মাসুদ বিন মোমেন আরো দুই বছর পররাষ্ট্র সচিব

আগের সংবাদ

বিশ্বকাপ উন্মাদনায় মেতেছে বিশ্ব

পরের সংবাদ

ধামইরহাটের ধান মাড়াই যন্ত্র সরবরাহ হচ্ছে সারাদেশে

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আব্দুল আজিজ মণ্ডল, ধামইরহাট (নওগাঁ) থেকে : নওগাঁ জেলার ধামইরহাট, পতœীতলা, সাপাহারে প্রায় ১ হাজার কারখানায় তৈরি হচ্ছে বোঙ্গা, ধান মাড়াই মেশিন। এসব মেশিনের চাহিদা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। ধামইরহাট-আমাইতাড়া রোডের পারভীন সিনেমা হলের সামনে ২৩টি, ধামইরহাট-পতœীতলা ফায়ার স্টেশন রোডে ২৬টি, টিএনটি রোডে ৬টি, নিমতলী-জয়পুরহাট ব্রিজের নিকট ১০টি, শেকাহাটি-আগ্রাদ্বিগুন রোডে ২০টি, পতœীতলায় ৩০টি, সাপাহার ২০টি কারখানা ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে।
দিন দিন কৃষিকাজে এসব মেশিনের ব্যবহার বাড়ছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে দামও। ধামইরহাট উপজেলা সদরে দিন-রাত কানে আসে ঢং ঢং শব্দ, দেখা যায় বিদ্যুতের ঝলকানি, রাতের আঁধারে আগুনের ফুলকি।
এ ব্যাপারে আমাইতাড়ায় প্রথম মেশিন উৎপাদনকারী আব্দুর রহমান ভোরের কাগজকে জানান- ২০০১ সালে ১টি মেশিনের উৎপাদন খরচ পড়ত মাত্র ৫০ হাজার টাকা, বিক্রি করতাম ৭০-৯০ হাজার টাকায়। তখন বিদ্যুৎ ও লোহার মূল্য কম থাকায় স্বল্পমূল্যে এসব মেশিন তৈরি সম্ভব হত। বর্তমান মেশিন উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৪ থেকে ৫ গুণ। এখন লোহা, বিদ্যুৎ ও শ্রমিকের খরচ বেশি। একটি বঙ্গা উৎপাদন খরচ ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সেটিও আবার কোয়ালিটির উপর দাম ও খরচ পড়ে।
শুভ কর্মকার জানান রংপুর, সিরাজগঞ্জ এলাকার কৃষকেরা অগ্রিম বায়নার টাকাসহ উৎপাদন সমাগ্রী ক্রয় করে ধামইরহাট-পতœীতলা কারখানাগুলোতে পৌঁছে দিয়ে যান। আমরা চুক্তিভিত্তিক কাজ করি। কৃষক বা ক্রেতারা ১৬-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অগ্রিম প্রদান করেন। বঙ্গা মেশিনগুলো ছোট-বড়, মাঝারি হালকা, ভারি বিভিন্ন কোয়ালিটির ওপর উৎপাদনের ব্যয় নির্ভর করে। উন্নতমানের মেশিন তৈরি করতে হলে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।
এসব মেশিন উৎপাদনের লক্ষে পাবনা, ময়মনসিংহ, রংপুর জেলা এলাকার কৃষকেরা ট্রাকে করে ধামইরহাট-পতœীতলায় কারখানায় পৌঁছায়। কাজল কর্মকার জানান চুক্তিভিত্তিক মেশিনগুলো উন্নতমানের তৈরি করতে পুরোপুরি ৩ লাখ টাকা খরচ হয়, যার বিক্রি মূল্য ৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
শ্রী উজ্জল কর্মকার জানান- তিনি ২০১৬-১৭ থেকে এ মেশিন তৈরি করছেন। একটি মেশিন তৈরি করতে ৩-৪ দিন সময় লাগে। প্রতিদিন লেবার লাগে ৫ জন। এর মধ্যে ১ জন হেড মিস্ত্রী আর ৪ জন সহযোগী। বৈদ্যনাথ কর্মকার ও সাধন কর্মকার জানান বিদ্যুতের লোডশেডিং ও মূল্য বৃদ্ধি, রডের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মেশিন উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে।
আগে কম দামে, কম খরচে বেশি উৎপাদন ও সরবরাহ করেছি। সবকিছুর দাম বাড়াতে উৎপাদন কমেছে। কমেছে সরবরাহ। তাই চুক্তিভিত্তিক কৃষক বা ক্রেতা উপকরণগুলো অগ্রিম কারখানায় পৌঁছে দিলে কাজ করি, না দিলে কাজ করি না।
কাজল কর্মকার বলেন- সরকারি ঋণের সুযোগ সুবিধা কোন পাইনি। এনজিও ঋণে দায়বদ্ধ আছি। সাপ্তাহিক ও মাসিক কিস্তি দিতে হিমছিম খাচ্ছি। আব্দুর রহমান জানান তার কারখানায় অনেক মেশিন তৈরি আছে। তবে দাম বাড়ার কারনে বিক্রি হচ্ছে না। বছরের এ সময়ে কৃষকের কাছে টাকা নেই। আমন ধান ঘরে উঠলে এগুলো বিক্রি হবে।
জানা গেছে- এসব মেশিনের চাহিদা দিন দিন ব্যাপক হারে বাড়ছে। এগুলো সরিয়া, গম, ধান, মাড়াই হয়। সরকারিভাবে সহযোগিতা থাকলে ভূূত, বঙ্গা, ধান মাড়াই মেশিনগুলো বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক আল জোবায়ের ভোরের কাগজকে জানান- মেশিনগুলো উৎপাদনে তাদের কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ নেই। এরপরও মেশিন উৎপাদন করে তারা সারাদেশে সরবরাহ করছে। এসব পরিবারগুলো অর্থনৈতিক উপার্জনের একটি পথ খুঁজে পেয়েছেন। উপজেলা প্রকৌশলী আলী হোসেন সরকারের কাছে এসব এলাকা অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণার দাবি করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়