রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য : শিশুবক্তা রফিকুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য পেছাল

আগের সংবাদ

ঢাবি সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি : বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে স্বচ্ছতা থাকতে হবে

পরের সংবাদ

সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট : সমাবেশের একদিন আগেই যানবাহন বন্ধে জনভোগান্তি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফারুক আহমদ, সিলেট ব্যুরো : আজ শনিবার থেকে সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট হওয়ার তথ্য থাকলেও একদিন আগেই গতকাল শুক্রবার সিলেট থেকে দূরপাল্লার সব যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আর এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সিলেট বিভাগীয় শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ও সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির ডাকা পরিবহন ধর্মঘট শুরু হওয়ার কথা আজ শনিবার ভোর ৬টা থেকে। কিন্তু হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে ধর্মঘট থাকায় সিলেট ঢাকা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আর এ কারণেই সিলেট থেকে গতকাল দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। তবে জেলার ভেতরে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি পরিবহন নেতাদের।
গতকাল সকালে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে বাস-মিনিবাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে পুরো টার্মিনাল এলাকাজুড়ে। টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়ছে না। আন্তঃজেলা বাস চলাচল করলেও তা স্বাভাবিকের তুলনায় একেবারেই কম। এছাড়া দূরপাল্লার সব বাসের কাউন্টার বন্ধ রয়েছে। টার্মিনালে কথা হয় ঢাকাগামী যাত্রী তানভীর আহমেদের সঙ্গে। আগামীকাল রবিবারে তার ঢাকায় একটি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার কথা। ক্ষোভ প্রকাশ করে তানভীর বলেন, আমি রাজনীতি করি না, বিএনপি বা আওয়ামী লীগের সমাবেশে যাওয়ারও ইচ্ছে নেই। তবে আমাকে কেন ভুগতে হবে। রবিবার আমার পরীক্ষা, এখানে এসে শুনতে পাচ্ছি কোনো বাস যাবে না। এখন কিভাবে যাবো বা আদৌ যেতে পারবো কিনা- বলতে পারছি না। তিনি বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের কাছে আমরা জিম্মি, তাদের ইচ্ছে হলে ধর্মঘট ডাকবে, ইচ্ছে হলে চালাবে। মাঝখানে আমার মতো সাধারণ জনগণকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
ধর্মঘটের আগেই বাস বন্ধের ব্যাপারে সিলেট জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ বলেন, আমাদের ধর্মঘট শনিবার। কিন্তু মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে আজকে থেকে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় যেতে হলে এই দুই জেলা পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু দুই জায়গায়ই ধর্মঘট থাকায় দূরপাল্লার বাস আসা যাওয়া করতে পারছে না। তবু কিছু বাস চলছে। তিনি বলেন, পাঁচদফা দাবিতে আজ সিলেটে ভোর ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টার বাস ধর্মঘট ডাকে বাস মালিক সমিতি। ভিন্ন চারটি দাবিতে অন্য পরিবহনগুলোরও ধর্মঘট ডেকেছে সিলেট বিভাগীয় শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে গণসমাবেশ আয়োজনে বাধাবিপত্তি সৃষ্টি করতেই সরকার কৌশলে পরিবহনে ধর্মঘট ডাকিয়েছে। আজ সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে। এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের নির্দেশেই এই পরিবহন ধর্মঘট। সমাবেশে যাতে সাধারণ মানুষ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা যোগ দিতে না পারে সেজন্য সরকারই কৌশলে এই ধর্মঘট ডাকিয়েছে। তবে এতে কোনো লাভ হবে না। আমাদের বেশির ভাগ নেতাকর্মী ইতোমধ্যেই সমাবেশ সফল করতে সিলেট পৌঁছে গেছেন। আশা করছি, শনিবারের গণসমাবেশে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষের জমায়েত হবে।
এদিকে, আজকের সমাবেশকে ঘিরে ধর্মঘটের আশঙ্কা থাকায় বিভাগের বাকি তিন জেলা ও দূরবর্তী উপজেলাগুলো থেকে শুক্রবারেই চলে এসেছেন কয়েক হাজার নেতাকর্মী। নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি অন্তত ২০টি কমিউিনিটি সেন্টার ও সমাবেশস্থলে টানানো শামিয়ানার নিচে অবস্থান নিয়েছেন নেতাকর্মীরা। গত বুধবার রাত থেকে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠেই চলছে রান্নাবান্না। বিভিন্ন নেতাদের টানানো তাঁবুতে কাটাচ্ছেন রাত, চলছে গল্প-গুজব আর গান-বাজনা। মাঝে মাঝে নেতাকর্মীদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠছে সমাবেশস্থল।
গতকাল সকালে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের একপাশে তৈরি করা হয়েছে প্রায় ৭০ ফুট দীর্ঘ মঞ্চ। মঞ্চের তিন পাশে নির্মাণ করা হয়েছে বিভাগের বিভিন্ন এলাকার নেতাদের উদ্যোগে ক্যাম্প। ক্যাম্পে ক্যাম্পে চলছে রান্না ও খাবারের আয়োজন। ক্যাম্পগুলোতে মজুত করে রাখা হয়েছে চালের বস্তা, তেল ও রান্নার সামগ্রী। কয়েকজন নারীকে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ কাটতে দেখা যায়। প্রতিটি ক্যাম্পেই বড় বড় পাতিলে হচ্ছে রান্নাবান্না। জুম্মার নামাজের পর প্রতিটি ক্যাম্পে খাবার পরিবেশন করা হয়। প্রত্যেক ক্যাম্পেই নিজেদের মানুষ ছাড়া অন্য নেতাকর্মীদেরও খাবার দেয়া হয়। এক কথায়, সমাবেশ ঘিরে উজ্জ্বীবিত সিলেটের বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়