কাগজ প্রতিবেদক : বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক খাত থেকে গত অক্টোবর মাসে সরকারের ঋণ বেড়েছে ৫ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। এ নিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাস (জুলাই-অক্টোবর) শেষে সরকারের ব্যাংক খাত থেকে ঋণ বেড়েছে মোট ১৮ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবর মাস শেষে সরকারের ব্যাংক খাত থেকে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। তবে গত সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে এই খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ কমেছে। সেপ্টেম্বরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। এই মাস শেষে ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ৮২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর অক্টোবর শেষে সরকার এই টার্গেটের ১৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ঋণ নিয়েছে এই খাত থেকে। গত ১ বছরে সরকারের ব্যাংক খাতে নেয়া ঋণের ৮৪ শতাংশই নেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে থেকে। বাকি ১৬ শতাংশ এসেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে- ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে গত ১ বছরে সরকার ব্যাংক খাত থেকে মোট ঋণ নিয়েছে ৭৬ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। যার মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৬৪ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা এবং অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিয়েছে ১২ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা বলছেন- সরকার ঘাটতি বাজেট মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। ঋণের অধিকাংশই বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটে ব্যয় হয়। এ ব্যাপারে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান- এমনিতেই ব্যাংক খাতে এখন তারল্য সংকট চলছে। এর মধ্যে সরকারের এই ঋণে চাপ আরো বাড়বে। সরকারের উচিত বড় বড় মেগা প্রকল্প যেখানে মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ হয়, এমন সব প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ রাখা। অবশ্যই আমাদের এখন ব্যয় সংকোচনে যেতে হবে।
এদিকে চলতি অর্থবছরে নন-ব্যাংকিং খাত থেকে ৪০,০০১ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে- এই খাত থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ঋণ নেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা।
এছাড়া চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৩০ কোটি টাকা, যা অর্থবছরের ৩৫ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশেরও কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ২১ হাজার ৫১১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে এবং আগের ঋণের ২১ হাজার ১৮০ কোটি টাকা শোধ করেছে।
সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়ানো নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন- এই খাতে সরকারের সুদের হার বাড়ানো উচিত। মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা কারণে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ডিপোজিট এখন অনেক কমে গেছে। সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বাড়ানো হলে জনগণ এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে। এতে ব্যাংক খাতের ওপর সরকারের ঋণ নির্ভরতাও কমে আসবে।