সরকার ৬৭ লাখ তরুণ-তরুণীকে আয়বর্ধক পেশায় প্রশিক্ষণ দিয়েছে

আগের সংবাদ

১০ ডিসেম্বর কী হবে ঢাকায়? বিএনপির সমাবেশ ঘিরে উত্তাপ বাড়িয়েছে আমানের আল্টিমেটাম > রাজপথে মোকাবিলা করবে আ.লীগ

পরের সংবাদ

মহাদেবপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিস : দলিল লেখক সমিতির কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আবু বকর সিদ্দিক, নওগাঁ থেকে : নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই দলিল লেখক সমিতির নামে সেখানে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বছরের পর বছর এই কথিত সমিতির নামে জমির ক্রেতা বিক্রেতাদের জিম্মি করে প্রকাশ্যে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করছে তারা। আর রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুস বাণিজ্য নিত্যদিনের ব্যাপার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহাদেবপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ১২০-১২৫ জন দলিল লেখক কাজ করছেন। জমির শ্রেণি ও মূল্য হিসেবে রেজিস্ট্রির সরকারি খরচের পর দলিলপ্রতি সমিতির নামে ২০-২৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। আর চাঁদা না দিলে ওই দলিল রেজিস্ট্রি হয় না। এজন্য প্রতিটি দলিলের শেষ পৃষ্ঠায় চাঁদা পরিশোধের সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। সপ্তাহের প্রত্যেক বৃহস্পতিবার হিসাব-নিকাশ শেষে সমিতির নামে আদায় করা অর্থের শতকরা ৩০ ভাগ নেন সাবরেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তারা। বাকি টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয় ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। অভিযোগ রয়েছে, অনেক দলিল লেখক কোনো দলিল না লিখেও ঘরে বসে সমিতি থেকে প্রতি সপ্তাহে ১৬-২০ হাজার টাকা পেয়ে যান।
এদিকে একখণ্ড জমি ক্রয়ের পর তা রেজিস্ট্রি করতে এসে সমিতির নামে বাধ্যতামূলকভাবে চাঁদার টাকার জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। অফিসটিতে বছরে ছয় থেকে সাত হাজার দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে। এতে বছরে ওই সমিতির চাঁদাবাজির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১২ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে সাধারণ দলিল লেখকদের ভাগ্যের তেমন একটা পরিবর্তন না হলেও সমিতির নেতারা ফুলে ফেঁপে উঠেছে। এছাড়া দলিলের নকল উত্তোলন ও তল্লাশিতে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সেবাপ্রত্যাশীদের। প্রতিটি দলিলের নকল উত্তোলনে সংশ্লিষ্টদের ১০০০-১৫০০ টাকা ঘুস গ্রহণের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। ওই সমিতির বিরুদ্ধে গত ২৭ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন উপজেলা সদরের মৃত তাহের আলী মণ্ডলের ছেলে ভুক্তভোগী আজাদ রহমান। জমির মালিকের কাছ থেকে এক কোটি ৬৩ লাখ টাকায় জমি কিনলেও মহাদেবপুর মৌজায় জমির সরকারি দাম বেশি নির্ধারিত থাকায় তিন কোটি ২০ লাখ টাকার দলিল করতে হয়েছে। সরকারি ট্যাক্স, ভ্যাট দিয়েছেন ১৯ লাখ ৩ হাজার ৬০ টাকা। দলিল লেখা প্রভৃতির খরচ দিয়েছেন ৪৫ হাজার টাকা। এরপরও দলিল লেখক সমিতির নামে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে। একইভাবে হয়রানির কথা জানান আরো ২০-২৫ জন ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী আজাদ রহমানের ক্রয়কৃত জমির দলিল লেখক অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম চাঁদা গ্রহণের কথা স্বীকার করে জানান, নিয়মানুযায়ী ওই চাঁদার টাকা গ্রহণ করে সমিতিতে জমা দিয়েছেন তিনি। দলিলপ্রতি নির্ধারিত ১০০০/৫০০ টাকা অতিরিক্ত না দিলে সাবরেজিস্ট্রার দলিলই গ্রহণ করেন না। জমি বিক্রেতার ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ ও নামজারির মূলকপি না থাকলে এক থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুস নেন।
তবে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মহাদেবপুর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি এস এম কাউছার আলম। আর অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষবাণিজ্যের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি মহাদেবপুর সাবরেজিস্ট্রার আবদুর রশিদ মণ্ডল।
ভুক্তভোগী আজাদ রহমানের দায়ের করা অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসান জানান, এ ঘটনায় দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান জানান, তদন্তপূর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তিনি।
উল্লেখ্য, শুধু মহাদেবপুর নয়, জেলার ১১টি উপজেলার রেজিস্ট্রি অফিসের চিত্র প্রায় একই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়