মাসুদ বিন মোমেন আরো দুই বছর পররাষ্ট্র সচিব

আগের সংবাদ

বিশ্বকাপ উন্মাদনায় মেতেছে বিশ্ব

পরের সংবাদ

চড়া বাজারে তেল-চিনির ইন্ধন : ভোজ্যতেল লিটারে ১২ টাকা ও চিনি কেজিতে ১৩ টাকা বাড়ল, চাল ও আটার দাম ঊর্ধ্বমুখী

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আলী ইব্রাহিম : বাজারে দাম বাড়েনি এমন কোনো পণ্য খুঁজে পাওয়া মুশকিল। গত ছয় মাস ধরে একের পর এক বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। চাল, ডাল থেকে শুরু করে সব ভোগ্যপণ্যই সাধারণের নাগালের বাইরে। সবশেষ বাড়ল চিনি ও তেলের দাম। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এখন বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯০ টাকা; আর খোলা তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭২ টাকা। পাম তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২১ টাকা। এছাড়া সয়াবিন তেলের ৫ লিটার বোতলের দাম ধরা করা হয়েছে ৯২৫ টাকা।
কয়েকদিন ধরে বাজারে গুঞ্জন ছিল তেলের দাম আবার বাড়ছে। এই গুঞ্জনের পর থেকে বাজারে তেলের সরবরাহ কমে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সয়াবিন তেলের সঙ্গে দাম বেড়েছে চিনিরও। এখন থেকে প্রতি কেজি খোলা চিনি কিনতে হবে ১০২ টাকায়। প্যাকেটজাত চিনি কিনতে হবে ১০৮ টাকা কেজি দরে। যদিও এক মাস ধরেই অনেকটা হাওয়া ছিল চিনি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পাড়া-মহল্লার দোকানে এক কেজি চিনির জন্য ১২০ টাকা গুনতে হয়েছে। খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশন চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পরও বাজারে নির্ধারিত দামে চিনি মিলছিল না। তেল-চিনির এই বাড়তি দামে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
নতুন করে তেল ও চিনির দাম বাড়ার বিষয়টি জানিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এন্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম বাড়তি, সেইসঙ্গে দেশে ডলার সংকটের কারণে বেশি দামে চিনি আমদানি করতে হয়েছে। যে কারণে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ানোর বিষয়ে

জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা ভোরের কাগজকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তি দামের কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তেলের দাম নির্ধারণের জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি। আমাদের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দাম বাড়ানোর যৌক্তিক কারণ ছিল বলে বাড়ানো হয়েছে বলেও মনে করেন দেশের অন্যতম ভোজ্যতেল বিপনণকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের এই কর্মকর্তা।
শুধু তেল কিংবা চিনি নয়, বাজারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে গরিবের চাল বলে খ্যাত মোটা চালের দামও। বাজারে মোটা চালের সরবরাহ খুবই কম। পাড়া-মহল্লার দশ দোকান খুঁজলে এক দোকানে মেলে মোটা চাল। তবে দাম অনেক বেশি। বাজারে মোটা চাল বলে খ্যাত স্বর্ণা চালও বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজি দরে। বাজারে এখন মাঝারি ও সরু চাল পাওয়া গেলেও মোটা চালে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে মোটা চাল নেই বললেই চলে। অথচ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, টানানো বাজারদরে মোটা চাল পাইকারি ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা এবং খুচরায় ৪৭ থেকে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা রয়েছে। শুধু চালে নয়, আরো অনেক পণ্যেও এমন তেলেসমাতি রয়েছে। রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাজার কারওয়ান বাজারে টানানো বাজারদর কিছুটা কার্যকর হলেও পাড়া-মহল্লার হিসেব পুরো ভিন্ন। বাড়তি দামে কিনতে হয় পণ্য। চাল ছাড়াও বেড়েছে আটা-ময়দার দাম। যে কারণে রুটি খেতে গেলেও আগের চেয়ে দ্বিগুণ দাম দিতে হয়।
নি¤œ আয়ের মানুষের জীবনব্যয় অনেক গুণ বেড়ে গেছে। এতে খাদ্যতালিকা থেকে বিভিন্ন ধরনের আইটেম বাদ দিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। বিশেষ করে আমিষের দাম এত বেশি বেড়ে গেছে, এতে সপ্তাহের আমিষ এখন তারা মাসে একবার খাওয়ার চিন্তা করেন। এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী বাজারে কথা হয় বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ইসহাকের সঙ্গে। তিনি বলেন, যে হারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলছে, জীবনধারণ খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসহাক বলেন, কাগজের দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। যে কারণে দুই বাচ্চার স্কুলের খরচ বেড়ে গেছে। সেইসঙ্গে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম। তাই উপায়ান্তর না দেখে মাসে ৪০ হাজার টাকা মাইনে পাওয়া এই বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা এখন পরিবারের অন্য সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে এক রুমের ভাড়া বাসায় থাকেন। এর চেয়ে আরো শোচনীয় অবস্থা নি¤œ আয়ের মানুষের। আয় না বাড়লেও ব্যয় এত বেশি বেড়ে গেছে; সংসারের ব্যয় নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, বাজারে পণ্যের বাড়তি দামের কারণে সাধারণ ভোক্তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশে প্রভাব পড়বে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু নতুন করে তেল-চিনির দাম বাড়ার কারণে মানুষের কষ্ট আরো বাড়বে। যৌক্তিক কারণে তেল-চিনির দাম বাড়ানো হলেও বিষয়টি নিয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। যাতে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার সুযোগ নিতে না পারে। এক্ষেত্রে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। সেইসঙ্গে সাধারণ মানুষের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ন্যায্য মূল্যে পণ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর কেউ বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে বলেও মনে করেন সরকারের সাবেক এই আমলা।
বাজারে আটার দামও বেড়েছে। দুই সপ্তাহ আগে ৬৫ টাকায় বিক্রি হওয়া আটা কিনতে এখন গুনতে হবে ৭০ টাকা। ইতোমধ্যে সব ধরনের আটার দাম আরেক দফা বেড়েছে। নতুন প্যাকেটজাত দুই কেজি আটার দাম এখন ১৪০ টাকা। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। আটার দাম বাড়ার বিষয়ে উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গ্যাস সংকটে উৎপাদন কমে গেছে। ডলারের দাম বাড়ার কারণে বেসরকারি পর্যায়ে গম আমদানিও কমেছে। এতে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত আটা বাজারে নেই। তাই উৎপাদন খরচ সমন্বয় করতে আটার দাম বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বাজারে বাড়ছে মসলাজাতীয় পণ্যের দামও। আমদানিনির্ভর বেশির ভাগ মসলায় কেজিতে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। জিরা, কাজু বাদাম, লবঙ্গ, এলাচসহ কয়েকটি পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ কমায় বাড়ছে দাম। সামনে আমদানিনির্ভর খাদ্যপণ্যের দাম আরো বাড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে কনশাস কনজুমার সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ ভোরের কাগজকে বলেন, নতুন করে তেল-চিনির দাম বাড়ানোর কারণে সাধারণ ভোক্তারা চরম বিপাকে পড়বেন। গত কয়েক মাস ধরে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন। এরই মধ্যে নতুন করে দাম বাড়ানো মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। আয় না বাড়লেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে ব্যয়। তাই সাধারণ মানুষের জীবনব্যয় নির্বাহ করা খুবই কঠিন হয়ে উঠছে। সরকারের উচিত সেফটি নেটের আওতা বাড়িয়ে নি¤œ আয়ের মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়