অমিত শাহের আশ্বাস : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত

আগের সংবাদ

বিশ্বকাপের বাঁশি বাজল কাতারে

পরের সংবাদ

ম্যারাডোনা ছাড়া প্রথম বিশ্বকাপ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাতারে ২০ নভেম্বর শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপের ২২তম আসর। ২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ২১তম আসরের গ্যালারিতে ম্যারাডোনার উপস্থিতি দ্য গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থে বাড়তি দ্যোতনা সৃষ্টি করেছিল। রাশিয়ার সেন্ট পিটাসবার্গে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ৮৫ মিনিট পর্যন্তও ১-১ গোলে সমতায় আর্জেন্টিনা। খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, জিততেই হবে। পরের মিনিটেই মার্কোস রোহোর গোল এবং ক্যামেরা চলে গেল গ্যালারির একটি বক্সে যেখানে চোখেমুখে আবেগ ঢেলে শিশুর মতো চিৎকার করছিলেন ম্যারাডোনা। ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আইয়ার্সের লানুসের পলিপলিনিকো আবিতা হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করা দিয়াগো ম্যারাডোনার নৈপুণ্যে ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপের শিরোপ জেতে আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬ সালে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ইউরোপের ১৪টি দেশ ছাড়াও আমেরিকা থেকে ৬টি এবং মরক্কো, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরাক ও আলজেরিয়া অংশ নেয়। ১৯৭৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মাত্র ১৬ বছর বয়সে আর্জেন্টিনার জার্সিতে অভিষেক হয় ম্যারাডোনার। ১৮ বছর বয়সে ফিফা বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপে (১৯৭৯) অংশগ্রহণ করেন। ফাইনালে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন করেন ম্যারাডোনা। সঙ্গে বাগিয়ে নেন যুব বিশ্বকাপের স্বতন্ত্র সবচেয়ে বড় পুরস্কার গোল্ডেন বল। যুব চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে ততদিনে নিজের নাম কুড়িয়েছেন ম্যারাডোনা। আশার আলো তাই জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ নিয়ে। ১৯৮২ সালের স্পেনের বিশ্বকাপে অভিষেক হয় তার। তখন তিনি স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সারও ফুটবলার। তাই স্পেনের দর্শকদের তুমুল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা। প্রথম ম্যাচে বেলজিয়ামের বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু করে আর্জেন্টিনা। ম্যাচে তেমন জ¦লে উঠতে পারেননি ম্যারাডোনা। পরে গ্রুপ পর্বের দুটি ম্যাচ জিতে দ্বিতীয় পর্বে ইতালি ও ব্রাজিলের কাছে হেরে প্রথম বিশ্বকাপের যাত্রা থেমে যায় তার। ব্রাজিলের বিপক্ষে লাল কার্ড পান আর্জেন্টিনার নাম্বার টেন। এই বিশ্বকাপ থেকে হাঙ্গেরির বিপক্ষে জোড়া গোলই তার অর্জন। সঙ্গে বিশ্বকাপের প্রথম অভিজ্ঞতা থাকলই। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপটা আর্জেন্টিনাকে উপহার দেন ম্যারাডোনা। নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ দিয়েই নিজের নামকে ছড়িয়ে দিয়েছেন পুরো বিশ্বজুড়ে। এই বিশ্বকাপ দিয়েই কোটি ভক্তের মনে ঝড় তুলেছেন তিনি। পুরো বিশ্বকাপেই আধিপত্য দেখিয়েছেন ম্যারাডোনা। নিজে পাঁচ গোল করেছেন সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও পাঁচটি গোল। এই বিশ্বকাপে তিনি প্রথম গোল করেন ইতালির বিপক্ষে, গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় খেলায়। আর কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জোড়া গোল করে নিজেকে কিংবদন্তি হিসেবে প্রমাণ করেন তিনি। এই ম্যাচে একই সঙ্গে ইতিহাসের সেরা গোলটি করেন ছয়জন ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে। আবার সবচেয়ে বিতর্কিত ‘হ্যান্ড অব গড’ নামে খ্যাত গোলটাও করেন এই ম্যাচেই। এমন একটা দলের সঙ্গে এই গোলটি যখন করেন তখন আর্জেন্টিনা এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যকার ফকল্যান্ড যুদ্ধের কারণে খেলা উত্তেজনায় ভরপুর ছিল।
সেমিফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষেও তিনি জোড়া গোল করে দলকে ফাইনালে তোলেন। ফাইনালে, প্রতিপক্ষ পশ্চিম জার্মানির ডাবল-মার্কিং ভেদ করে ম্যাচের জয়সূচক গোলটি আসে তার পা থেকে। অ্যাজটেকা স্টেডিয়ামের ১ লাখ ১৫ হাজার দর্শক আর টিভিতে কয়েক কোটির সামনে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ৩-২ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬’র বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ১৪টি গোলের ১০টিতেই ছিল ম্যারাডোনার অবদান। তার অধিনায়কত্বে আর্জেন্টিনা জিতেছে তাদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের মঞ্চে হাতের ছোঁয়ায় গোল করে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা গোলটিকে ডাকা হয় ‘হ্যান্ড অব গড’ বলে। কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যারাডোনার ‘বিতর্কিত’ গোলটি এখনও ক্ষোভে পোড়ায় ইংলিশদের। ইংল্যান্ডের গোলকিপার পিটার শিলটনকে ফাঁকি দিয়ে লাফিয়ে উঠে হাতের ছোঁয়ায় জালে বল জড়িয়েছিলেন ম্যারাডোনা। অবশ্য ইংলিশ খেলোয়াড়রা হ্যান্ড বলের জোরালো আবেদন করেছিলেন, কিন্তু রেফারি গোলের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। বিতর্কিত গোলটির পরেই ম্যারাডোনা ইংল্যান্ডের ছয় খেলোয়াড়কে কাটিয়ে করেছিলেন দেখার মতো এক গোল। যেটি ফুটবল বিশ্বে পরিচিত ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’ হিসেবে। ২০২০ সালের নভেম্বরে হার্ট অ্যাটাকের পর ৬০ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ফুটবল জাদুকর ম্যারাডোনা। ওই মাসের শুরুর দিকে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনায় অস্ত্রোপচার করে বাড়ি ফিরে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন তিনি।
তবে এর কিছুদিন পরই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৮৬’র বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। তার মৃত্যুর কয়েক দিন পর আর্জেন্টিনার প্রসিকিউটররা চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক ও নার্সদের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেন। ২০ জন বিশেষজ্ঞ নিয়ে একটি প্যানেল গঠন করে ম্যারাডোনার চিকিৎসা বিশ্লেষণ করা হয়। তাতে দেখা যায়, ম্যারাডোনার চিকিৎসা দেয়া দলটি চিকিৎসায় ঘাটতি এবং বেপরোয়া পদ্ধতিতে কাজ করেছে। তাদের দেয়া চিকিৎসা অনুপযুক্ত ছিল। আদালতের নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশেষজ্ঞ দলটি জানিয়েছে, ম্যারাডোনার মেডিকেল টিম যদি উপযুক্ত চিকিৎসা যথাসময়ে দিত, তাহলে দিয়েগো ম্যারাডোনার বেঁচে থাকার ভালো সম্ভাবনা থাকত। ম্যারাডোনা বেঁেচ থাকলে কাতারে আর্জেন্টিনার ম্যাচে গ্যালারিতে দেখা যেত তাকে। তাই বিশ্বকাপের ২২তম আসর ম্যারাডোনা ছাড়া প্রথম বিশ্বকাপ।
১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ জেতার পর ১৯৯০ সালে ব্যাক টু ব্যাক বিশ্বকাপ জেতার লক্ষ্যে ইতালি যায় আর্জেন্টিনা। অধিনায়ক ম্যারাডোনা আবারও। তবে এবার ম্যারাডোনার সেই জৌলুশে সামান্য ভাটা পড়ে গেছে গোড়ালির ইনজুরির কারণে। প্রথম পর্বে গ্রুপে কোনোমতো তৃতীয় স্থানে থেকেও দ্বিতীয় পর্বের টিকিট পায় আর্জেন্টিনা। ১৬ দলের পর্বে ব্রাজিলের বিপক্ষে ক্লদিও ক্যানিজিয়ার একমাত্র গোলে জয় পায় তারা, গোলটি ম্যারাডোনারই বানিয়ে দেয়া ছিল। কোয়ার্টার ফাইনালে পেনাল্টি শুটআউটে কোনোমতে জিতে সেমিতে আয়োজক দল ইতালির মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। এবারো পেনাল্টি শুটআউটে ইতালিকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছায় ম্যারাডোনার দল। খেলায় রুডি ফোলারকে ফাউল করার কারণে দেওয়া বিতর্কিত পেনাল্টিতে আনড্রেস ব্রেহমার করা একমাত্র গোলে জয় পায় পশ্চিম জার্মানি। এক বিতর্কিত ‘গোলের’ আক্ষেপ নিয়ে দেশে ফিরতে হয় ম্যারাডোনার।
১৯৯৪ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা দুইটি খেলায় মাঠে নামেন। এর মধ্যে গ্রিসের বিপক্ষে তিনি একটি গোলও করেন। ড্রাগ টেস্টে এফিড্রিন ডোপিংয়ের কারণে তাকে বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার করা হয়। নিজের আত্মজীবনীতে ম্যারাডোনা ওই টেস্ট সম্পর্কে বলেছিলেন, তার ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক তাকে এনার্জি ড্রিংক রিপ ফুয়েল দেয়ার কারণে তিনি ড্রাগ টেস্টে ধরা পড়েছেন। তার দাবি ছিল, পানীয়টির ইউএস সংস্করণ আর্জেন্টিনার সংস্করণের মতো নয়। যার মধ্যে ওই রাসায়নিক দ্রব্যটি ছিল এবং তার প্রশিক্ষক অনিচ্ছাকৃতভাবে তা ব্যবহার করেন।ফিফা তাকে ১৯৯৪ বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার করে এবং আর্জেন্টিনাও দ্বিতীয় পর্ব থেকেই বিদায় নেয়।
: তাইসির নূর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়