কেন্দ্রীয় ব্যাংক : ব্যাংকগুলোতে জনগণের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে

আগের সংবাদ

মাদকের টাকায় অস্ত্রের মজুত : মিয়ানমার সীমান্তে বেপরোয়া আরসা, আল ইয়াকিন > রোহিঙ্গা শিবিরে অস্থিরতার পেছনেও এরাই

পরের সংবাদ

মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী : তিন কারণে সংকটের শঙ্কা কাটিয়ে উঠতে ছয় পরামর্শ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : তিন কারণে ২০২৩ সালে বাংলাদেশসহ বিশ্বে সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি সবাইকে তা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে ৬টি পরামর্শও দেন সরকারপ্রধান। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই নির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, রিজার্ভ কমে যাওয়া, কোভিডপরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চীনে উৎপাদন কমায় ২০২৩ সালে সংকট হবে। সভায় চিড়িয়াখানা আইন ও বাংলাদেশ ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড আইনেরও অনুমোদন দেয়া হয়। পাশাপাশি খাসজমি চিহ্নিত করা নিয়ে দেশজুড়ে যে গুজবের কথা উঠেছে সেটিরও খণ্ডন করা হয় মন্ত্রিসভায়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সংকট কাটাতে ছয় পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হলো- খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো, বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানো, রেমিট্যান্স বাড়ানোর উদোগ নেয়া, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো, খাদ্য মজুত ঠিক রাখা এবং খাদ্য আমদানিতে উৎসে কর বাদ দিয়ে আমদানিকারককে স্বস্তি দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণ জানাতে গিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রথমত, খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারণ, যতই খাদ্যের আমদানির কথা বলা হোক না কেন, সমস্যাটি থাকবেই। যদিও রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার যেহেতু সংকট হচ্ছে, ফেডারেল রিজার্ভের হার বেড়ে যাওয়ার ফলে যেসব দেশ ঋণ নিয়ে কাজ করে বা যাদের আমদানি বেশি, তাদের দুই দিক থেকেই অসুবিধা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো যখন টাকা দেয়া হচ্ছে, তখন বেশি দিতে হচ্ছে, আবার যখন নেয়া হচ্ছে, তখন কম পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য সবাইকে খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে এবং এর সম্ভাবনাও আছে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয়ত, বিদেশে যেন অদক্ষ শ্রমিক না পাঠিয়ে দক্ষ শ্রমিক পাঠানো হয়। তাতে উচ্চ বেতনে কাজ করা সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্ট দেশের চাহিদা অনুসরণ করে যেন এই সুযোগ বাড়ানো হয়। আর দক্ষতার সনদের ক্ষেত্রে যেন যথাযথ প্রতিষ্ঠানের সনদ দেয়া হয়। তৃতীয়ত, প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) বাড়ানোর জন্য কিছু কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি পরিপত্র দিয়েছে বা না দিলে দেবে- এখন আর রেমিট্যান্স পাঠাতে আলাদা ফি দিতে হবে না। যে ব্যাংকে পাঠাবে, সেই ব্যাংকই বিষয়টি দেখবে। আরো কিছু ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চতুর্থত, বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ জন্য বিনিয়োগের যেসব শর্ত আছে, সেগুলোকে আরেকটু নমনীয় করা যায় কিনা, সেটি দেখতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কয়েকবার বসা হয়েছে এবং কাজ চলছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষেই (বিডা) কয়েকটি শাখা থাকবে। যেমন লাইসেন্সের জন্য যেন পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনে যেতে না হয়। এ ছাড়া খাদ্য মজুতের বিষয়টি সব সময় ভালো অবস্থায় রাখার বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বর্তমানে খাদ্যের মজুত পরিস্থিতি খুবই ভালো অবস্থায় আছে। বেসরকারি খাতকে প্রায় ১৫ লাখ টন খাদ্য আমদানি করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে উৎস কর জাতীয় কিছু করের বিষয়ে নমনীয় হওয়ার বিষয়েও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এনবিআর আলাপ-আলোচনা করে অবিলম্বে যেন সন্তোষজনক বিধান চালু করে।
জমি অনাবাদি থাকলেই খাস করার বিধান নেই : ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকা জমি অনাবাদি থাকলেই তা খাস জমি বলে ঘোষণা করা হবে না বলে নিশ্চিত করেছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এটি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, স¤প্রতি বেশ কিছু জায়গায় একটা বড় গুজব চলছে, যেসব জমিতে চাষ করা হবে না সেগুলো খাস হয়ে যাবে। আমরা স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি, কারও জমি চাষ করল না আর আমি খাস করব, এ রকম কোনো পদ্ধতি নেই। খাস করার একটা আলাদা পদ্ধতি রয়েছে। কোনো জমি খাস করার দরকার হলে প্রয়োজনীয় সব ধরনের নিয়ম মেনে করতে হবে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পতিত জমিতে লাল পতাকা টানানো হয়েছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর্মকর্তারা সেখানকার বাসিন্দাদের বলেছেন, পর পর তিন বছর জমি পতিত থাকলে সেই জমি সরকার খাস ঘোষণা করতে পারে। তাই সবাই যেন জমি চাষ করেন। সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জান চৌধুরী বলেন, স¤প্রতি সব অনাবাদি জমিতে চাষাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কৃষিজমি তিন বছরের বেশি সময় অনাবাদি ফেলে রাখলে সেসব জমি সরকার আয়ত্তে নেয়ার বিধান রয়েছে। তবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জমিতে চাষ না করলে এটা খাস করে ফেলব, এই রকম কোনো নিয়ম নেই। একটা গুজব চারদিকে ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি দুই এক জায়গায় কোথাও কেউ করেও থাকে, তাহলে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়ে দেয়া হয়েছে; যেন কেউ এই ধরনের কোনো ব্যবস্থা না নেয়। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি কেউ চাষ করল না এক বছর, দুই বছর বা তিন বছর, এতে খাস করার কোনো ব্যবস্থা নেই, এটা একটা গুজব। এটা সবাইকে একটু জানাতে হবে- আবার বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়