সরকার ৬৭ লাখ তরুণ-তরুণীকে আয়বর্ধক পেশায় প্রশিক্ষণ দিয়েছে

আগের সংবাদ

১০ ডিসেম্বর কী হবে ঢাকায়? বিএনপির সমাবেশ ঘিরে উত্তাপ বাড়িয়েছে আমানের আল্টিমেটাম > রাজপথে মোকাবিলা করবে আ.লীগ

পরের সংবাদ

হাতিয়া গণহত্যা দিবস আজ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তৈয়বুর রহমান, কুড়িগ্রাম থেকে : হাতিয়া গণহত্যা দিবস আজ ১৩ নভেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা সদরের পূর্বদিকে প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদ দাঁগার কুঠি গ্রামে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায় পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ওই সময়ের নৃশংসতম এ ঘটনায় নিরীহ শিশু, বৃদ্ধ, নারীসহ প্রায় ৬৯৭ জন প্রাণ হারান। এদেশীয় দালাল রাজাকার বাহিনীর উসকানিতে বৃষ্টির মতো চালানো গুলিবর্ষণে ঐদিন ভোররাতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। উলিপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পূর্বদিকে ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী হাতিয়া ইউনিয়নে অবস্থান ছিল দাঁগার কুঠি গ্রামের। ব্রহ্মপুত্র নদের ভয়াবহ ভাঙনে ঐতিহাসিক ওই গ্রামটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এ অঞ্চলে এটি ছিল হানাদার বাহিনীর গণহত্যার উল্লেখযোগ্য ঘটনা। পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরোচিত ও জঘন্যতম এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা জাতীয় পর্যায়ে তেমন গুরুত্ব না পেলেও উলিপুরের মুক্তিকামী মানুষের কাছে তা স্মরণীয় হয়ে আছে।
হাতিয়া ইউনিয়নের দাঁগার কুঠি গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠদের বর্ণনা অনুযায়ী, সেদিন ছিল ১৯৭১ সালের ২৩ রমজান শনিবার। যখন ফজরের আজানের ধ্বনি বিভিন্ন মসজিদ হতে আসছিল। আবার কোথাও কোথাও নামাজের প্রস্ততি চলছিল। ঠিক ঐ সময় ঘাতকদের মুহুর্মুহু মর্টারের শব্দে যেন সব কিছুই স্তব্ধ হয়ে যায়। পরক্ষণেই ঘটনাস্থলের আশেপাশের এলাকার মানুষের প্রাণভয়ে এলোপাতাড়ি দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। এসময় দিশেহারা মানুষের আর্তচিৎকারে এলাকাটিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতাড়না হয়।
প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই ব্রহ্মপুত্র নদে ঝাঁপ দেয়। কিন্তু অসহায় এসব নিরস্ত্র মানুষের জীবন রক্ষার শেষ চেষ্টাটুকুও মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের এদেশীয় দালাল রাজাকার, আল-বদর ও আল-সামস বাহিনীর সহযোগিতায় গ্রামটি ভোরবেলা ঘিরে ফেলে। এরপর পাকিস্তানি বাহিনী রাজাকারের সহযোগিতায় প্রাণভয়ে আত্মগোপনে থাকা গ্রামের অসহায় মানুষকে একে একে ধরে এনে দাঁগার কুঠিতে জড়ো করে হাত-পা বেঁধে নানা রকম নির্যাতনের পর নিষ্ঠুরভাবে গুলি করে হত্যা করে। তাদের এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ থেকে সেদিন গ্রামটির আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা এমনকি মায়ের কোলে ঘুমিয়ে থাকা শিশুও রক্ষা পায়নি।

ঐদিন পাক-হানাদার বাহিনী দিনভর হত্যাযজ্ঞ ও অগ্নিসংযোগ চালায় গ্রামটির পাড়া-মহল্লাগুলোতে। তাদের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়, হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর, দাঁগার কুঠি, হাতিয়া বকসি, রামখানা ও নয়াদাড়া গ্রামের শত শত ঘরবাড়ি। এসব গ্রাম মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। সেই বিভীষিকাময় দিনটির কথা মানুষের মনে হলে আজও তারা শিউরে ওঠে। দাঁগার কুঠি গ্রামের শহীদদের স্মরণে বর্তমানে অনন্তপুর বাজারের পাশেই তৈরি করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রতি বছর দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়