কবি বেগম সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আগের সংবাদ

বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের আচরণবিধি মনে করালেন মোমেন

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামে হামলা চালিয়ে আসামি ছিনতাই : মাদক ব্যবসায় হিজড়াদের ব্যবহার অপরাধীচক্রের

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : মাদক ব্যবসায়ীরা তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) সদস্যদের ব্যবহার করে নির্বিঘেœ মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধ কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এদের ব্যবহার করে পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ করে আসামি ছিনতাইয়ের মত দুঃসাহসী কর্মও করছে। চট্টগ্রামের কালুরঘাটে গত শনিবার গভীর রাতে এমন ঘটনাই ঘটেছে। আসামি ছিনিয়ে নেয়ার সময় তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা একযোগে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালালে সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়লে নাজমা (তৃতীয় লিঙ্গ) নামে একজনের মৃত্যু হয়। শনিবার রাতে নগরীর কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।
এদিকে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করে দুই ইয়াবা বিক্রেতাকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। এতে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২১০ জনকে আসামি করা হয়। হামলার ঘটনায় তৃতীয় লিঙ্গের তিনজনসহ মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলা দুটি দায়ের হয়েছে। তবে ছিনিয়ে নেয়া দু’জনকে এখনো ধরতে পারেনি পুলিশ।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান জানান, শনিবার সন্ধ্যায় কালুরঘাট এলাকা থেকে হানিফ ও দেলোয়ার নামে দুই মাদক বিক্রেতাকে পাঁচ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও পুলিশ ফাঁড়িতে নেয়া হচ্ছিল। এ সময় কয়েকজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং মাদক বিক্রেতাদের সহযোগীরা মিলে কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায়। তারা হানিফ ও দেলোয়ারকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে তারা সড়ক অবরোধ করে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশের ওপর চালানো হামলায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হলে আত্মরক্ষার্থে পুলিশও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। এ ঘটনার পর পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ছিনিয়ে নেয়া মাদক বিক্রেতা এবং হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।
স্থানীয়রা জানান, হানিফের বোন তৃতীয় লিঙ্গের। তার নেতৃত্বে পুলিশ ফাঁড়িতে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় তৃতীয় লিঙ্গের বেশ কিছু সদস্য কালুরঘাট আরাকান সড়ক অবরোধ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অফিস শেষে বাড়ি ফেরার পথে নগরীর পার্শ্ববর্তী উপজেলা বোয়ালখালীর লোকজন সমস্যায় পড়ে। এ ঘটনায় কালুরঘাট সেতুতে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়, লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায় বলে স্থানীয়রা জানান।
চান্দগাঁও থানার ওসি মঈনুর রহমান বলেন, পুলিশের ওপর হামলা এবং মাদক আইনে আলাদাভাবে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মাদক আইনের মামলায় ছিনিয়ে নেয়া হানিফ ও দেলোয়ারকে আসামি করা হয়েছে। দুই মামলায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পর পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের তিনজনসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে যাদের ছিনিয়ে নিতে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে, তাদের এখনো ধরা যায়নি।
নগরীর চান্দগাঁও থানার মোহরার রেললাইন কেন্দ্রিক মাদক কারবারি হানিফকে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর ইয়াবাসহ র‌্যাব আটক করলেও তার এই বাহিনী (তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য) সড়ক অবরোধ করে তাকে ছিনিয়ে নেয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালীর মীর্জাগঞ্জের বাসিন্দা হানিফ মোহরার ৯ নম্বর ও ৮ নম্বর রেললাইন কেন্দ্রিক ইয়াবা-মদসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে। একাজে তার বিশাল বাহিনী (তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য) রয়েছে। হানিফের বাবা লোকমান, ভাই ইয়াছিন ও বোন নাজমা সবাই মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় কতিপয় নেতাদের ভাগবাটোয়ারা দিয়ে দেদারসে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিল হানিফ। তার নামে মাদক-খুনসহ একাধিক মামলা থাকার পরও পুলিশের একাধিক অভিযানেও সে ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশি অভিযানে তার সহযোগীরা আটক হলেও সে সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় রহস্যজনক কারণে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়