মাসুদ বিন মোমেন আরো দুই বছর পররাষ্ট্র সচিব

আগের সংবাদ

বিশ্বকাপ উন্মাদনায় মেতেছে বিশ্ব

পরের সংবাদ

বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ : সিলেটজুড়ে পরিবহন ধর্মঘট

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:১৮ পূর্বাহ্ণ

ফারুক আহমদ ও জাহিদুল ইসলাম, সিলেট ব্যুরো : অবশেষে বিএনপি নেতাকর্মীদের আশঙ্কাই সত্যি হলো। সমাবেশের দুদিন আগে থেকেই পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা এসেছে বিভাগের ৪ জেলা থেকেই। তবে এতে সমাবেশে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।
চাল-ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশের সব বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর ও বরিশালে সমাবেশ করেছে দলটি। আগামীকাল শনিবার সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ।
প্রথম থেকেই সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট হবে না বলে মত দিচ্ছিলেন পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্বশীলরা। তবে বুধবার রাতে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির নেতারা। সমাবেশের দিন সকাল-সন্ধ্যা বাস ধর্মঘট ডাকেন তারা। সিলেটে রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা, বৈধ অটোরিকশায় গ্রিল স্থাপনসহ কয়েকটি দাবিতে এ ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয় বলে জানান জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ।
তবে মালিক সমিতির এ ধর্মঘটের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার যোগ দিয়েছে শ্রমিক ঐক্যপরিষদ। সিলেটের সব পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি প্রদান, সিএনজিচালিত অটোরিকশার নতুন রেজিস্ট্রেশন প্রদান, সিলেটের লামাকাজী ও শ্যাওলা সেতুতে টোল আদায় বন্ধ, হাইওয়েতে টমটম ও নসিমন চলাচল বন্ধ করার দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছে এই সংগঠনটিও। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়া।
এদিকে সিলেটে ধর্মঘটের ঘোষণা আসার পর এক এক করে ধর্মঘট ডাকা হয় মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জেও। বুধবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অটোরিকশা নিবন্ধন বন্ধ ও জেলা সদরে স্থায়ী একটি ট্রাকস্ট্যান্ড নির্মাণের দাবিতে শুক্র ও শনিবার বাস ধর্মঘট পালন করবে মৌলভীবাজার বাস-মিনিবাস ও ট্রাক কর্ভাড ভ্যান মালিক সমিতি। ধর্মঘট শেষ হবে শনিবার সন্ধ্যা ৬টায়।
মৌলভীবাজার জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফজলুর রহমান ভোরের কাগজকে জানান, জেলায় চাহিদার তুলনায় ১০ গুণ বেশি অটোরিকশা চলে। এতে রাস্তায় যানজট বেড়েছে। এছাড়া অটোরিকশাগুলো স্বল্প দূরত্বের পাশাপাশি বেশি দূরত্বেও যাত্রী পরিবহন করায় আমাদের পরিবহনগুলো লোকসানে পড়েছে। এছাড়া শহরজুড়েও অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশারও ছড়াছড়ি- যা নানা দুর্ঘটনার কারণ। এসব বন্ধে দীর্ঘদিন থেকেই আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করছি, কিন্তু তারা এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ধর্মঘট কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না না এটা কেন হবে? এই দাবিগুলোতো আমাদের অনেক দিন থেকেই।
তবে মৌলভীবাজার থেকে আরো একধাপ এগিয়ে হবিগঞ্জের পরিবহন নেতারা। শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডেকেছেন তারা, কারণ সড়কে প্রশাসনিক হয়রানি। জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সভাপতি ফজলুর রহমান চৌধুরী বলেন, হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ সড়কে বাস চলাচলের ক্ষেত্রে নবীগঞ্জে বাধা দেয়া হচ্ছে। যানজটের অজুহাতে সরকার নির্ধারিত স্থান ছালামতপুরে বাস নিয়ে যেতে দিচ্ছে না। এছাড়া সড়কে অবৈধ যানবাহনের কারণেও বাসগুলো বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। তাই শুক্রবার সকাল থেকে জেলা মোটর মালিক গ্রুপের আওতাধীন সব বাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। তবে এর সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোনো সংযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে শুক্র ও শনিবার সুনামগঞ্জ জেলায় ধর্মঘট ডেকেছে সুনামগঞ্জ বাস মালিক সমিতি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সমিতির বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মিয়া।
তবে ধর্মঘট হতে পারে- এমন শঙ্কার কথা আগে থেকেই জানিয়েছিলেন বিএনপি নেতারা। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও ছিল। সমাবেশের দুদিন আগেই দূরবর্তী জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীদের সমাবেশস্থলে নিয়ে আসা হয়েছে। নেতাকর্মীদের অবস্থানের জন্য

নগরীর হোটেল ও গেস্ট হাউসের পাশাপাশি ভাড়া নেয়া হয়েছে অন্তত ২০টি কমিউনিটি সেন্টার। এছাড়া সমাবেশস্থলে শামিয়ানা টাঙিয়ে অবস্থান নিচ্ছেন অন্তত তিন শতাধিক নেতাকর্মী।
সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের নির্দেশেই এই পরিবহন ধর্মঘট। সমাবেশ বানচাল করতে ধর্মঘট ডাকতে বাধ্য করেছে আওয়ামী লীগই। তবে এতে কোনো লাভ হবে না। শনিবারের গণসমাবেশে অন্তত ৪ থেকে ৫ লাখ মানুষের জমায়েত হবে। এরই মধ্যে আমাদের অনেক নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে চলে এসেছেন। বাকি যারা এখনো আসতে পারেননি তারাও সমাবেশে যোগ দেবেন। কোনো বাধাই জন¯্রােত থামাতে পারবে না।
এদিকে আগামীকালের সমাবেশকে ঘিরে উজ্জ্বীবিত বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সিলেটের প্রতিটি উপজেলা, মহানগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে জোরেশোরে চলছে প্রচারণা। নগরীর প্রায় প্রতিটি সড়ক ছেয়ে গেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যানার-ফেস্টুনে। কেন্দ্রীয় নেতারাও আসতে শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে সিলেট এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়