সরকার ৬৭ লাখ তরুণ-তরুণীকে আয়বর্ধক পেশায় প্রশিক্ষণ দিয়েছে

আগের সংবাদ

১০ ডিসেম্বর কী হবে ঢাকায়? বিএনপির সমাবেশ ঘিরে উত্তাপ বাড়িয়েছে আমানের আল্টিমেটাম > রাজপথে মোকাবিলা করবে আ.লীগ

পরের সংবাদ

বিপাকে মেহেরপুরের সেচ পাম্প মালিকরা : ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মেহেরপুর প্রতিনিধি : সবজির জেলা খ্যাত মেহেরপুরে ভরা মৌসুমে সেচ দিতে পারছেন না গাংনী উপজেলার শত শত কৃষক। চলতি মাসেই ৭টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির কারণে বন্ধ রয়েছে ৭টি সেচ পাম্প। গাংনী উপজেলার বামন্দী ও দেবীপুর ডিপের মাঠের প্রায় ১ হাজার বিঘা জমিতে সেচ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। রাত জেগে পাহারা, পুলিশের কড়া নজরদারি কোনো কিছুতেই যেন বন্ধ হচ্ছে না ট্রান্সফরমার চুরি। চোর চক্রের সদস্যরাও রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। একটি ট্রান্সফরমার চুরি হলে ৪০ হাজার টাকা দিতে হয় সেচ পাম্প মালিককে, যা বাৎসরিক উপার্জিত টাকার সমপরিমাণ। ফলে ট্রান্সফরমার চুরি হলে নতুন করে লাগাতে অনেক সময় লাগে।
১ নভেম্বর রাতে গাংনী উপজেলার বামন্দী ও দেবীপুর ডিপের মাঠে ৩টি ও গত ১০ নভেম্বর রাতে তেরাইল মাঠে ৪টি বৈদু?্যতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। কৃষকরা জানান, মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে উঠে তারা ট্রান্সফরমার চুরি করে। এই চক্রের সদস্যরা কোনো সাধারণ মানুষ নয়। তাদের বিদ্যুতের কাজের ট্রেনিং নেয়া আছে। একই দাবি বিদ্যুৎ অফিসেরও। ট্রান্সফরমার চুরির পেছনে কোনো একটা চক্র জড়িত। তারা হতে পারে পল্লী বিদ্যুৎ এর কাজ করে, না হয় ডিস লাইনের যারা কাজ করে এদের একটা চক্র হতে পারে।
বৈদ্যুতিক সেচ পাম্পের মালিক জাকির হোসেন বলেন, মাঠে আমনের আবাদ চলছে। গত ১০ দিনে ৭টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এই চুরির ঘটনায় মাঠের ফসল নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। কারণ মাঠে এখন তিন ধরনের ধান- একটা ধান কাটা চলছে, একটার শিষে দানা বাঁধতে শুরু করেছে, আরেকটি ১০-১৫ দিনের মধ্যে কাটা যাবে। অধিকাংশ ধানে পানি দিতে হবে। পানি না দিলে ধানের চিটা পড়ে যাবে। এতে কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ট্রান্সফরমারের দাম বাবদ ৪০ হাজার টাকা দিতে হয় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে। বড় দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি। যদি দ্রুত এই ট্রান্সফরমারের ব্যবস্থা করতে না পারি, তাহলে অনেক চাষি ক্ষতির মধ্যে পড়বে। একই কখা বলেন, সেচ পাম্পের মালিক ওসমান আলী। তিনি বলেন, রাত ১টা পর্যন্ত আমরা পাহারা দিয়েছি, তারপর বাড়ি চলে যায়। সকালে এসে দেখি ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে গেছে। দেবীপুর গ্রামের চাষি ও সেচ পাম্প মালিক আব্দুস সালাম বলেন, ট্রান্সফরমারের বক্সগুলো মাঠের ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটে পড়ে ছিল। আমার মতো মাঠে থাকা মনিরুল ইসলাম ও ফরিদের ট্রান্সফরমারও চুরি হয়ে যায়।
চাষি নুরুল হক বলেন, ৪টি সেচ পাম্পের আওতায় প্রায় ৬০০ বিঘা জমির আবাদ রয়েছে। যদি শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে আবাদ করতে হয়, তাহলে তেলের দাম অনেক বেশি; খরচ অনেক বেড়ে যাবে।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন জানান, ট্রান্সফরমার চুরি অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দুই দিনে চুরি যাওয়া ৭টি ট্রান্সফরমারের অধীনে প্রায় ১ হাজার বিঘার অধিক আবাদি জমি আছে। যত দ্রুত সম্ভব ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপনে বিদ্যুৎ বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুতের বামন্দী সাব-জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (ওএন্ডএম) হানিফ রেজা বলেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টি সমাধান করব। চাষিদের যাতে কৃষিকাজে কোনো সমস্যা না হয়, তাই খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ১১ দিনের ব্যবধানে এই মাঠে সাতটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এই চুরির পেছনে একটি চক্র আছে, যারা পল্লী বিদ্যুতের কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বা এই কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। চোর চক্র ট্রান্সফরমারের কপার কয়েলের তার টুকু নেয়। এর দাম অনেক। ট্রান্সফরমার একবার চুরি হলে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে প্রতিস্থাপন করে। এই বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করেছি। এছাড়া এলাকায় মাইকিং ও মোটিভেশন মিটিং করছি।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে কৃষককে মাঠে থাকা বৈদু?্যতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় জড়িতদের খুঁজতে কাজ শুরু করেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই চক্রকে আইনের আওতায় আনতে পারব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়