিন্তা করে দেখবেন। আর যারা চাকরি করছেন তাদের বলব, আপনারা দুর্নীতিবাজ নিয়োগদাতার চাকরি করবেন কিনা ভাবুন। এটা জনগণের প্রতি আমার আহ্বান। তিনি আরো বলেন, জনগণের উদ্দেশে একটাই মেসেজ (বার্তা), দুর্নীতি করবেন না। দুর্নীতি যারা করে তাদের বর্জন করবেন। তাদের ঘৃণা করুন। দুর্নীতির টাকা দিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে খাওয়াবেন না।
দুদকের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দুদকে ৩ হাজার ৫৭৪টি দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন ও এক হাজার ২৩১টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। পাঁচ বছরের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দুর্নীতি-অনিয়ম সংক্রান্ত ২০১৭ সালে ১৭ হাজার ৯৮৩টি অভিযোগ, ২০১৮ সালে ১৬ হাজার ৬০৬টি, ২০১৯ সালে ২১ হাজার ৩৭১টি, ২০২০ সালে ১৮ হাজার ৪৮৯টি, এবং ২০২১ সালে মোট ২১ হাজার ২২৩টি অভিযোগ দুদকে জমা পড়ে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে দুদকে জমা পড়া অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে। সার্বিক বিশ্লেষণে অভিযোগের সংখ্যা বাড়লেও মামলা সংখ্যা আগের অর্থবছরের তুলনায় বেশ কমেছে। অন্যদিকে, ২০১৭ সালে জমা পড়া অভিযোগ থেকে ৯৩৭টি অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ২০১৮ সালের অভিযোগ থেকে এক হাজার ২৬৫টি, ২০১৯ সালে এক হাজার ৭১০টি, ২০২০ সালে ৮৮২টি, এবং ২০২১ সালের এক হাজার ১৫০টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেয় সংস্থাটি। মামলার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দুদক মামলা করেছিল ২৭৩টি, পরের বছর ২১৬টি, ২০১৯ সালে ৩৬৩টি এবং ২০২০ সালে ২৮৫টি। অর্থাৎ মামলা তুলনামূলক কমেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়