জামায়াত আমিরের ছেলেসহ দুজন ফের রিমান্ডে

আগের সংবাদ

জামায়াত-জঙ্গি নতুন সমীকরণ : দলটির আমির ডা. শফিকের ছেলে ডা. রাফাতকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসছে নতুন তথ্য ও যোগসূত্র

পরের সংবাদ

জি-২০ সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা : ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের তাগিদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : বিশ্ব নেতাদের অবশ্যই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে- এমন আহ্বানের মধ্য দিয়ে বিশ্বখ্যাত পর্যটনস্থান ইন্দোনেশিয়ার বালিতে গতকাল জি-২০ সম্মেলনের উদ্বোধন হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মধ্যেই শুরু হয়েছে বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-২০ এর শীর্ষ সম্মেলন।
সম্মেলনের সূচনা বক্তব্যে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার বিদ্যমান ‘যুদ্ধের অবসান’ ঘটানোর আহ্বান জানান ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো। কেননা, এই সংঘাত ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এবারের জি-২০ সম্মেলনেও বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন শুরু হওয়ার আগের দিন সোমবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ৩ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে জোকো উইদোদো বলেন, যদি যুদ্ধ শেষ না হয় তাহলে সামনে এগিয়ে যাওয়া আমাদের সবার জন্যই কঠিন হবে। পৃথিবীটাকে বিভক্ত করতে দেয়া উচিত হবে না। এছাড়া নতুন করে শীতলযুদ্ধে জড়ানো উচিত হবে না।
যুদ্ধবিরতির আহ্বান মোদির : শীর্ষ সম্মেলনে দেয়া ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির উপায় সবাইকেই খুঁজতে হবে। এটা যুদ্ধের সময় নয়। কূটনীতির রাস্তায় কী করে ফেরা যায়, তার খোঁজে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় তৎকালীন বিশ্ব নেতৃত্ব শান্তির পথে প্রত্যাবর্তনে প্রচণ্ডভাবে এগিয়ে এসেছিলেন। আজ সেই দায়িত্ব চেপেছে আমাদের ওপর। পৃথিবীকে শান্ত, সমৃদ্ধশালী ও নিরাপদ করে তুলতে আমাদের সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। এটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
মোদি আরো বলেন, আগামী বছর জি-২০ নেতারা যখন বুদ্ধ ও গান্ধীজির দেশে (ভারত) মিলিত হবেন, আমি নিশ্চিত, তখন আমরা সবাই বিশ্ববাসীকে শান্তির বার্তা দিতে পারব। উল্লেখ্য, ভারত আগামী ১ ডিসেম্বর জি-২০ গ্রুপের সভাপতির দায়িত্ব নেবে।
অবশেষে সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী : জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। গতকাল সকালে সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। এ সময় ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো তাকে অভ্যর্থনা জানান।
জো বাইডেন, শি জিনপিং,

রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান এবং ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মতো নেতারা যোগ দিলেও রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবারের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না। সম্মেলনে রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। তবে বালিতে পৌঁছানোর পর সোমবার তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার খবর আসে। ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম এপির এমন খবরের পর ল্যাভরভের শারীরিক অবস্থা নিয়ে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়। পরে বালির গভর্নর আই ওয়ায়ান কোস্টার রয়টার্সকে জানান, চেকআপের জন্য তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তিনি সুস্থ রয়েছেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এপির এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটিকে প্রতারণামূলক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
জেলেনস্কির শান্তি প্রস্তাব ও ক্রেমলিনের প্রতিক্রিয়া : ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ বন্ধে ১০ দফা শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। জি-২০ সম্মেলনে ভিডিও বক্তব্যে দেয়া জেলেনস্কির এ প্রস্তাবে রয়েছে- পরমাণু নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, বন্দি বিনিময় ও জাতিসংঘের প্রস্তাবের বাস্তবায়ন। এতে আরো রয়েছে- রুশ সেনা প্রত্যাহার, পরিবেশ রক্ষা, সংঘাত নিয়ন্ত্রণ, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা।
জেলেনস্কি তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের হাজার হাজার মানুষ রাশিয়ার হাতে বন্দি। তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। সবাই জানি ১১ হাজার শিশুকে জোর করে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়া নিয়ে ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে দুটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয় ইউক্রেনের। কিন্তু সেগুলোর পরেও চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণ করে রাশিয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতে জি-২০ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, তিনি রাশিয়ার সঙ্গে তৃতীয় মিনস্ক চুক্তি করবেন না। এ কথার মাধ্যমে জেলেনস্কি মূলত রাশিয়ার সঙ্গে তার দেশের ‘অনর্থক চুক্তি’র প্রতি অনাগ্রহ প্রকাশ করলেন।
জেলেনস্কির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় বসতে চায় না। জেলেনস্কির বক্তব্য যার প্রমাণ।
পুতিনকে সমস্যার সমাধান করতে বললেন সুনাক : যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন ঋষি সুনাক। আর এ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের তীব্র সমালোচনা করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা করায় এ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্টের ওপর নিজের ক্ষোভ ঝাড়েন সুনাক। তিনি জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য সমস্যা ও অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। এখন কেবল পুতিন এসব সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
সুনাক বলেন, সবকিছু পরিবর্তনের ক্ষমতা একজন মানুষের (পুতিনের) রয়েছে। এটি উল্লেখযোগ্য যে, আমাদের সঙ্গে এখানে যোগ দিতে সমর্থ হননি পুতিন। যদি তিনি থাকতেন, তাহলে আমরা বিষয়গুলো খুঁজে বের করতে পারতাম। পুতিনই ইউক্রেন থেকে রুশ সেনাদের প্রত্যাহার ও এই বর্বর যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন।
‘এক চীন নীতি’ স্পষ্ট করলেন বাইডেন : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘এক চীন নীতি’ নিয়ে তার দেশের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। সোমবার ইন্দোনেশিয়ার বালিতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ৩ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
বাইডেন বলেন, ‘আমাদের এক চীন নীতিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমরা উভয়পক্ষের স্থিতাবস্থায় একতরফা পরিবর্তনের বিরোধিতা করি এবং তাইওয়ান প্রণালিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ।
জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এটিই দুই নেতার প্রথম বৈঠক। এদিন বৈঠক শুরুর আগে হাসিমুখে করমর্দন করেন দুই প্রেসিডেন্ট। এ সময় বাইডেন শিকে বলেন, ‘আপনাকে দেখে খুব ভালো লাগছে।’
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, বাইডেন চীনা প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, পরাশক্তি হওয়ার প্রতিযোগিতাকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুই দেশই দায়ী। সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টে বাইডেন বলেন, দুই দেশের মধ্যকার প্রতিযোগিতা যাতে সংঘর্ষের দিকে না গড়ায় সে বিষয়ে আমাদের দায়িত্ব নিয়ে কথা হয়েছে। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে প্রভাবিত করে, এমন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একযোগে কাজ করার উপায় খুঁজে বের করার বিষয়েও আমাদের আলোচনা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করার কোনো ইচ্ছা চীনের নেই : যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করার কোনো ইচ্ছা চীনের নেই বলে মন্তব্য করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে নিজ দেশের এমন মনোভাবের কথা জানান তিনি।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্যকে পরস্পরের জন্য সুযোগ হিসেবেও আখ্যায়িত করেন শি জিনপিং। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পুঁজিবাদকে গ্রহণ করার সময়টিতে চীন সমাজতন্ত্রকে বেছে নিয়েছে। উভয়পক্ষেরই এই মতপার্থক্যকে সম্মান করা উচিত। কারও পক্ষেই পরস্পরের বিদ্যমান ব্যবস্থা বদলে দেয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়।
এদিন বিশেষ করে তাইওয়ান ইস্যুতেও কথা বলেন শি জিনপিং। এটিকে চীন-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে রেড লাইন হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি। চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, তার প্রত্যাশা ওয়াশিংটনের কথা ও কাজে মিল থাকবে। তারা এক চীন নীতি মেনে চলবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়