সরকার ৬৭ লাখ তরুণ-তরুণীকে আয়বর্ধক পেশায় প্রশিক্ষণ দিয়েছে

আগের সংবাদ

১০ ডিসেম্বর কী হবে ঢাকায়? বিএনপির সমাবেশ ঘিরে উত্তাপ বাড়িয়েছে আমানের আল্টিমেটাম > রাজপথে মোকাবিলা করবে আ.লীগ

পরের সংবাদ

ফরিদপুরে গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল : বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মশিউর রহমান খোকন/বিভাষ দত্ত, ফরিদপুর থেকে : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপনারা তিন দিন ধরে এই খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন এটাও একটা বড় লড়াই, সেই লড়াই আমাদের অস্তিতের লড়াই, আমাদের বেঁচে থাকবার লড়াই, এই লড়াই আমাদের ভোটের অধিকার ফিরে পাবার লড়াই। বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া গৃহবধূ ছিলেন। শুধু দেশের জন্য, মানুষের কারণে, স্বাধীনতার জন্য পতাকা হতে লড়াই করেছেন, পথে নেমে এসেছিলেন। দেশনেত্রীকে কারাগারে নেয়ার পরে সেই লড়াই শুরু করেছেন আমাদের আরেক বীর তরুণ সেনানী তারেক রহমান।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা, খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা এবং হামলা-মামলার প্রতিবাদে চলমান বিভাগীয় সমাবেশের অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার ফরিদপুর শহরের উপকণ্ঠে কোমরপুরের এম এ আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠে ফরিদপুর বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দুপুর ২টায় সমাবেশের প্রধান অতিথি ও অন্যান্য অতিথিরা মঞ্চে এলেও মূলত নেতাদের বক্তব্য দেয়া শুরু হয় বেলা ১০টা থেকেই। এর আগেই সমাবেশের মাঠ কানায় কানায় ভরে উঠে। গণসমাবেশ মঞ্চে দুটি চেয়ারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি রাখা হয়। ফরিদপুরের ৯টি উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হয় নেতাকর্মীরা। এ সময় নেতাকর্মীরা রং-বেরংয়ের টিশার্ট-ক্যাপ পরিধান, নেতাদের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন বহন করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রের জন্য নূরে আলম, আব্দুর রহিম, শাওন, আলীম, অনিক বুকের রক্ত দিয়েছেন। আমরা সেই রক্ত বৃথা যেতে দিতে পারি না। আজকে কেন আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি? কেন আমরা তিন দিন ধরে এই সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি? একটা মাত্র কারণ। ভোটের অধিকার ফেরত চাই, গণতন্ত্র ফেরত চাই। গত দুটি নির্বাচনে আপনারা ভোট দিতে পারেননি। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতেই ব্যালটে সিল-ছাপ্পর মেরে নিয়ে গেছে। আমাদের এই যুবক ছেলে যারা সেলফি তোলে… তারা কি ভোট দিতে পেরেছেন? পারেনি। যুবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শুধু সেলফি তুললে হবে না, আরো শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে। তরুণ-যুবকদের আজকে কঠিন ইস্পাতের মতো দাঁড়াতে হবে। কারণ একমাত্র তরুণ-যুবকরাই পারে দেশের পরিবর্তন আনতে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সরকার এই দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে। আমাদের অর্থনীতি ও ভবিষ্যত

ধ্বংস করেছে। আমার ভোটের অধিকার ফিরে পাবার জন্য লড়াই করছি। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দিবো। এটা তারা মানবে না। তারা বলে, আমার ভোট আমি দেব, তোমার ভোটও আমি দেব। এটা আর হতে দেয়া যাবে না।
সমাবেশের কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকের সরকার নির্বাচিত সরকার না। এরা জোর করে বন্দুক-পিস্তল দেখিয়ে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, খুন করে গুম করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। এই সরকার যদি আরো থাকে তাহলে আমাদের সব অধিকার নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই দেশের মানুষ এখন জেগে উঠেছে, তারা তাদের অধিকার আদায় করতে চায়।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন করেছিলেন, ১৭৬ দিন হরতাল দিয়েছিলেন। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানুষের প্রাণের দাবি। কারণ বিগত দুইটা নির্বাচনে মানুষকে প্রবঞ্চনা করে, মিথ্যা বুঝিয়ে নির্বাচন খেলা করে ক্ষমতায় চলে গেছেন। কিন্তু এইবার আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এবার কোনো নির্বাচন এদেশে হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত নিরপেক্ষ করার নিশ্চয়তা না দেয়া হবে।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কয়েকটি নির্বাচন হয়েছে। তখন আপনারা ভোট দিতে পেরেছেন। সংবিধানকে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছে। একবার করেছিল ১৯৭৫ সালে। সবগুলো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দিয়ে, সবগুলো পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে বাকশাল চালু করেছিল।
তিনি বলেন, গত একযুগে এই সরকারের আমলে মোট ১০ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। মেগাপ্রকল্প থেকে শুরু করে গ্রামের বেকারভাতা থেকেও তারা চুরি করে। খাজাঞ্চিখানায় টাকা নাই, টাকা শেষ। রিজার্ভের টাকা খেয়ে ফেলেছে। তারা বলেন, আমরা কি টাকা চিবিয়ে খেয়েছি…? আমি বলি না, আপনারা টাকা গিলে খেয়েছেন।
তিনি বলেন, ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াতে চেয়েছিল, ঘরে ঘরে চাকরি দিতে চেয়েছিল, কৃষকদের বিনা মূল্যে সার দিতে চেয়েছিল- কোনোটাই তারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কৃষকদের এখন ২/৩ গুণ দামে সার কিনতে হচ্ছে। সেচের পানি দিতে পারছে না বিদ্যুতের অভাবে, ডিজেলের অভাবে। কৃষকরা এখন আর কৃষি কাজ করতে চায় না, তাদের লাভ হয় না। এখন তারা দিনমজুরের কাজ করছে। বেকার ছেলেমেয়েদের চাকরি হচ্ছে না, তারা ভাড়ায় বাইক চালাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আলেম-ওলামাদের হয়রানি করা হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় আসামি করে তাদের জেলে ভরা হচ্ছে। তাদের জামিনও দেয়া হচ্ছে না। দেশনেত্রী, গণতন্ত্রের মাতা খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ৪ বছর বন্দি করে রেখেছে। বয়স্ক মানুষ তাকে চিকিৎসা করতে দেশের বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। যারা মাফিয়া, দেশকে লুট করে, দেশকে ধ্বংস করে দেয় তাদের জামিন দেয়া হয়, তারা মুক্তি পায়। কিন্তু দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি হয় না।
তিনি বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান, কি অপরাধ তার? তাকে কতগুলো মিথ্যা মামলা সাজিয়ে-গুছিয়ে সাজা দিয়ে বসে আছে। মনে রাখতে হবে, মিথ্যা মামলার সাজা টেকে না। তারেক রহমান বীরের বেশেই এসে আসবেন। জনগণের নেতৃত্ব দেবেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা চাই, এই মুুহূর্তে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ করুক। আমরা চাই এই সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে। আমরা চাই, অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে, নতুন নির্বাচন দেবে। নতুন একটি পার্লামেন্ট গঠিত হবে। আমরা নির্বাচিত হলে একটি জাতীয় সরকার গঠন করবো এবং ছাত্রদের মতো আমাদের স্লোগান হবে ‘রাষ্ট্রকে মেরামত করতে চাই’।
তিনি তার শেষ বক্তব্যে বলেন, আমরা আর অন্যায় অত্যাচার সহ্য করবো না। আমরা রুখে দাঁড়াব। তরুণদের জেগে উঠতে হবে, সব মানুষকে জেগে উঠতে হবে এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, শামা ওবায়েদ ইসলাম, শাহ মো. আবু জাফর, শহিদুল ইসলাম, মোদারেছ আলী ইছা, একে কিবরিয়া স্বপন, এ বি সিদ্দিকী মিতুল প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়