জামায়াত আমিরের ছেলেসহ দুজন ফের রিমান্ডে

আগের সংবাদ

জামায়াত-জঙ্গি নতুন সমীকরণ : দলটির আমির ডা. শফিকের ছেলে ডা. রাফাতকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসছে নতুন তথ্য ও যোগসূত্র

পরের সংবাদ

ফায়ার সপ্তাহ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : মন্দা মোকাবিলার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের লক্ষ্য একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। আমরা সব ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিও ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে’ ধীর হয়ে গেছে। একদিকে করোনা ভাইরাসের অভিঘাত, অপরদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন, কাউন্টার স্যাংশন। ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। সম্ভাব্য এই মন্দা মোকাবিলার জন্য এখন থেকে আমাদেরও প্রস্তুতি নিতে হবে। যাদের জমি আছে, তাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ জমিতে কিছু-না-কিছু উৎপাদন করতে হবে। নিজেদের যেটা চাহিদা, সেটা পূরণ করার চেষ্টা নিজেরাই করবেন, যেন বিশ্বের এই মন্দার ধাক্কাটা যেন আমাদের দেশে না পড়ে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিস ট্রেনিং কমপ্লেক্সের প্যারেড গ্রাউন্ডে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২২ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অপর প্রান্ত প্যারেড গ্রাউন্ডে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও স্বরাষ্ট্র সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী প্রমুখ। ‘দুর্ঘটনা-দুর্যোগ হ্রাস করি, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ি’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারো ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচির ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে, অনুষ্ঠানস্থলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীতাকুণ্ডে সা¤প্রতিক বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৩ জন অগ্নিবীরের পরিবারসহ ৪৫ জন দমকল কর্মীর হাতে ৪ কাটাগরিতে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স পদক-২০২২ তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী বাহিনীর কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন এবং রাষ্ট্রীয় সালাম নেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সেবার সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিপুল পরিমাণ উন্নত, আধুনিক প্রযুক্তি সুবিধা সংবলিত বিশ্বমানের অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছি। সর্বশেষ আমরা বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার ৬৮ মিটারের লেডার সম্বলিত টিটিএল গাড়ি ফায়ার সার্ভিসের বহরে যোগ করেছি। ৬৮ মিটারের ৫টি গাড়ি কেনা হয়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে ১১টি টিটিএল কেনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুটি রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার ফাইটিং ভেহিক্যাল দেয়া হয়েছে। নদীপথে সক্ষমতা বাড়াতে ২৪টি রেসকিউ বোট ও ১০টি ফায়ার ফ্লোট কেনা হয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, লিঙ্গ অসমতা দূর করতে ‘ফায়ারম্যান’ পদের নাম ‘ফায়ার ফাইটার’ করা হয়েছে। পরিদর্শকের সংখ্যা ৫০ থেকে ২৬৮, ডুবুরির সংখ্যা ২৫ থেকে ৮৫, অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা ৫০ থেকে ১৯২, আগুন নেভানোর পানিবাহী গাড়ি ২২৭ থেকে ৬১৭ এবং ফায়ার পাম্প ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৪৬টিতে উন্নীত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগে ফায়ার সার্ভিসের কেমিক্যাল টেন্ডার, ব্রিদিং টেন্ডার, ফোম টেন্ডার, হ্যাজমেট টেন্ডারের মতো বিশেষ ধরনের কোনো গাড়ি ছিল না। আমরা এ ধরনের ৩৫টি বিশেষায়িত গাড়ি দিয়েছি। যুগের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একসময়ের অবহেলিত এ প্রতিষ্ঠানটিকে আমরা একটি সম্মানজনক স্থানে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেবার মানোন্নয়নের পাশাপাশি সরকার এ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধা বৃদ্ধির জন্যও কাজ করেছে। এ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পূর্ণাঙ্গ রেশন ও ঝুঁকিভাতা দেয়া হয়েছে। অপারেশনাল কর্মীদের জন্য তিন রঙের মর্যাদাপূর্ণ কমব্যাট পোশাক প্রবর্তন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পদকের সংখ্যা ও সম্মানি বাড়ানো হয়েছে। উদ্ধার কাজের সুবিধার্থে জার্মানির তৈরি ৩টি জাম্বু কুশন হস্তান্তর করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের

ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে আমরা ২০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছি। আরো ২০ কোটি টাকা এ ট্রাস্ট ফান্ডে অনুদান দেয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, গত ১০ বছরে এ প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা ১ লাখ ৯২ হাজার ৮৭টি অগ্নি দুর্ঘটনায় অংশ নিয়ে ১৬ হাজার ৩০৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার সম্পদ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন। একই সময়ে এ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ১ লাখ ২৯ হাজার ৭৯৯টি অ্যাম্বুলেন্স কলের মাধ্যমে ১ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৯ জন রোগী হাসপাতালে স্থানান্তর করেছেন। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তারা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ লাখ ১৩ হাজার ৬১ জন শিক্ষার্থীকে অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৯ লাখ ২৫ হাজার ২৪০ জন কর্মীকে দুদিনব্যাপী অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এছাড়া ভূমিকম্পের মতো বড় দুর্যোগ প্রতিরোধে হেলপিং ফোর্স হিসেবে তারা ৬২ হাজার ভলান্টিয়ার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এখন পর্যন্ত ৪৯ হাজার ৪৪৯ জনকে ৩ দিনব্যাপী স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আজীবন রেশন দেয়ার পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। আমরা সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব। এই প্রতিষ্ঠানের জনবল ৩০ হাজারে উন্নীত করার কাজও হাতে নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ পালন করা হয় কয়েকটা লক্ষ্য সামনে রেখে। এখানে আমি মনে করি প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই আমাদের ছেলেমেয়েদের ছোটবেলা থেকে এবং প্রত্যেকটা বাড়ির গৃহিণী থেকে শুরু করে সবাইকেই আগুন লাগলে কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত করা যায় সেই প্রশিক্ষণটা দেয়াও একান্তভাবে দরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা, প্রত্যয় এবং লক্ষ্য। যেকোনো ঝুঁকি কমিয়ে উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। মানুষের নিরাপত্তা দেয়াই হচ্ছে আমাদের প্রচেষ্টা। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ যতটা এগিয়ে যাবে, মানুষ ততটা ভালো থাকবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়