কেন্দ্রীয় ব্যাংক : ব্যাংকগুলোতে জনগণের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে

আগের সংবাদ

মাদকের টাকায় অস্ত্রের মজুত : মিয়ানমার সীমান্তে বেপরোয়া আরসা, আল ইয়াকিন > রোহিঙ্গা শিবিরে অস্থিরতার পেছনেও এরাই

পরের সংবাদ

ঢাকা আসছেন আসামের ৩৭ বিধায়ক : উদ্দেশ্য উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধি > বৈঠক হবে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য : ঢাকা সফরে আসছেন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের ৩৭ জন বিধায়ক। আসাম বিধানসভার স্পিকার বিশ্বজিৎ দৈমারির নেতৃত্বে আগামী রবিবার (১৯ নভেম্বর) আগরতলা হয়ে বাংলাদেশে আসবে ওই প্রতিনিধিদলটি। এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় আসাম।
জানতে চাইলে আসামের বিধায়ক করিম উদ্দিন বড় ভূঁইয়া গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, ১৮ নভেম্বর আসাম থেকে যাত্রা শুরু করে আগরতলায় এসে তারা রাত্রিযাপন করবেন। সেখান থেকে পরদিন ১৯ নভেম্বর বাসে করে ওই প্রতিনিধিদলটি ঢাকা আসবে। ২০ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। ২১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা। এসব বৈঠকে আসামের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসাবাণিজ্যসহ বেকার সমস্যা, সীমান্ত ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। পরে ওই প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশের কয়েকটি শিল্পকারখানাও ঘুরে দেখবে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আসামের বিধায়কদের সফরের কথা নিশ্চিত করে ভোরের কাগজকে বলেন, তারা আসছেন। আসামের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসাবাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হবে। তাদের সম্মানে নৈশভোজও দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিশেষ সফরে বাংলাদেশ আসা বিধায়কদের মধ্যে রয়েছেন- উৎপল বরা, অজয় রায়, বিজয় মালাকার, শিবু মিশ্র, দীপায়ন চক্রবর্তী, রূপজ্যোতি কূর্মি, বিশ্বজিৎ ফুকন, রূপেশ গোয়ালা, বিরোধী দলীয়নেতা দেবব্রত শাইকিয়া, বিরোধী উপদলীয়নেতা রকিবুল হোসেন, বিধায়ক ওয়াজেদ আলি চৌধুরী, কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, রেকিবুদ্দিন আহমেদ, বসন্ত দাস, শিবমনি বরা, আব্দুর রশিদ মণ্ডল, আছিফ মহম্মদ নাজার, প্রদীপ সরকার, দিগন্ত বর্মণ, আফতাব উদ্দিন, খলিল উদ্দিন মজুমদার, মিসবাহুল ইসলাম লষ্কর, রমেন্দ্রনারায়ণ কলিতা, ভবেন্দ্র নাথ ভরালি, পতœী স্বর্ণলতা দাস, মনোরঞ্জন দাস, অখিল গগৈ, আমিনুল ইসলাম, করিমউদ্দিন বড় ভূঁইয়া, রফিকুল ইসলাম, সুজামউদ্দিন লষ্কর, আশ্রাফুল হোসেন, নিজামউদ্দিন চৌধুরী, গোবিন্দ বসুমাতারি, জলেন দৈমারি, জয়ন্ত বসুমাতারি ও লরেন্স ইসলারি। এদের সঙ্গে বিধানসভা সচিবালয়ের বহু কর্মকর্তা থাকবেন। এছাড়া আসবে

দুটো সাংস্কৃতিক দলও।
বিধায়কদের সফরকে স্বাগত জানিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, এই সফরটি অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত। বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের রাজ্যগুলোর প্রতিনিধির আসাযাওয়ার কারণে যে সম্পর্ক গড়ে উঠে তা আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য উপকারী। তিনি বলেন, যে ৩৭ বিধায়ক ঢাকা সফর করবেন তারা নিশ্চয়ই আসামে ফিরে গিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বলবেন না। এতে বাংলাদেশের লাভ হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের সংসদ সদস্যদেরও ভারতের বাংলাদেশ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে সফরে যাওয়া উচিত। এতে ব্যবসাবাণিজ্যসহ নানা সম্পর্ক গড়ে উঠে। যা অত্যন্ত ইতিবাচক।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আসামের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়াতে বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ চলছে। সেখানকার বিধানসভার প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফর ছাড়াও সিলেট-শিলচর উৎসবের মধ্য দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন দুয়ার খুলতে যাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই লাভবান হবে। গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে আসামের শিলচরে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে আগামী মাসে নেয়া গেছে। এতে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের একাধিক মন্ত্রী ছাড়াও আসাম, মনিপুর এবং মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন। থাকবেন সংসদ সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। ওই উৎসবের ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার সংযোগ আরো বাড়বে। গতি আসবে ব্যবসা ও বিনিয়োগে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নয়াদিল্লি সফরে গিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান। এখন পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীদের ঢাকা সফর না হলেও সিলেট-শিলচর উৎসব এবং আসাম বিধানসভার ৩৭ বিধায়কের ঢাকা সফরের মাধ্যমে সম্পর্কের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যের মধ্যে রয়েছে- আসাম, মেঘালয়, মনিপুর, ত্রিপুরা, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল প্রদেশ। এর মধ্যে আসাম, মেঘালয়ের সঙ্গে বৃহত্তর সিলেট বিভাগের বড় সীমান্ত রয়েছে। ১৯৪৭ সালের আগে আসাম-সিলেট একসঙ্গেই ছিল। দেশভাগের পর শহর দুটি আলাদা হয়ে যায়। হাসিনা ও মোদি সরকার এই শহর দুটির মধ্যে নতুন করে সংযোগ বাড়ানোসহ ব্যবসা ও বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে চাইছে।
সূত্র বলছে, বর্তমান সরকারের কিছু পদক্ষেপের কারণে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো বেশ স্বস্তিতে রয়েছে। ভারতের তরফ থেকে তা স্বীকারও করা হচ্ছে। গত জুন মাসে আসামের রাজধানী গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত নদী সম্মেলনের ফাঁকে এক বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে আসামের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্বশর্মা সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র প্রশংসা করে বলেছেন, এই অঞ্চলের সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর ফলে উত্তরপূর্ব ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। এর আগে, ভারতীয় এনএসজির (ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড) সাবেক মহাপরিচালক জয়ন্ত নারায়ণ চৌধুরী বলেছেন, ভারত তার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে যে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হয়েছিল তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ, জটিল এবং বিস্তৃত সম্পর্ক এবং অংশীদারিত্ব রয়েছে। এই অংশীদারিত্বের অন্যতম অংশীদার আসাম। ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বৃহত্তম রাজ্য আসাম এবং বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ২৬৩ কিলোমিটার নদী এবং স্থল সীমান্ত রয়েছে। আয়তন, জনসংখ্যা এবং অবস্থান বিবেচনায় বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্য দুই পক্ষেই একে অন্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর ২০২০ সালের মে মাসে যখন ঢাকা সফর করেন, তখন শেখ হাসিনা ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দেন। কিন্তু ভারত এখনো পুরোদস্তুর ব্যবহার শুরু করেনি। এটা শুরু হলে বাংলাদেশ এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংযোগে ব্যাপকতা আসবে। দুই দেশের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের সিংহভাগই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত। বাণিজ্যিক কার্যক্রমের দিক থেকে ভারতের এই বাংলাভাষী অঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের আলাদা টান রয়েছে। ঠিক একইভাবে যদি বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও বাণিজ্যের উন্নতি ঘটে, তাহলে পুরো অঞ্চলের চিত্র পাল্টে যাবে।
এদিকে, নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের মধ্যে যৌথ উদ্যোগে, বাংলাদেশ ও ভারত আসামের নুমালিগড় থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত ডিজেল পাইপলাইন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে পার্বতীপুরে ওয়াগনে করে ডিজেল আসছে। সবমিলিয়ে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বোঝাপড়ায় বাংলাদেশ ও আসামের মধ্যে উন্নত যোগাযোগ ও বাণিজ্য সম্পর্ক করলে দুই দেশই লাভবান হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সিলেট থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামে পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর সম্ভাবনাও প্রচুর।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়