মাসুদ বিন মোমেন আরো দুই বছর পররাষ্ট্র সচিব

আগের সংবাদ

বিশ্বকাপ উন্মাদনায় মেতেছে বিশ্ব

পরের সংবাদ

তার লেখার আমি মিষ্টি পাঠক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

একজন আপাদমস্তক পুরোদস্তুর হাস্য-রসিক শিশুসাহিত্যিক কাইজার চৌধুরী। কাইজার ভাই বলেই সম্বোধন করি। ভারি মজার মানুষ। দুষ্টামিভরা দুষ্ট শিশুর মতো হাসি তার। চাকরি জীবনে অত্যন্ত সফল। উচ্চপদস্থ ব্যাংক কর্মকর্তা। পরিবারের পূর্বপুরুষেরাও ব্যাংকার। ব্যাংক তার রক্তে। একইভাবে তার রক্তে প্রবাহিত হচ্ছে খাঁটি শিশুসাহিত্য। লেখালেখির প্রতি তার গভীর প্রেম। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে থেকেও ছোটদের তিনি ভুলে যান না। শৈশবের ঝাঁপি খুলে তিনি হাস্যরসের ধারা বইয়ে দেন।
ব্যাপারটা ম্যাজিকের মতো মনে হয়। কাইজার চৌধুরী স্বতন্ত্র ধারার একজন লেখক। হাস্যরস, আদর্শবাদিতা, দুষ্টুমি, ছেলেবেলা- এসব বিষয়ই তার লেখায় ফিরে ফিরে আসে।
কাইজার চৌধুরী লেখার ব্যাপারে কোনো আপস করেন না। তিনি পরিশ্রম সাধ্য গদ্য রচনা করেন। তাই লেখকেরাও তার ভক্ত। তিনি লেখকের লেখক।

দুই
সালটা মনে নেই। আশির দশকের শেষের দিকে। শিশু ঈদ সংখ্যায় একটা গল্প পড়ে আমরা চমকে উঠলাম। পরে এটা বই আকারে প্রকাশ হলো নাম ছিনতাই ছিনতাই। বন্ধু আহমাদ মাযহার পড়ে উচ্ছ¡সিত, বলল- একেবারে অন্যরকম লেখা। অসাধারণ। মাযহার মুগ্ধ। আমি পড়েই সেই কাঁচা বয়সে অভিভূত। বুঝলাম শক্তিমান শিশুসাহিত্যিকের আবির্ভাব হতে চলেছে। গত তিন দশক ধরে কাইজার চৌধুরী বিভিন্ন ধরনের গদ্য লিখে যাচ্ছেন। শিশু-কিশোর পাঠকদের প্রিয় লেখক তিনি। তিনি হাস্যরস ধারার আমাদের দেশের অন্যতম সেরা লেখক। তার পিতৃব্য বড় ইমরুল চৌধুরী ষাট দশকে ভূতের সাথে ষাট সেকেন্ড লিখে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। ‘ইস্পাতের রসগোল্লা’ গল্পটার কথা আজো ভুলিনি। একদা বাংলাদেশের শিশুসাহিত্য হাস্যরসের ধারা বহমান ছিল। সাজেদুল করিম, গোলাম রহমান, মোহাম্মদ নাসির আলী, রাহাত খান, খান মোহাম্মদ ফারাবী, মাহবুব তালুকদার, নিয়ামত হোসেন প্রমুখের প্রদর্শিত পথে কাইজার চৌধুরীর আবির্ভাব। তার সৃষ্ট চরিত্র বিল্টু মামা, ন্যাড়া প্রমুখ। বিল্টু মামাকে নিয়ে তিনি অনেকগুলো জোরালো গল্প লিখেছেন। তিনি হাসির গল্পে শিবরাম চক্রবর্তীর উত্তরসূরি। শব্দে শব্দে ‘পান’ করা তার সহজাত। কিশোরবেলার দুষ্টুমি তার গল্পে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো জ্বলে ওঠে।

তিন
কাইজার চৌধুরীর সমগ্র শিশুসাহিত্যের দিকে চোখ ফেরালে তার সাহিত্য মানস স্পষ্ট হয়ে ওঠে। গল্প-উপন্যাসই তিনি প্রধানত লিখে থাকেন। গল্পে তার প্রসিদ্ধি সমধিক। তার কিছু বইয়ের নাম উল্লেখ করা যাক। ছিনতাই ছিনতাই, শেমুর, বিল্টু মামার হালচাল, বিল্টু মামার যত কাণ্ড, বিল্টু মামার গোয়েন্দাগিরি, একাত্তরের রূপকথা, শোভনের একাত্তর, ভূত আছে ভূত নেই, টুকলি, ন্যাড়া বাড়ির ভূত ইত্যাদি। বিল্টু মামার চরিত্রের নানা অদ্ভুত কাহিনী নিয়ে বিল্টু মামার গল্পগুলো রচিত হয়েছে। এসব গল্পের কোনো তুলনা নেই। একবার পড়লেই পাঠস্মৃতি অমর হয়ে থাকে।
একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এসব আমাদের নিজস্ব বিষয়ও বারবার তার লেখায় বর্ণময় হয়ে ওঠে। রাজাকারবিরোধী তীব্র মানসিকতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ তার শিশুসাহিত্য। কাইজার চৌধুরী একজন দায়িত্বশীল শিশুসাহিত্যিক। শিশুদের আনন্দময় মনোজগৎ গঠনে তিনি সচেষ্ট। তাই কাইজার চৌধুরী আমার প্রিয় শিশুসাহিত্যিক। তার লেখার আমি মিষ্টি পাঠক। কর্মসূত্রে অনেক ব্যস্ত থাকলেও শিশুদের জন্য লেখার কথা তিনি কখনো ভোলেন না। এই নিবেদিতপ্রাণ শিশুসাহিত্যিককে প্রাণঢালা অভিনন্দন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়