রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য : শিশুবক্তা রফিকুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য পেছাল

আগের সংবাদ

ঢাবি সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি : বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে স্বচ্ছতা থাকতে হবে

পরের সংবাদ

সরকারি হাসপাতালে রোগীর খাবার : বরাদ্দ কম, মান বাড়ে না

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : ল²ীপুর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি তরিকুল মিয়া (৫৮)। বেডে বসে থাকা তরিকুলকে ভাত মেখে খাইয়ে দিচ্ছেন স্ত্রী আলেয়া বেগম। কয়েক লোকমা খাওয়ার পরই তরিকুল মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। জানালেন আর খাবেন না। আলেয়া বেগমের জোরাজুরিতেও আর ভাত মুখে তুললেন না তরিকুল। অভিযোগের সুরে তরিকুল বলেন, তরকারির ঝোল আর ডাল দেখলে মনে হয় হলুদ মেশানো পানি। মাছ বা মাংস যাই দেয়, মনে হয় পানিতে সেদ্ধ করা। চালেও একটা গন্ধ। একেই তো অসুস্থ। এসব খাবার আসলে খাওয়া যায় না।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন বিভাগে ভর্তি খালেদা বেগমেরও (৩৮) একই অভিযোগ। তিনি বলেন, হাসপাতালের তরকারি দেখলেই খাবার ইচ্ছা নষ্ট হয়ে যায়। সকালের নাস্তায় দেয়া হয় পাউরুটি, চিনি, সেদ্ধ ডিম আর একটা কলা। কলার অবস্থাও বেশি ভালো থাকে না। খাওয়ার উপযোগী থাকে না।
সরকারি হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা রোগীর খাবারের (পথ্য) স্বাদ, পরিমাণ এবং পুষ্টিগত মান নিয়ে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনদের এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাদের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে যে পরিমাণ বা মানের খাবার দেয়া হয় তার ওপর নির্ভর করা যায় না। তাই বাধ্য হয়েই বাড়ি থেকে অথবা কিনে খাবার আনতে হয়।
আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারেও ২০১৩ সালের পর সরকারি হাসপাতালে রোগীদের পথ্য বাবদ বরাদ্দ বাড়েনি। বেডের বাইরে যেসব রোগী থাকে তাদের জন্যও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে গত কয়েক বছর ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও এই বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগীদের জন্য আমিষ, ভিটামিন, ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার যে পরিমাণ ও মাত্রায় চিকিৎসকেরা সুপারিশ করেন- এর সামান্যও দেশের অধিকাংশ হাসপাতালের রোগীরা পাচ্ছেন না। রোগ অনুযায়ী খাবার না দিলে রোগীদের জটিলতা বাড়ে। এক্ষেত্রে হাসপাতালে আসা দরিদ্র রোগী ও

দূর থেকে আসা রোগীরাই বেশি সমস্যায় পড়েন। কেননা, তাদের হাসপাতালের খাবারের ওপরই নির্ভর করতে হয়। খাবারের মান বাড়াতে তাই বিশেষজ্ঞরা বাজেট বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন।
জানা যায়, ২০০৯ সালে রোগীপ্রতি বরাদ্দ ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৭৫ টাকা। ২০১৩ সালে এই বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয় ১২৫ টাকা। তবে সেখান থেকে আবার ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কেটে থাকে মাত্র ১০৬ টাকা। এই টাকায় দেয়া হয় রোগীর ৩ বেলার খাবার। সরকার প্রতি রোগীর জন্য অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি রোগীর খাবারের একটি সর্বজনীন মেন্যুও ঠিক করে দিয়েছিল। ২০১৩ সালের নিয়ম অনুযায়ী সাধারণত সকালের নাশতার জন্য গড়ে ১৫০ গ্রাম পাউরুটি, চার ইঞ্চির একটি কলা, ২০ গ্রাম চিনি ও একটি সেদ্ধ ডিম; দুপুর ও রাতের খাবারে প্রতি বেলায় এক কেজির রুই বা কাতল মাছের ১৪০ গ্রামের টুকরো অথবা ৩৪০ গ্রাম মুরগির মাংস, একই ওজনের ভাত, ৪০ গ্রাম মসুর ডাল, সবজি (পেঁপে, লাউ ও আলু) ৪শ গ্রাম দেয়ার কথা।
তবে রোগীর খাবার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। খাবারের জন্য প্রতিটি হাসপাতালের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা রয়েছে। দরপত্রের মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিদিনের খাবার সংগ্রহ করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জানানো প্রতিদিনের রোগীর সংখ্যার ভিত্তিতে সরবরাহকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান খাবারের আয়োজন করে।
পুষ্টিবিদ ও নিউট্রিশন এন্ড অটিজম রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক তামান্না শারমিন বলেন, আমাদের দেশে সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য ১ হাজার ৮শ থেকে ২ হাজার ক্যালোরির খাবার প্রয়োজন। তবে রোগীভেদে তা ভিন্ন হতে পারে। রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী তার ডায়েটও আলাদা হবে। তবে বর্তমানে ১০৬ টাকায় প্রয়োজনীয় চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা কঠিন। খাবারের বরাদ্দ অবশ্যই বাড়াতে হবে।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. নাজমুল হক জানান, সীমিত বরাদ্দ দিয়ে রোগভেদে খাবার দেয়াটা কঠিন কাজ। এজন্য বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। বরাদ্দ বাড়লে খাবারের মান আরো বাড়ানো যাবে।
একই সুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমানের কথায়ও। তিনি জানান, স্থানীয় স্কেল অনুযায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডায়েটের তালিকা করে থাকে। সে অনুযায়ী ঠিকাদার খাবার দেয়। বরাদ্দের সর্বোচ্চ খাবার নিতে তারা চেষ্টা করেন। তবে এ বরাদ্দে ঠিকাদারকে আর বেশি চাপও দেয়া সম্ভব নয়।
জাতীয় স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, রোগীদের জন্য সঠিক ডায়েট এবং রোগীভেদে খাবারের পরিমাণ ও ধরন ভিন্ন হয়। কিন্তু সীমিত বাজেটের কারণে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে তা করা যাচ্ছে না। ৫০ বছর আগেও হাসপাতালে ৭ রকমের ডায়েট দেয়া হতো। সময়ের পরিক্রমায় তা বিলুপ্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালে আসা দরিদ্র এবং দূরবর্তী এলাকা থেকে আগতদের সমস্যা বেশি হয়। কারণ তারা হাসপাতালের খাবারের ওপরই নির্ভর করে। দরিদ্র অনেক রোগীর খাবার কেনার সামর্থ্যও থাকে না। তবে বাজেট বাড়ানো উচিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়