সরকার ৬৭ লাখ তরুণ-তরুণীকে আয়বর্ধক পেশায় প্রশিক্ষণ দিয়েছে

আগের সংবাদ

১০ ডিসেম্বর কী হবে ঢাকায়? বিএনপির সমাবেশ ঘিরে উত্তাপ বাড়িয়েছে আমানের আল্টিমেটাম > রাজপথে মোকাবিলা করবে আ.লীগ

পরের সংবাদ

শীতে শিশুকে ভালো রাখুন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চারদিকে শীতের বাতাস বইতে শুরু করেছে। একই সাথে শীত মানেই অদৃশ্য ফ্লুর মৌসুমও।এসময় শিশুরা গলাব্যথা, জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ত্বকের সমস্যাসহ নানাভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আবহাওয়া শুষ্ক ও ধুলাবালি থাকার কারণেই মূলত শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হয়। তাই শীতে প্রয়োজন হয় বাড়তি যতেœর। পাশাপাশি বিশেষ প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে নিবেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবাও।

ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখুন
আপনার বাড়িতে, বিশেষত আপনার শিশুর ঘরটিতে গরম তাপমাত্রা বজায় রাখুন। শীতের শুরু থেকেই, শীতল বাতাস সমস্ত দিক থেকে বয়ে আসার আগে হিটার, হিউমিডিফায়ার এবং গিজারের মতো সমস্ত গরম করার সরঞ্জামগুলি যে কার্যকরী অবস্থায় রয়েছে তা নিশ্চিত হয়ে নিন। আপনি যদি আপনার শিশুর ঘরে হিটার ব্যবহার করেন তবে ঘরের তাপমাত্রা তার পক্ষে স্বাচ্ছন্দ্যজনক কিনা তা পরীক্ষা করে দেখুন এটি খুব বেশি গরম হওয়া উচিত না।এছাড়াও, আপনার শিশুর ঘরটিকে বায়ুচলাচল উপযুক্ত রাখুন।

নিয়মিত গোসল অবশ্যই
শিশুদের ঠান্ডা বাতাস এবং ধুলাবালু থেকে দূরে রাখতে হবে। যেহেতু শীতে এ রোগগুলো বেশি দেখা দেয়, তাই যতটা সম্ভব শিশুদের জনসমাগমপূর্ণ জায়গায় কম নেওয়াই ভালো। শিশুদের গামছা, রুমাল, তোয়ালে প্রভৃতি আলাদা হওয়া উচিত এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সময় শিশুদের দূরে রাখা উচিত। শীতেও শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। তবে গোসলের সময় শরীরের কাছাকাছি তাপমাত্রার হালকা গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। অনেকেই শিশুকে জবজবে করে শর্ষের তেল মাখিয়ে গোসল করিয়ে থাকেন। এতে গোসল শেষেও শিশুর চুল ভেজা থাকে এবং ঠান্ডা লাগে।

নাক বন্ধে করণীয়
ঠাণ্ডা লাগার পর শিশুর প্রথম কষ্ট শুরু হয় নাক বন্ধ দিয়ে। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণ স্যালাইন নাকের ড্রপ দিয়ে নাক পরিষ্কার রাখতে হবে। বাজারে বিভিন্ন নামে পাওয়া সাধারণ স্যালাইন ন্যাজাল ড্রপ দিন ও রাতের যেকোনো সময় যতবার প্রয়োজন দেওয়া যায়, এমনকি নবজাতকের ক্ষেত্রেও এটি নিরাপদ। এসময় শিশুদের হঠাৎই শরীরের ভেতর-বাইরেও দেখা দেয়া নানা সমস্যা। বিশেষ করে আপনার সোনামনিকে সুস্থ রাখতে হলে প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা, বাড়তি যতেœর। হয়তো এসব ব্যাপারে আত্মীয়-স্বজন বা বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে আমরা অনেক পরামর্শ পেয়ে থাকি। কিন্তু সবক্ষেত্রে সব পরামর্শ সঠিক নাও হতে পারে। আর এতেই দেখা দিতে পারে বিপত্তি। তাইতো এক্ষেত্রে শিশু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মানাটাই নিরাপদ।

দুশ্চিন্তা নয় সর্দি-কাশিতে
সাধারণ সর্দি-কাশি ভেবে ক্রমাগত কফ সিরাপ খাওয়াতে যাবেন না এতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যাবার সম্ভবনা থাকে। কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত যেকোনো কফ সিরাপ শিশুকে খাওয়ানো যাবে না। তাই জটিল আকার ধারণ করার আগেই চিকিৎসককে দিয়ে শিশুর বুক পরীক্ষা করিয়ে নিন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, এক বছরের নিচে কোনোভাবেই শিশুকে মধু খাওয়ানো যাবে না। এর চেয়ে বেশি বয়সী শিশুদের দেওয়া যেতে পারে। কফকে পাতলা করায় বিশুদ্ধ মধুর মতো প্রাকৃতিক ওষুধের জুড়ি নেই। তবে সারা দিনে কখনোই ১০ মিলি বা দুই চামচের ওপর নয়। সারা দিনে আদা, লবঙ্গ, দারচিনি, তুলসীমিশ্রিত গরম পানিতে অল্প লেবু মিশিয়ে দুই-তিনবার খাওয়ালে আপনার শিশুটির কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে। ।ঠাণ্ডা কাশি লাগলে প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের ওপরের বয়সী শিশুদের (যারা বুকের দুধ ছাড়া অন্য খাবার শুরু করেছে) বারবার কুসুম গরম পানি খাওয়ানো যেতে পারে। দুই বছরের নিচে সব শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

জ্বরে যেকোন ঔষুধ নয়
শীতকালীন খাবারগুলো শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং এই সময়ের মৌসুমি সবজি ও ফল শিশুদের খাওয়াতে ভুলবেন না। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া শরীরের শুষ্কতা, পানিশূন্যতা, চর্মরোগসহ আরো অনেক ধরনের সমস্যা হয়। তাই আপাতদৃষ্টিতে শরীরে ঘাম বা ক্লান্তি দেখা না গেলেও শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করানোর ব্যাপারে যতœবান হতে হবে। এসময় শিশুর জ্বর হলে প্রথম পর্যায়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে পুরো শরীর মুছে দিতে হবে। তবে এতে তাপমাত্রা না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক ডোজে প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য ওষুধ যেমন ক্লোফেনাক, আইবুপ্রোফেন কিংবা অ্যাসপিরিন কোনোভাবেই নিজে নিজে শিশুকে জ্বর কমানোর জন্য দেওয়া যাবে না। গায়ে হালকা কাপড় পরাতে হবে। ঘরে আলো-বাতাস এবং পর্যাপ্ত রোদের ব্যবস্থা থাকা অপরিহার্য। এ ছাড়া কয়েল, স্প্রে, ধুলা থেকে আপনার শিশুটিকে দূরে রাখুন। মনে রাখতে হবে, কভিড ১৯- ডেঙ্গু এখনো আমাদের চোখ রাঙাছে। তাই শিশুর অতিরিক্ত জ্বরের সঙ্গে মাথা ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা, লালচে দানা, অতিরিক্ত কাশি কিংবা শ্বাসকষ্ট হলে জলদি চিকিৎসকের কাছে যাবেন। উল্লেখ্য, অসুখ-পরবর্তী প্রতিক্রিয়াস্বরূপ খাদ্যে অরুচির কারণে শিশুর ওজন কমে যাবে বলে অযথাই দুশ্চিন্তা না করে অসুস্থ অবস্থায় শিশুকে বারবার অল্প করে খাওয়াতে হবে।

টিকাদানের সময়সূচি
শীতকালে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাত্রা হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে তার ঠান্ডা লাগা বা সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অতএব, একটি অতিরিক্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে, তাকে অবশ্যই নির্ধারিত তারিখগুলিতে টিকা দেওয়াতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক টিকাদান করলে তা তাকে সারা জীবন সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করবে। সুতরাং, আপনার শিশুর টিকাদানের কোনও একটি সময়সূচীকেও এড়িয়ে যাবেন না।

শিশু মডেল : ফালাক্ক উমায়ের
আলোকচিত্রী : সৃজন ও কনিকা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়