কেন্দ্রীয় ব্যাংক : ব্যাংকগুলোতে জনগণের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে

আগের সংবাদ

মাদকের টাকায় অস্ত্রের মজুত : মিয়ানমার সীমান্তে বেপরোয়া আরসা, আল ইয়াকিন > রোহিঙ্গা শিবিরে অস্থিরতার পেছনেও এরাই

পরের সংবাদ

আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস : দোকানপাট তুলে দেয়ায় বেপরোয়া দালালচক্র!

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আছাদুজ্জামান : রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সামনের ফুটপাতে থাকা ল্যাপটপ ও টেবিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় উচ্ছেদ করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একের পর এক হুমকি দিচ্ছে সংঘবদ্ধ দালাল চক্র। মূলত এখানে আসা আবেদনকারীদের হয়রানি ও প্রতারণা বন্ধ এবং গ্রাহকদের নির্বিঘেœ সেবা দিতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস (আরপিও)। এখানে নিয়মিত অভিযানের পরও দালালমুক্ত করা যাচ্ছে না। বরং তাদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে দালাল চক্রের সদস্যদের আটক করে আদালতে পাঠালেও জামিনে মুক্ত হয়ে তারা ফের একই কাজ করছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, তাদের কথামতো কাজ না করলে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। কার্যত তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সরকারি এই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অফিসের চারপাশে এদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। ল্যাপটপ নিয়ে অর্ধশতাধিক দালাল দিনভর ঘুরে বেড়ায়। তারা লোকজনকে প্রলোভন দেখিয়ে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। তাদের এই অপরাধের দায়ভার এসে পড়ছে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর।
জানা গেছে, দালালদের মধ্যে কথিত সাংবাদিক, বর্তমানে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় অনৈতিক সুবিধাভোগী জিয়া পরিষদ খুলনা শাখার সভাপতি প্রতারক সৈয়দ আফজাল বাকের, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের পাসপোর্ট অফিসের বিপরীতে পাকা মার্কেটের দোকানদার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে, রবিউল ইসলাম, পটুয়াখালীর সেলিম, লতিফ, খোন্দকার শহিদুল ইসলাম, নুরু, আনসার সদস্য আশরাফুল ইসলাম, মামুন, জসিম, মিজান, রাশি, সুইপার স্বজল, অনিল, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বিল্লাল, আনসার জসিম, সচিবের স্বাক্ষর নকলকারী মজিবর, মুকসুদপুরের আদমের ছেলে সোহেল, পাসপোর্ট অফিসে আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত সাগর, কামাল, সিপন সিন্ডিকেট গড়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অফিসে তারা অবাধ বিচরণের কারণে সেবাপ্রার্থীরা গিয়েই ফাঁদে পড়ছে। তারিখ ছাড়া পাসপোর্ট করতে ৪ হাজার টাকা দিলে লাইন ছাড়া আবেদন জমা দেয়া যাবে বলে হাঁকডাক করেন দালাল হুমায়ুন। তার মতো আরো কয়েকজনের ব্যস্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, যেন তারা অফিসের হর্তাকর্তা। সরজমিন গিয়ে এ চক্রটির বিরুদ্ধে পাসপোর্ট করতে আসা অনেক গ্রাহকদের বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি তারা আবেদনকারীদের পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ, ব্যাংকে টাকা জমা ও বায়োএনরোলমেন্ট করিয়ে দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে তাদের হেনস্থা করে তাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র বলছে, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাব হোসেন। তার নাম জঁপতে জঁপতে দালাল সেলিম ঢুকে পড়েন পাসপোর্ট অধিদপ্তরে। এরপর শুরু তার পাসপোর্টের দালালি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে রাতারাতি বোল পাল্টে ক্ষমতাসীন দলে মিশে গিয়ে চতুর এই পেশাদার দালাল দোর্দণ্ড প্রতাপে চালিয়ে যাচ্ছে তার অপকর্ম। অত্যন্ত কৌশলী এই দালাল সেলিম তার কাজ হাসিলের জন্য বিএনপি-জামায়াত ঘেঁষা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তার সাবেক পরিচয় দিয়ে স্বার্থ হাসিল করে নেয়। একটি সূত্র বলছে, পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা দিতে না চাইলে আবার বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের দেখে নেবেন বলে ভয়ভীতি দেখান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপরদিকে পুলিশের চাকরিচ্যুত আকবরও একই পথের পথিক। তার তৎপরতায় সবাই জিম্মি হয়ে পড়েছে।
দালাল চক্রের পাসপোর্ট আবেদনকারীদের হয়রানি বন্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস আগারগাঁয়ের পরিচালক আব্দুল্লাহ্ আল মামুন ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা পাসপোর্ট গ্রাহকদের হয়রানি বন্ধে কাজ করছি। অফিসের সামনের ফুটপাত থেকে দালালদের ল্যাপটপ ও টেবিল তুলে দিয়েছি। যাতে আমাদের অফিসে এসে তারা নির্বিঘেœ সেবা নিতে পারেন। তিনি আরো বলেন, এখানকার সংঘবদ্ধ দালাল চক্র নানাভাবে আমাকে ও আমার অফিসের অনেককেই দেখে নেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। তবে আমরা এসব হুমকিকে তোয়াক্কা না করে জনহয়রানি বন্ধে কাজ করছি এবং করে যাব বলে জানান এ কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়