কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৬ সহকারী শিক্ষক পদোন্নতির অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। নবজাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষকদের দায়েরকৃত মামলা জটিলতায় পদোন্নতি নিয়ে এই উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগাদেশ অনুযায়ী অধিগ্রহণকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হলেও কুলাউড়ার ১৬ জন জাতীয়করণকৃত শিক্ষক নিজেদের সহকারী শিক্ষক হিসেবে মানতে নারাজ। দায়িত্ব পালন করছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের। পদবীর চেয়ার ছেড়ে দিলে মর্যাদা কমে যাবে! তাই প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়ার জন্য আদালতে মামলা দিয়ে প্রধান শিক্ষকের চেয়ার দখলে রেখেছেন কুলাউড়ার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ১৬ সহকারী (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) শিক্ষক।
কুলাউড়ার নবজাতীয়করণকৃত ১৬ শিক্ষক নিয়োগবিধির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের চেয়ার আঁকড়ে ধরে রাখতে কূটকৌশল হিসেবে আদালতে মামলা দিয়ে একই ব্যক্তি দ্বারা সহকারী এবং প্রধান শিক্ষকের দুটি পদই জব্দ করে রেখেছেন। মামলাকারী ওই শিক্ষকরা হলেন- যারা (প্রথম ধাপ, ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি) সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান উপজেলার তেলিবিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মো. সামছুল হক, বেরীগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সৈয়দ আব্বাছ উদ্দিন (বর্তমানে অবসরে), শিকরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোছা. মিনারা বেগম, রাজানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিলিপ কুমার শুক্ল্য বৈদ্য (বর্তমানে অবসরে), উত্তরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিশ্বজিৎ ঘোষ, আব্দুল হান্নান চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মো. বদরুল হোসেন, হাজী এসকে কনর মুকুন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মো. আব্দুর রাজ্জাক রফিকুজ্জামান (বর্তমানে অবসরে), কাইরচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান, হেলাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জাহানারা বেগম। দ্বিতীয় ধাপে (২০১৩ সালের ১ জুলাই) নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষকরা হলেন- শংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাছনা বেগম, আলহাজ আব্দুল বারী বাতির মিয়া জহুরুন্নেছা খাতুন সরঃ প্রাঃ বিদ্যালয়ের মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান ও নজরুল এনাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আমিনা বেগম। তৃতীয় ধাপে (২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি) নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষকরা হলেন- হলিছড়া চা বাগান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঞ্জীব ভর, লুয়াইউনি চা বাগান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সুবাস কৈরী, চকেরগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মো. ছালাম মিয়া ও জগতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মো. জাহাঙ্গীর আলম। ওই শিক্ষকের নিয়োগ আদেশে তাদেরকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হলেও তারা সরাসরি নিয়োগকৃত প্রধান শিক্ষক দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন। অধিদপ্তরের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী ৬৫ শতাংশ পদ পদোন্নতি পন্থায় নিয়োগযোগ্য এবং ৩৫ শতাংশ পদ সরাসরি পন্থায় নিয়োগযোগ্য। সে অনুযায়ী কুলাউড়া উপজেলায় পদোন্নতিযোগ্য পদ রয়েছে ১২৫টি। যার মধ্যে ৮৯টি পদে প্রধান শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন এবং ৩৬টি পদ পদোন্নতির জন্য শূন্য রয়েছে। অপরদিকে সরাসরি পন্থায় নিয়োগযোগ্য (৩৫ শতাংশ) পদ সংখ্যা ৬৮টি। তন্মধ্যে ৬৬টি পদে প্রধান শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন এবং ২টি পদ শূন্য। জাতীয়করণকৃত শিক্ষক গেজেটে ওই ১৬ জন শিক্ষক সহকারী শিক্ষক হিসেবে গেজেটপ্রাপ্ত হয়েছেন। মামলাকারী শিক্ষকগণের মধ্য থেকে ৩ জন শিক্ষক ইতোপূর্বে অবসরে চলে গেছেন। মামলাকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষক পদ প্রাপ্যতার জন্য মামলা করলেও বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী এ পদগুলো সরাসরি কোটার অন্তর্ভুক্ত। সরাসরি পদায়নের জন্য কুলাউড়া উপজেলায় ২টি পদ শূন্য থাকলেও তাদের মনগড়া মামলার কারণে কোটানুযায়ী ৩৬টি পদ এবং পদোন্নতিযোগ্য শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও তারা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সম্মিলিত গ্রেডেশন তালিকা এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, জাতীয়করণকৃত শিক্ষকরা তাদেরকে সরাসরি পন্থায় নিয়োগ হয়েছে বলে দাবি করেছেন। কিন্তু সরাসরি পন্থায় নিয়োগযোগ্য পদ শূন্য আছে মাত্র ২টি। তাছাড়া তাদের থেকে প্রায় ১০-১৫ বছরের অধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা নবজাতীয়করণকৃতদের মামলার কারণে পদোন্নতি থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন। পদোন্নতি বঞ্ছিতরা পদোন্নতি পন্থায় পদায়নযোগ্য ১৬টি পদসহ ৩৬টি পদ পদোন্নতির জন্য উন্মুক্ত করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনাসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন দাখিল করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা জানিয়েছেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইফতেখায়ের হোসেন ভুঞা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা থাকায় পদোন্নতিযোগ্য ১৬টি পদ পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সংরক্ষণ করে শূন্য পদের তালিকা দপ্তরে পাঠানো হবে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।