রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য : শিশুবক্তা রফিকুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য পেছাল

আগের সংবাদ

ঢাবি সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি : বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে স্বচ্ছতা থাকতে হবে

পরের সংবাদ

শীতকালীন আগাম কপি চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আতাউর রহমান জসি, ঝিকরগাছা (যশোর) থেকে : শীতকালীন সবজির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফুলকপি ও বাঁধাকপি। অধিক লাভের আশায় যশোরের ঝিকরগাছায় চাষিরা এই সবজি আগাম চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। পুরোপুরি শীত আসার আগেই একই জমিতে দুইবার কপি চাষ করে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন তারা। এ বছর বিঘাপ্রতি কপি বিক্রি হয়েছে গড়ে ১ লাখ টাকা। মাত্র ৩ মাস সময়ের এই চাষে লাভ হচ্ছে বিঘাপ্রতি অন্তত ৬০-৭০ হাজার টাকা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, ঝিকরগাছায় ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এর মধ্যে অন্তত ২৫০ হেক্টর জমিতে শুধু ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের বারবাকপুর, বোধখানা ও মধুখালী গ্রামে। এসব মাঠে অন্তত ৬০ হেক্টর জমিতে এ বছর ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে ফুলকপি ও বাঁধাকপি। অধিকাংশ কৃষক ব্যস্ত কপি কাটার কাজে। কেওবা দ্বিতীয়বার রোপণ করা নতুন গাছের পরিচর্যা করছেন। মাঠের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপারীদের ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে, চলছে কপি লোড করার কাজ। মাঠ থেকেই ব্যাপারীদের কাছে ন্যায্যমূল্যে কপি বিক্রি করতে পারায় খুশি কৃষক। জানা যায়, মাঠ থেকেই ব্যাপারী বাঁধাকপি কিনছেন প্রতি পিস ১৫-২০ টাকা, ফুলকপি কিনছেন মানভেদে ৩৫-৪৫ টাকা কেজি। প্রতি বিঘা জমিতে বাঁধাকপি রোপণ করা হয় সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার, আর ফুলকপি রোপণ করা হয় ৬ হাজার।
উপজেলার বোধখানা গ্রামের কৃষক ও ইউপি সদস্য হুমায়ন কবির মিলন এ বছর ২ বিঘা জমিতে ফুলকপি ও ৪ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিবিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। দুই লাখ টাকায় দুই বিঘা জমির ফুলকপি বিক্রি করেছি। সেই জমিতে আবার কপি লাগিয়েছি। এখন পাতাকপি (বাঁধাকপি) বিক্রি করা শুরু করেছি। বিঘাপ্রতি লাখ টাকার নিচে বিক্রি হবে না।
আরেক কৃষক ইসলাম আলী, তিনি আড়াই বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছিলেন। তার কপি আরো কিছুদিন আগে বিক্রি হয়ে যাওয়ায় দাম বেশ ভালো পেয়েছেন। বিঘাপ্রতি তার বিক্রি হয়েছে দেড় লাখ টাকা। বোধখানা গ্রামের আলী হোসেন ৮ বিঘা জমিতে কপি চাষ করেছেন। তিনি জানান, দুই বিঘা বাঁধাকপি ক্ষেত থেকেই ব্যাপারীর কাছে বিক্রি করেছেন ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। আর দুই বিঘা ফুলকপি বিক্রি করেছেন ১ লাখ ২০ হাজার। এখনো ৪ বিঘা জমির কপি বিক্রি করতে বাকি আছে। কপির যে দাম তাতে সেগুলো আরো ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করা যাবে।
বারবাকপুর গ্রামের কৃষক সোহারাব হোসেন ১৬ বিঘা, মহির হোসেন ৮ বিঘা জমিতে কপি চাষ করেছেন। তারা বলেন, এখনো বিক্রির হিসাব করিনি তবে বিঘাপ্রতি এক লাখ টাকার নিচে কপি বিক্রি হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় সুবিধা এখন ক্ষেত ধরেই ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করে দেয়া যায়। বিক্রিতে বাড়তি ঝামেলা নেই।
এ ব্যাপারে বোধখানা-বারবারকপুর ব্লকের বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক (রৌপ্য) প্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আইয়ুব হোসেন জানান, এ অঞ্চলের কৃষকরা রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করছে। পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় গদখালীকে আইপিএম মডেল ইউনিয়ন ঘোষণা করা হয়েছে। এখানকার কৃষক সবসময় আগাম সবজি চাষ করেন।
এ বছর অনুকূল আবহাওয়া, সময়মতো বীজ বপন ও সুষম সার ব্যবহারের কারণে কপির ভালো ফলন হয়েছে। দামও ভালো থাকায় তারা লাভবান হচ্ছেন। তিনি আরো জানান, আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত চাষের জন্য সবসময় কৃষককে কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয় এবং সরকারের প্রণোদনার সার ও বীজ দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ ভোরের কাগজকে জানান, উপজেলায় ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এর মধ্যে অন্তত ২৫০ হেক্টর জমিতে শুধু ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ হয়। এ চাষ গৃষ্ম ও শীত উভয় সময়েই হচ্ছে। তবে এ অঞ্চলের কৃষক আগাম কপি চাষ বেশি করেন।
তিনি বলেন, স্বল্প সময়ের চাষ হওয়ায় অধিকাংশ জমিতেই কৃষক দুইবার কপি চাষ করেন। এ অঞ্চলের জমি অধিক উর্বরতার সুবাদে শেষবার কপির সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে পটোল ও পেঁয়াজের চাষ হয়। ফলে কৃষক অনেক লাভবান হয়। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের সবধরনের সহায়তা দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়