রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য : শিশুবক্তা রফিকুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য পেছাল

আগের সংবাদ

ঢাবি সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি : বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে স্বচ্ছতা থাকতে হবে

পরের সংবাদ

বিশ্বকাপ উন্মাদনায় মেতেছে বিশ্ব

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কাতার বিশ্বকাপ মাঠে গড়াচ্ছে আগামীকাল রবিবার। এ মুহূর্তে ফুটবল জ¦রে কাঁপছে পুরো বিশ্ব। ইতোমধ্যে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সমর্থকরা দলে দলে কাতারে আসছে। প্রিয় দলকে সমর্থন জানাতে দোহার বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করছে তারা। বিশ্বকাপ উন্মাদনায় বদলে গেছে কাতারের চেহারা।
শুধু কাতার নয় জাতিসংঘের সদস্য ভুক্ত ১৯৩টি দেশে চলছে বিশ্বকাপ উদ্মাদনা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেড়ে গিয়েছে টেলিভিশনের বিক্রি। বিশ্বকাপ উপলক্ষে বেশকিছু বিষয়ে নিয়মকানুন কিছুটা শিথিল করেছিল কাতার। অনুমোদন পেয়েছিল স্টেডিয়ামে বিয়ার বিক্রির বিষয়টিও। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে বেঁকে বসেছে দেশটির রাজপরিবার। স্টেডিয়ামে বিয়ার বিক্রি বন্ধের জন্য ফিফাকে চাপ দিচ্ছে দেশটির সরকার প্রধান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশনের (ফিফা) সঙ্গে কয়েক মাস ধরে চলা বিতর্কের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়োজক দেশটি। ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে এবারই প্রথম এশিয়ার কোনো মুসলিম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ আয়োজন করছে কাতার। মুসলিম দেশ হওয়ায় দেশটিতে রয়েছে ধর্মীয় নানা বিধিনিষেধ। বিদেশি পর্যটকদের জন্য দেশটিতে লাইসেন্স প্রাপ্ত কিছু রেস্তোরাঁয় অ্যালকোহল সেবনের অনুমতি থাকলেও মুসলিমদের ক্ষেত্রে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা।
তবে কাতারের ডেলিভারি ও লিগ্যাসি সংক্রান্ত সুপ্রিম কমিটি প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল, স্টেডিয়াম এবং অন্য আতিথেয়তা ভেন্যুগুলোর বাইরে নির্ধারিত ফ্যান জোনে অ্যালকোহল পাওয়া যাবে। এছাড়া অন্য কোথাও মিলবে না। গত সেপ্টেম্বরে কাতার বিশ্বকাপের আয়োজকরা স্টেডিয়াম ও ফ্যান জোনে ফুটবল অনুরাগীদের জন্য অ্যালকোহলসহ বিয়ার পরিবেশনের নীতি চূড়ান্ত করে।
কাতারি রাজপরিবারের এমন সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে ফিফা। কারণ স্টেডিয়ামে বিয়ার বিক্রির অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠান বুঁদউইজার এবারের বিশ্বকাপে বেশ বড়সড় স্পন্সর। এখন শেষ মুহূর্তের এই ঘটনায় যদি তারা বিশ্বকাপে অর্থ বিনিয়োগ করতে না চায়, তাহলে বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে ফিফাকে।
সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে বিশ্বব্যাপী ফুটবলপ্রেমীদের উন্মাদনা। এতে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশিরাও। বিশ্বকাপ ফুটবলের

মূলপর্বে খেলা বাংলাদেশের জন্য কল্পনাতীত। তাই বলে উন্মাদনা-উৎসবের কোনো ঘাটতি থাকে না। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশের পতাকা আর জার্সিতে নিজেদের রাঙিয়ে তোলেন এ দেশের সমর্থকরা। বাংলাদেশে ফুটবল ভক্তদের একটা বিরাট অংশ বিশ্বকাপের সময় হয় ব্রাজিল নয় আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করে। তারই প্রতিফলন দেখা যায় বাড়ি বাড়ি উড়ানো পতাকা বা ভক্তদের গায়ে পরা জার্সিতে। ঢাকার ফুটপাতে জমে উঠেছে ফুটবল পণ্যের বাজার, সেখানে প্রচুর কেনাবেচা চলছে নানা দলের জার্সির। রাজধানীর গুলিস্তানের কয়েকশ দোকানে চলে কেনাবেচার ধুম। সারাদেশের খুচরা দোকানিরা যেমন আসেন পাইকারি দরে মাল কিনতে, তেমনি আসেন খুচরা ক্রেতারাও।
জার্সির পাশাপাশি জমে উঠে পতাকা তৈরির ব্যবসাও। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার পতাকার পাশাপাশি চলে জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স, পর্তুগাল ও ইতালির মতো দলগুলোর পতাকা তৈরির কাজ। ছোটবড় নানা সাইজের পতাকার খদ্দের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। অনেকে আবার অর্ডার দিয়ে বিশাল সাইজের পতাকাও বানান। ছোট পতাকার যেমন চাহিদা আছে, তেমনি আছে বড় সাইজের পতাকাও। রাস্তার ধারে সড়কগুলোর ওপর বিভিন্ন স্টলে মহাসমারোহে বিক্রি হয় রংবেরংয়ের নানা দলের পতাকা।
কখনো বিশ্বকাপ খেলেনি, অদূর ভবিষ্যতে খেলার সম্ভাবনাও নেই। এমনকি বাছাইপর্বে অংশ নেয়াও কেবল ‘অংশগ্রহণই বড় কথা’ এরকম সেøাগান। অথচ বাংলাদেশে বিশ্বকাপ নিয়ে মাতামাতি অংশ নেয়া অনেক দেশ থেকেও যেন বেশি। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশিদের উন্মাদনা নজর এড়ায়নি ফিফার। নিজেদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বিশ্বকাপ চলাকালে বাংলাদেশিদের ফুটবল নিয়ে উন্মাদনার কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছিল ফিফা। সঙ্গে ক্যাপশনে লিখেছে- ‘বাংলাদেশ কখনো বিশ্বকাপে অংশ নেয়নি ঠিকই, কিন্তু তারাও বিশ্বকাপ জ¦রে ঠিকই আক্রান্ত হয়েছে। ফুটবলের সবচেয়ে প্যাশনেট ভক্তদের একটা অংশের বাস এই বাংলাদেশে।’
বিশ্বকাপ আসবে আর নীল জার্সির দলটি থাকবে না এমন কিছু একটা সময় কল্পনাই করা যেত না। যেমন বিশ্বকাপ কল্পনা করা যায় না ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা কিংবা জার্মানিকে ছাড়া। কিন্তু ২০১৮ সালের পর এবারও ইতালিবিহীন বিশ্বকাপ দেখছে ফুটবল বিশ্ব।
এবারের বিশ্বকাপে ইতালির না থাকাটাকে কি বলা যায় অঘটন? যে দলটি মাত্র ১ বছর আগেই চরম দাপট দেখিয়ে ইউরোপ সেরা হলো, তারাই কিনা বিশ্বকাপের বাছাইপর্বই পেরোতে পারল না! খেলার মাঠে এমনটি হতেই পারে। কিন্তু উত্তর মেসিডোনিয়ার কাছে হেরে বিশ্বকাপে না যেতে পারা, ইতালিয়ানদের জন্য মেনে নেয়া কঠিনই বটে। ১১ হাজার ৫৮১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের কাতার প্রায় ২৯ লক্ষ জনসংখ্যার দেশ হলেও এখানে অভিবাসী কিন্তু কম নয়। যার বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। ২৯ দিনব্যাপী ফুটবল মহোৎসবের জন্য নানান স্তরের সমর্থকদের আমন্ত্রণ জানানোর অপেক্ষায় ৮টি স্টেডিয়াম। অবশ্য যারা নিরলস পরিশ্রম করে কাতারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে বড় ধরনের ক্ষোভও রয়েছে। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ৮টি স্টেডিয়াম নির্মাণের পেছনে যাদের অবদান অনেক। সেই শ্রমিকদেরই কিনা দোহা থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে! তাই কাতারিদের কাছে এই বিশ্বকাপ নিয়ে প্রবল উন্মাদনা থাকলেও অনেকের কাছে তা কিছুটা বিষাদের। বিশ্বকাপ উপলক্ষে প্রিয় দলকে সমর্থন জানাতে অনেক সমর্থ কাতারে পাড়ি জমিয়েছেন। তাদের জন্য মদ, বিয়ার ও সমকামীতা নিষিদ্ধ করেছে কাতার কর্তৃপক্ষ।
কাতার বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার পর থেকেই পশ্চিমা বিশ্ব কোনোভাবে মেনেই নিতে পারেনি। এমনকি যারা বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে তারাও নাক সিটকাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপের আয়োজন নিয়ে। অথচ গোটা দুনিয়াকে চমকে দিয়ে দারুণ এক আয়োজন উপহার দিচ্ছে কাতার। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণকারী ৩২ দেশকে সতর্ক করেছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। বিশ্বকাপে এসে রাজনীতি নয়, বরং খেলার দিকেই বেশি মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ফিফা সভাপতি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়