জামায়াত আমিরের ছেলেসহ দুজন ফের রিমান্ডে

আগের সংবাদ

জামায়াত-জঙ্গি নতুন সমীকরণ : দলটির আমির ডা. শফিকের ছেলে ডা. রাফাতকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসছে নতুন তথ্য ও যোগসূত্র

পরের সংবাদ

কক্সবাজারে লবণ চাষ শুরু : আমদানির খবরে উদ্বেগে চাষিরা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মিজবাউল হক, চকরিয়া (কক্সবাজার) : প্রাকৃতিক পরিবেশ ভালো থাকায় দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদন এলাকা কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী অঞ্চলের ৬৫ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ শুরু হয়েছে। গত ২ নভেম্বর মৌসুমের শুরুতে প্রতিটি মোকামে পুরোদমে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিসিক কক্সবাজার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। জেলার চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চল, পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী, বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার জমিতে এক মাস আগে লবণ চাষ শুরু হয়েছে।
চাষিদের আশা, আবহাওয়া ভালো থাকলে দেশে এবার চাহিদার বিপরীতে লবণের বাম্পার উৎপাদন হবে। সিন্ডিকেট কর্তৃক বিদেশ থেকে লবণ আমদানির কারণে পর পর বেশ কয়েক মৌসুমে চাষিরা বিপুল পরিমাণ লবণ উৎপাদন করেও লোকসান গুনতে হয়েছে। এবার সব কিছু সহায়ক থাকায় চাষিদের মুখে ফুটেছে হাসি।
তবে বরাবরের মতো এবারো শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের কাছে চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন কম হবে এই ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে লবণ আমদানি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি চক্র। তারা মূলত দেশে লবণের ঘাটতি দেখিয়ে বিদেশ থেকে সোডিয়াম লবণ আমদানির জন্য সব রকমের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। চাষিদের দাবি, সরকার যেন সিন্ডিকেটের চাপের মুখে প্রভাবিত না হয়। দেশে যেভাবে লবণ উৎপাদিত হচ্ছে তাতে কোনো ঘাটতি থাকবে না। কক্সবাজার বিসিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর নভেম্বরের শুরুতে চাষিরা লবণ উৎপাদনে মাঠে নামেন। ৩৭ হাজার চাষি লবণ মাঠে কাজ করছেন। মাঠে উৎপাদন কাজে জড়িত থাকে আরো ৭৫ হাজার শ্রমজীবী মানুষ। পরিবহন লোড-আনলোড এবং মিলপর্যায়ে প্যাকেটিং ও বাজারজাত মিলিয়ে দেশীয় লবণ শিল্পে মোট ৫ লাখ মানুষ প্রতিবছর নিয়োজিত থাকেন।
এ বছর মোট ৬৫ হাজার একর জমিতে লবণ চাষের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, সদর ও টেকনাফ উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা (আংশিক এলাকা) থেকে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বিসিক।
কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য মহেশখালীতে জমি অধিগ্রহণ করায় চলতি মৌসুমে ১৫-২০ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ২৫ হাজার প্রান্তিক চাষিও বেকার হয়ে পড়েছেন। কক্সবাজার জেলা ছাড়া বাঁশখালী উপজেলার কিছু এলাকাতে লবণ উৎপাদন হয়। এছাড়া দেশের আর কোথাও লবণ উৎপাদিত হয় না।
জানতে চাইলে কক্সবাজারের লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) জাফর ইকবাল ভুঁইয়া বলেন, চলতি মৌসুমে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টন লবণ উৎপাদনের টার্গেট নিয়ে চাষ শুরু করা হয়েছে। গত বছর জমির পরিমাণ ৬৩ হাজার ২৯১ একর থাকলেও এ বছর চাষের পরিধি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এবার আবহাওয়া বেশ ভালো।
তিনি বলেন, প্রতিবছর নভেম্বর মাসে চাষ শুরু হলেও এবার বিভিন্ন মোকামে এক মাস আগে লবণ চাষে নেমেছেন চাষিরা। এরই মধ্যে কুতুবদিয়া উপজেলার মাঠ থেকে মৌসুমের প্রথম দফার লবণ উঠেছে। আশা করি ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে পুরো অঞ্চলে লবণ উৎপাদন পুরোদমে শুরু হবে, তাতে লবণের কোনো ধরনের ঘাটতি থাকবে না।
বাংলাদেশ লবণ চাষি সমিতির সভাপতি এডভোকেট শহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, লবণ আমদানি চক্র সুকৌশলে সোডিয়াম সালফেট (মিল-কারখানায় ব্যবহৃত লবণ) নাম দিয়ে দেশে অহরহ নিয়ে আসছে সোডিয়াম ক্লোরাইড তথা খাদ্য লবণ। এসব লবণ তারা চীন থেকে আমদানি করে সরাসরি বাজারজাত করছে। আমরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমদানিনির্ভর কিছু লবণ মিল মালিক সবসময়ই লবণ আমদানির জন্য অনুমতি পেয়ে থাকেন। তারা চান দেশীয় লবণ শিল্প চিরতরে বন্ধ হয়ে যাক।
এ বছরও বিদেশ থেকে লবণ আমদানির পাঁয়তারা চলছে অভিযোগ করে বাংলাদেশ লবণ চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, অন্যবারের তুলনায় এ বছর প্রাকৃতিক পরিবেশ ভালো থাকায় এক মাস আগে থেবে লবণ চাষে নেমেছেন চাষিরা। এরই মধ্যে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির জন্য অনুমতি দিচ্ছে সরকার- এ ধরনের খবরে চাষিদের মাঝে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। তার মতে, দেশের লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে বিদেশ থেকে আমদানির জন্য প্রতিবছর সরকারকে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হবে। এতে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হবে। আশা করি সরকার বিদেশ থেকে লবণ আমদানির মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়