কেন্দ্রীয় ব্যাংক : ব্যাংকগুলোতে জনগণের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে

আগের সংবাদ

মাদকের টাকায় অস্ত্রের মজুত : মিয়ানমার সীমান্তে বেপরোয়া আরসা, আল ইয়াকিন > রোহিঙ্গা শিবিরে অস্থিরতার পেছনেও এরাই

পরের সংবাদ

পরশের মৃত্যুর কারণ নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যু নিয়ে নানা বিষয় চাউর হলেও এখনো প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে পারেনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ফলে এখনো ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে মেধাবী এই শিক্ষার্থীর মৃত্যু। যদিও এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য নিয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এ বিষয়ে মামলা হওয়ার পর নানা অপরাধ ও মাদকের আখড়া হিসেবে পরিচিত চনপাড়া এলাকার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসায় সেখানকার অপকর্মে নেতৃত্ব দেয়া কয়েকজনকে এরই মধ্যে

হেফাজতে নিলেও এই বিষয়টি পরিষ্কার করেনি তদন্ত সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনস অডিটরিয়ামে নৌ-পুলিশের নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন হত্যার বিষয়ে আমরা এখনো অকাট্য প্রমাণসহ তথ্য পাইনি। তেমন তথ্য পেলে ঘোষণা করা হবে। আমরা সব সময় তথ্যভিত্তিক কথা বলি। ফারদিনের মাদকসংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে পারছি না।
এদিকে ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা তার ছেলে মাদকের আশপাশেও নেই বলে দাবি করেন। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির বাগানে আবেগতাড়িত কণ্ঠে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আমার ছেলের বয়স আজ (গতকাল) ২৩ বছর ৫ মাস ১০ দিন। কখনো সে আমাকে ও তার মাকে না বলে কিছু করেনি। স্বল্পভাষী আমার ছেলেটি সিগারেটের ধোঁয়াও নিতে পারত না। অথচ তার মৃত্যুর কারণ মাদক বলা হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এখন পর্যন্ত হত্যার মোটিভ পরিষ্কার করতে পারেনি।
তিনি আরো বলেন, আমার ছেলে রামপুরায় বান্ধবীকে নামিয়ে দিয়ে হলে যাবে। যেহেতু তার পরীক্ষা ছিল। রাতে ক্ষুধা পেলে তার নীলক্ষেত যাওয়ার কথা, চনপাড়ায় না। আমার ছেলের লাশ মিলল শীতলক্ষ্যায়। ফারদিন লেখাপড়ার বিষয়ে প্রজেক্টের কাজে সেখানে গেলেও ওই রাতে নিজের ইচ্ছায় যায়নি দাবি করে তিনি কেঁদে ওঠেন।
এর আগে গতকাল বেলা ১১টার দিকে বুয়েট ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার চত্বরে ফারদিন নূর পরশ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানেও ফারদিনের বাবা একই বিষয় তুলে ধরে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের কলম একজন মৃত ব্যক্তির সঠিক বিচার পাওয়ার বিষয় ও তার চরিত্র তুলে ধরে। আপনারা যখন কলম ধরবেন, তখন হৃদয় দিয়ে ধরবেন, মস্তিষ্ক খাঁটিয়ে ধরবেন। মৃতব্যক্তির প্রতি অন্যায় করলে কিন্তু তার থেকে ক্ষমা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন কিছু করবেন না যা তার চরিত্রের ওপর আঘাত করে।
মানববন্ধনে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা লিখিত বিবৃতিতে বলেন, ফারদিন নূর পরশের মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমরা শোকস্তব্ধ ও ক্ষুব্ধ। এরই মধ্যে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের ৭ দিন অতিবাহিত হয়েছে। প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় এখন পর্যন্ত প্রকৃত হত্যাকারী চিহ্নিত হয়নি ও হত্যার কারণ এখনো উদ্ঘাটিত হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের ওপর আমরা আস্থাশীল। আমরা বিশ্বাস করি, তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাবেন ও দ্রুততম সময়ে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দুঃখজনকভাবে গত কয়েকদিন কিছু গণমাধ্যমে ফারদিনকে নিয়ে কিছু আপত্তিকর ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রচারিত হয়েছে যা আমাদের হতাশ করেছে। বুয়েট সাংবাদিক সমিতির মাধ্যমে এরই মধ্যে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি ও সত্য তুলে ধরেছি। আমরা আশা করব ভবিষ্যতে গণমাধ্যমগুলো সংবাদ প্রকাশে সতর্ক হবে। পাশাপাশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের মাধ্যমে যারা ফারদিন হত্যাকাণ্ডের বিষয় নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করছেন তাদের আমরা ধন্যবাদ জানাই। আমরা প্রত্যাশা করি ভবিষ্যতেও আপনারা ফারদিন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে আমাদের পাশে থেকে সাহায্য করবেন।
ফারদিন হত্যামামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা ডিএমপির ডিবি মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, এ ঘটনায় নানা বিষয় এলেও মৃত্যুর কারণ নিয়ে পরিষ্কার হওয়া যায়নি। আমরা সব কিছু মাথায় রেখেই তদন্ত করছি। অনেক কিছুই আমরা একটি ‘ডট’-এ মিলানোর জন্য কাজ করছি। রহস্য উদঘাটনে আমরা নিরালসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
৩ দিন নিখোঁজ থাকার পর গত ৭ নভেম্বর বিকালে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। মরদেহ ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ৪ নভেম্বর রাতে নিখোঁজ হওয়ার আগে রামপুরায় বান্ধবী বুশরাকে বাসায় নামিয়ে দেন ফারদিন। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় ৯ নভেম্বর রাতে ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে এজাহারনামীয় ও আরো কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন। মামলার অভিযোগে তিনি বলেন, বুশরার ইন্ধনে পরশকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ১০ নভেম্বর সকালে রাজধানীর রামপুরা এলাকার একটি বাসা থেকে আমাতুল্লাহ বুশরাকে গ্রেপ্তার করে তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি। আজ মঙ্গলবার বুশরার রিমান্ডের শেষ দিন। জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা মেলেনি এখনো।
ফারদিন হত্যা মামলার ছায়া তদন্ত করছে র‌্যাব। চনপাড়া বিষয়টি আলোচনায় আসায় সেখানে মাদকসংশ্লিষ্ট রায়হান, মনির, উজ্জ্বল ও শাহজামাল নামে ৪ জনকে তারা আটক করেছে বলে জানা গেছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে র‌্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ফারদিন আসলে কীভাবে মারা গেল বা তার লাশ নদীতে পাওয়া গেল তা এখনো জানা যায়নি। তদন্তের প্রয়োজনে অনেককে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তবে কাউকে আটক করা হয়নি।
একটি সূত্রে জানা গেছে, চনপাড়া মাদক ও অপরাধ কর্মকণ্ডে জড়িত মাল্টা মনির, কাইল্লা রনি, পলাশ, সোহাগ, শাহীন ও ফেন্সি রুবেলের নাম উঠে আসায় তাদের বিষয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারি বাড়িয়েছে। তারা কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত সিটি শাহীনের সহযোগী বলে জানা গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়