মাসুদ বিন মোমেন আরো দুই বছর পররাষ্ট্র সচিব

আগের সংবাদ

বিশ্বকাপ উন্মাদনায় মেতেছে বিশ্ব

পরের সংবাদ

ফারদিনের হত্যাকাণ্ড নিয়ে র‌্যাবের সঙ্গে ডিবির দ্বিমত : ‘ফারদিনকে চনপাড়ায় হত্যা করা হয়নি, নতুন সিসিটিভি ফুটেজে যাত্রাবাড়ীতে দেখা গেছে তাকে’

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যার ঘটনা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের চনপাড়া বস্তিতে মেধাবী এ শিক্ষার্থীকে খুন করা হয়েছে বলে র‌্যাব জানালেও মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা এমনটা মনে করছে না। ডিবি বলছে, চনপাড়া নয় অন্য কোথাও পরশকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাদের ধারণা। রামপুরা, কেরানীগঞ্জ, জনসন রোড ও গুলিস্তানের পর এবার যাত্রাবাড়ীতে ফারদিনের উপস্থিতির একটি নতুন সিসিটিভি ফুটেজ হাতে আসায় এমনটা মনে করছে তারা। আর এ নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
তদন্তকারী সংস্থা ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হাতে আসা ফুটেজে দেখা গেছে, ঘটনার দিন রাত সোয়া ২টার দিকে পরশ যাত্রাবাড়ী মোড়ে ঘোরাফেরা করছেন। সেখানে সাদা গেঞ্জি পরিহিত এক যুবক তাকে একটি লেগুনায় তুলে দেয়। ওই লেগুনায় আরো ৩-৪ জন ছিল। লেগুনাটি তারাবোর দিকে নিয়ে যায় তাকে। ওই লেগুনার চালক ও সহযোগীদের নজরদারিতে রেখেছে ডিবি। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গতকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ঘটনার দিন রাত সোয়া ২টার দিকে যাত্রাবাড়ী থেকে ফারদিনকে লেগুনায় উঠতে দেখলাম। আবার কিছু কিছু গণমাধ্যমে দেখলাম বলা হয়েছে ওইদিন রাত আড়াইটার দিকে চনপাড়া গিয়েছেন তিনি। তবে সে সময় যাওয়া কথার না। যাত্রাবাড়ী থেকে রওনা হয়ে তারাবো যেতেই তার ২টা ৪৫ বেজে যাওয়ার কথা। সেখান থেকে আবার নোয়াপড়া এসে নদী পাড় হয়ে চনপাড়া যেতে ফারদিনের অনেক সময় লেগে যাওয়ার কথা। আসলে আমরা সব বিষয় মাথায় নিয়েই তদন্ত করছি। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ফারদিনের বাবার সঙ্গেও ডিবি কথা বলেছে। ছেলে হত্যার ঘটনায় দায়ের মামলায় কারাগারে থাকা বুশরাকে এখনো সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখতে রাজি নন তিনি। ডিবির সঙ্গে কথা শেষে ভিকটিম এই শিক্ষার্থীর বাবা কাজী নুরুউদ্দিন বলেন, এতদিন তারা হয়তো সময় পাননি আমার সঙ্গে

কথা বলার। আজ (গতকাল) আমার সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন মনে করেছেন বলে ডেকেছিলেন। ছেলে ফারদিনের ওইদিনের মুভমেন্ট নিয়ে কথা বলেছেন। মামলার প্রধান অভিযুক্তের (বুশরা) বিষয়ও এসেছে। বুশরাকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেয়া যায়না এ কারণেই যে জীবিত অবস্থায় আমার ছেলের সঙ্গে একমাত্র সে-ই দীর্ঘ সময় ধরে ছিল। ঘুরেছে-খেয়েছে। রাতে তাকে বাসায়ও নামিয়ে দিয়েছে। পরেরদিন যেহেতু পরীক্ষা ছিল ভালো বন্ধু হলে ও শুভাকাক্সক্ষী হলে ফারদিনের সঙ্গে ১-২ ঘণ্টা কাটিয়েই হলে পাঠিয়ে দিত। এত সময় ঘুরল কেন। যাত্রাবাড়ী সিসিটিভি ফুটেজ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত না আমার ছেলে কিনা। বিচারাধীন বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে এত রাতে আমার ছেলে সেখানে যাওয়ার কথা না। এ সময় পুরো নিশ্চিত না হয়ে মাদক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে এত দ্রুত কেন ইঙ্গিত দেয়া হলো তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
গতকাল ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, বাদী বুশরা নামে যে তরুণীকে এক নম্বর আসামি করেছেন তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ওইদিন রাত থেকে শুরু করে ফারদিন যেখানে যেখানে গিয়েছে কেরানীগঞ্জ, জনসন রোড, গুলিস্তান ও সর্বশেষ রাত সোয়া ২টার দিকে তাকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় হাঁটতে দেখা গেছে। সেখানে সাদা গেঞ্জি পরিহিত একটি ছেলে এসে তাকে সাদা একটি লেগুনায় তুলল। সেখানে আরো ৩-৪ জন ছিল। সেখান থেকে তারাবোর দিকে নিয়ে গেল। সেই লেগুনা ও তার চালক আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। আসলেই যাত্রাবাড়ী থেকে রাত সোয়া ২টার দিকে দেখা গেল তাকে তারাবো বিশ্বরোডের দিকে নিয়ে গেলেন। সেখান যেতেই ২০-৩০ মিনিট লেগে যাওয়ার কথা। এখন আসলেই কীভাবে ঘটনা ঘটেছে কংক্রিট তথ্যে আসছি না, তবে এটা আমরা বুঝতে পেরেছি যে রাত সোয়া ২টার পর তাকে যে লেগুনায় তোলা হলো ওই গাড়িতে ১৮ জন লোক থাকার কথা। তবে সেখানে ফারদিন ছাড়াও ৩-৪ জন লোককে নিয়ে বিশ্বরোডের দিকে গেল। সেখানেই কিছু ঘটল কীনা তদন্ত করে দেখছি। লেগুনা ও তার চালক নজরদারিতে আছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। তিনি যেখানে যেখানে গিয়েছেন সব তথ্যই আমাদের নজরদারিতে এসেছে।
ফারদিনকে কি জোর করে লেগুনায় তোলা হয়েছে না স্বেচ্ছায় গেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা দেখলাম সাদা গেঞ্জিপরা একজন ভদ্রলোক তার সঙ্গে কথা বলার পর তাকে লেগুনায় তুললেন। তারপর আমরা এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ফারদিনসহ লেগুনাটা ৪-৫ জন যাত্রী নিয়ে সুলতানা কামাল ব্রিজ হয়ে বিশ্বরোড ও বড়পা গেল। এছাড়াও পারিপার্শ্বিকতা যে বিষয়গুলো রয়েছে যেমন ঘটনার রাত ফারদিন ৯.৪৫ মিনিটে বুশরাকে নামিয়ে দিলেন রামপুরায়, তারপর কেরানীগঞ্জ গেলেন প্রায় ১১টার কাছাকাছি সময়। জনসন রোডে আসলেন সোয়া ১১টার দিকে। আবার গুলিস্তান আসলেন ১টার কাছাকাছি। এই যে সে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন। কেন যাচ্ছেন? আসলে তার মন মানসিকতা এ সময় খারাপ ছিল কিনা? তিনি বিদেশ যাবেন তার টাকা জোগাড় হওয়া বা না হওয়া নিয়ে কোনো টেনশনে ছিলেন কিনা? মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন কিনা? আবার সোয়া ২টার কাছাকাছি সময় সাদা গেঞ্জি পরিহিত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে লেগুনায় উঠলেন, মোবাইল ফোন ও বুশরাকে জিজ্ঞাসাবাদ- আসলে সব কিছু আমরা তদন্ত করছি। কোনো চক্রের হাতে পড়তে পারে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে হারুন বলেন, কেন লেগুনায় উঠেছে তার চালকের সঙ্গে কথা শেষে জানাতে পারব। র‌্যাব সংবাদ সম্মেলন করে বলছে, তারা নিশ্চিত হয়েছে চনপাড়া বা এর আশপাশে ফারদিন হত্যার শিকার হয়েছে। যে সময়টা আপনারা বলছেন এই সময়ে সে সেখানে (চনপাড়া) ছিল বলে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নিশ্চিত হয়েছে তারা- আপনারা এমন তথ্য পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, আমরা তাকে দেখেছি রাত সোয়া ২টার দিকে যাত্রবাড়ী ছিল। অন্যরা কী বলল তা নিয়ে আমরা কিছু বলতে চাই না।
এর আগে গত ১৫ নভেম্বর র?্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের বলেন, ফারদিন হত্যার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারলেও হত্যায় কারা জড়িত, তা আমরা কিছুটা শনাক্ত করেছি। তার হত্যায় রায়হান গ্যাংয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে আমরা সন্দেহ করছি। রায়হানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। সে চনপাড়ায় মাদক কারবারে জড়িত। তবে এখনও বলার মতো কোনো অবস্থানে আমরা নেই। পরশের বেড়ে উঠা চনপাড়া থেকে বেশি দূরে নয়। এটা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ড চনপাড়াতেই হয়েছে, এটা নিশ্চিত। যাদের নাম আসছে সবাইকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
গত ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করা হয় বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনের মরদেহ। ঘটনার পর হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী বেকায়দায় পড়ে। কীভাবে তার মরদেহ এলো শীতলক্ষ্যায়, কারা খুন করল- এসব রহস্যের জট খুলতে গিয়ে ক্লুলেস এ মামলার তদন্তভার আসে ডিবি মতিঝিল বিভাগের কাছে।

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণেই মৃত্যু ফারদিনের : ফারদিন নূর পরশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মাথায় ও বুকের পাঁজরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে । মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণেই মেধাবী এই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের আরএমও শেখ ফরহাদ ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জেলা সিভিল সার্জন এএফএম মশিউর রহমান কাছে জমা দেন। তিনি বলেন, ফারদিনকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তার বুকের দুপাশে দুই-তিনটি ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন আমরা পেয়েছি। পাশাপাশি তার মাথায় চার-পাঁচটি আঘাতের চিহ্ন ছিল। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়