রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য : শিশুবক্তা রফিকুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য পেছাল

আগের সংবাদ

ঢাবি সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি : বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে স্বচ্ছতা থাকতে হবে

পরের সংবাদ

আমাদের একজন সঞ্জীব’দা আছেন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কণ্ঠে দ্রোহ নিয়ে, মনে নিয়ে প্রেম-মায়া, সঞ্জীব চৌধুরী হেঁটে গেছেন বিরান পথে। বিষণ্নতার অনন্ত সমুদ্র শেষে যে পথ মিশেছে অপার সম্ভাবনায়। গানে-সুরে আজীবন সেই সম্ভাবনা ছোঁয়ার স্বপ্নের কথা শুনিয়ে গেলেন সঞ্জীব। যিনি ভিড়ের ভেতরেও স্বতন্ত্র, দলের ভেতরেও দলছুট। সঞ্জীবের প্রয়াণের দিনে তাকে চিত্রনাট্যে ধরলেন খায়রুল বাসার নির্ঝর

ফিক্সড শট… সঞ্জীবের চোখমুখ নির্বিকার। গালে হাত। আঙুলের ফাঁকে আয়েশি ভঙ্গিতে ধরা রুপালি কলম। মুখে খানিক অস্পষ্ট বলিরেখা, রাত জাগার ক্লান্তি। বাইরে গভীর রাত। দুটি ট্রাক দাপিয়ে চলে গেল। তাতে শীতে জবুথবু ঘরহারা লোকটা, যে শুয়েছিল ল্যাম্পপোস্টের নিচে, ঘুম ভেঙে বসে থাকে। ঘুম নেই সঞ্জীবের চোখেও। কলম বলছে, কলম লিখছে ‘গল্প ভাঙে তবু গল্প জমে, এই চোখে রাত্রি নিঝুম।’ সঞ্জীব ভাবছেন, এই রাত শেষে আসবে যে সকাল, তার আলোয় মানুষের মনের অন্ধকার ঘুচে যাবে হয়তো। হয়তো পৃথিবীতে আর ঝরবে না রক্ত। সাম্য এনে দেবে শান্তি। সঞ্জীব উঠে দাঁড়ান। পায়চারি করেন কিছুক্ষণ। দাঁড়ান জানালার পাশে। বাইরে, ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট ইমেজে ডাস্টবিনের খাবার ভাগ করে খাচ্ছে একটি মানুষ ও দুটি কুকুর।

ফ্ল্যাশব্যাক… উত্তাল প্রাঙ্গণ। বহিরঙ্গে চুপচাপ থেকেও অন্তরঙ্গে কী পরিমাণ উত্তাল-উত্তেজিত হয়ে পড়ে সমবেত, তার এক অদ্ভুত উদাহরণ সামনে নিয়ে গাইছেন সঞ্জীব, ‘সবুজ পাতা, একটি গাছ, স্মৃতির বৃক্ষ, পাতারা জানে নিজের চাষবাস’ অথবা ‘পাগল কষ্ট চেপে চলে যাবে ফিরেও আসবে না।’ এ নীরব হাহাকার সংক্রমিত হয় উপস্থিত তারুণ্যে। সঞ্জীব চৌধুরী, এক নাগরিক বোহেমিয়ান, স্বপ্ন গুঁজে দেন অজস্র চোখে। তারপর কোলাহল পিছে ফেলে আরো আরো স্বপ্নের খোঁজে তিনি হেঁটে যেতে থাকেন বিরান পথে। লং শট।

এরপর ফার্স্ট কাটে ইমেজ ক্রমেই পেছনে সরে যেতে থাকে। স্পটলাইটে ধরা পড়ে অশোক কর্মকারের ইন্সটলেশন আর্ট, ‘কালরাত্রি’। লাইট, সাউন্ড, পেইন্টিং, স্ট্যাচু সহযোগে শিল্পকলা একাডেমিতে ‘কালরাত্রি’ আয়োজনে প্রথমবার পাশাপাশি দাঁড়ান সঞ্জীব ও বাপ্পা। ২৮ মিনিটের মিউজিক তৈরি করেছিলেন অনেক খেটেখুটে, তারা একসঙ্গে। ‘কালরাত্রি’ শেষে পরিকল্পনা আরো ঘন হয়- যদি কিছু করা যায় একসঙ্গে মিলেমিশে। ১৯৯৬ সালের নভেম্বর তখন। অসংখ্য এলোমেলো নামকরণের প্রক্রিয়ায় সংযোজন-বিয়োজন শেষে স্থির হয় নাম হবে ‘দলছুট’। একটি ব্যান্ড, একটি স্বপ্ন, একটি স্বাধীনতা। যারা ভিড়ের ভেতরেও স্বতন্ত্র, দলের ভেতরেও দলছুট। পরের বছর আসে অ্যালবাম ‘আহ্্’। ইতিহাসের প্রথম পৃষ্ঠাটি উল্টানো হলো ‘আহ্’ দিয়ে। তৈরি হতে থাকল এরপর একেকটি অধ্যায়- ‘হৃদয়পুর’, ‘আকাশচুরি’, ‘জোসনাবিহার’।

সময় তবুও অস্থির থাকে। অরাজকতার রাক্ষস গিলে খায় সৌন্দর্য, জীবনযাপন। সঞ্জীবের বুকে জমা হাহাকার-প্রতিবাদ উগরে আসে লিরিক হয়ে- ‘এদিকে তহবিল জমে, ওইদিকে চোখের পানি।’ তৈরি হয় ‘রাশপ্রিন্ট’। মহাকালের খেরোখাতা থেকে উঠে আসে স্বপ্ন-সম্ভাবনার বার্তা। স্বপ্ন খেলা করে সঞ্জীবের ঢিলেঢালা শার্টে, অবিন্যস্ত চুলে, হেয়ালি হাসিতে। পুরুষ্ঠ গোঁফের আড়াল থেকে ঠিকরে বের হয় মহাকালের স্টেটমেন্ট। প্রেম থেকে দ্রোহ, বিচ্ছিন্নতা থেকে জমায়েত। তার গান তাই হয়ে ওঠে সময়ের আশ্চর্য দলিল।

ব্যাকওয়ার্ডে দৃশ্য সরে যায় দ্রুত। সাংবাদিকতার দিনরাত, নব্বইয়ের উত্তাল আন্দোলন, টিএসসির লাল দেয়াল, প্ল্যাকার্ড, গণিত ক্লাস ছেড়ে গণযোগাযোগ; পেরিয়ে হবিগঞ্জের মাকালকান্দি গ্রামের অভিজাত বাড়িটায় গিয়ে ফ্রেম ফিক্সড হয়। ওখানে ২৫ ডিসেম্বর ১৯৬৪ সালে, গোপাল চৌধুরী ও প্রভাষিণী চৌধুরী দম্পতির সপ্তম সন্তান হিসেবে জন্ম নিচ্ছে যে ছেলেটা, তার নাম হবে সঞ্জীব চৌধুরী। ক্লাস এইটের পর তিনি শহর ঢাকায় পা রাখবেন এবং ১৯৭৮ সালের মাধ্যমিকে দখল করবেন জাতীয় মেধা তালিকার ১২তম স্থান। বাংলা গানের শীর্ষ মুকুট জ¦লে উঠবে তার মাথায়। ওই মুকুটের ছবিকে আঁকড়ে ধরে এ মানচিত্র বলে চলবে ‘আমাদের একজন সঞ্জীব’দা আছেন।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়