স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : আতঙ্কিত হওয়ার মতো অবস্থায় নেই বাংলাদেশ

আগের সংবাদ

সরকারি ওষুধ সিন্ডিকেটের পেটে : রোগীর ভাগ্যে জোটে যৎসামান্য, বিনামূল্যে মিলে কোন ওষুধ জানেন না রোগী, তিন স্তরে পাচার হয়

পরের সংবাদ

সৃষ্টিশৈলীতে অমর হুমায়ূন আহমেদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হুমায়ূন আহমেদ বাংলা ভাষার কিংবদন্তি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি সমাদৃত। তার নির্মাণশৈলী দর্শকদের হৃদয়ে এখনো জায়গা করে আছে। তার নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ পেয়েছে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা, একই সঙ্গে টেলিভিশন নাটকগুলোও ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য ধারাবাহিক এবং টেলিফিল্ম রচনা শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে তার প্রথম টিভি কাহিনীচিত্র ‘প্রথম প্রহর’ বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়, যা তাকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে। তার অন্যতম টেলিভিশন ধারাবাহিক ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘অয়োময়’, ‘আজ রবিবার’, ‘নিমফুল’, ‘তারা তিনজন’, ‘আমরা তিনজন’, ‘মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘সবুজ সাথী’, ‘উড়ে যায় বকপক্ষী’, ‘এই মেঘ এই রৌদ্র’। পরবর্তী সময়ে তিনি বহু এক পর্বের নাটকও নির্মাণ করেছেন। যেগুলোর মধ্যে ‘খেলা’, ‘অচিন বৃক্ষ’, ‘খাদক’, ‘একি কাণ্ড’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘অন্যভুবন’ উল্লেখযোগ্য। এই নাটকগুলোর এক যুগ এবং কোনো কোনো নাটকের দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনো দর্শকের কাছে সমান জনপ্রিয়।
‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের নাম শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটক ভক্তদের কাছে একটি অনুভূতির নাম ছিল। সময় হলে তাড়াহুড়ো করে কে আগে টিভি সেটের সামনে বসবে, তা নিয়ে বেঁধে যেত গৃহযুদ্ধ। নাটকটির নাট্যকার ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। নির্দেশনা করেছিলেন বরকত উল্লাহ। একটি নাটকের চরিত্র দর্শকদের কাছে কতটা আপন হতে পারে, তা ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের বাকের ভাই চরিত্রটি দেখলেই টের পাওয়া যায়। নাটকে বাকের ভাইয়ের ফাঁসির প্রতিবাদে দেশের শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন মিছিল করার জন্য। টেলিভিশন নাটকের ইতিহাসে ‘কোথাও কেউ নেই’ একটি মাইলফলক। যে নাটকের ইতিহাস এখনো সরব। অনেকে সময় পেলেই এখনো বসে যান ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিক দেখতে। নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আসাদুজ্জামান নূর, সুবর্ণা মুস্তাফা, আবদুল কাদের, মাহফুজ আহমেদ, আবুল খায়ের, হুমায়ূন ফরিদি, আফসানা মিমি, মোজাম্মেল হোসেন।
‘আজ রবিবার’ বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ধারাবাহিকগুলোর মধ্যে অন্যতম। হাস্যরসের মাধ্যমে বাস্তব জীবনের অসাধারণ প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে এ নাটকে। হুমায়ূন আহমেদের লেখা মনির হোসেন জীবনের পরিচালনায় নাটকটিতে অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত, জাহিদ হাসান, শাওন , সুবর্ণা মুস্তাফা, আলী যাকেরসহ আরো অনেক গুণী শিল্পী। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে এটি প্রচারিত হয়। দুই দশক পেরিয়ে গেলেও নাটকটির দর্শকপ্রিয়তা এখনো দৃশ্যমান।
সাহিত্য আর টিভি নাটকের মতো চলচ্চিত্রেও মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। নব্বইয়ের দশকে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আটটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। সব চলচ্চিত্রেরই কাহিনী, চিত্রনাট্য ও প্রযোজনা তারই। তার নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘আমার আছে জল’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ উল্লেখযোগ্য।
১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আগুনের পরশমণি’ হুমায়ূন আহমেদের নির্মিত প্রথম সিনেমা। যা নির্মাণ করতে সময় লাগে চার বছর। এতে অভিনয় করেন আসাদুজ্জামান নূর, আবুল হায়াত, ডলি জহুর, বিপাশা হায়াতসহ অনেকে। বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত ‘আগুনের পরশমণি’ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ আটটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।
দীর্ঘদিন পর হুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ করেন ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’। এটি তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। তারই লেখা ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ নামক উপন্যাস অবলম্বনে নূহাশ চলচ্চিত্রের ব্যানারে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়। এতে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, মেহের আফরোজ শাওন, মাহফুজ আহমেদ, আনোয়ারা, মুক্তি, গোলাম মুস্তাফা, সালেহ আহমেদ, ডা. এজাজসহ অনেকে। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ২০০০ সালে। মুক্তির পরে ব্যাপক প্রশংসিত হয় সিনেমাটি।
২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘শ্যামল ছায়া’ হুমায়ূন আহমেদের আরেক প্রশংসিত নির্মাণ। যেটা দর্শক মহলে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয় সিনেমাটি। এটি ২০০৬ সালে একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস তথা অস্কারে ‘সেরা বিদেশি ভাষা’ বিভাগে প্রতিযোগিতার জন্য পাঠানো হয়। এতে অভিনয় করেছেন হুমায়ূন ফরিদি, মেহের আফরোজ শাওন, রিয়াজ, তানিয়া আহমেদ, আহমেদ রুবেলসহ অনেকে। ২০০৮ সালে মুক্তি পায় হুমায়ূন আহমেদের আরেকটি সিনেমা ‘আমার আছে জল’। এটিও তারই লেখা উপন্যাস ‘আমার আছে জল’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। এতে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, মেহের আফরোজ শাওন, ফেরদৌস, বিদ্যা সিনহা মিম, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুনমুন আহমেদ, সালেহ আহমেদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়সহ আরো অনেকে।
‘ঘেটুপুত্র কমলা’ এটি হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত সর্বশেষ সিনেমা। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এ সিনেমার নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছে শিশুশিল্পী মামুন। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, মুনমুন আহমেদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, তমালিকা কর্মকার, কুদ্দুস বয়াতিসহ অনেকে।
তার রচিত অসংখ্য গানও দর্শকদের হৃদয়ে দাগ কেটেছে। তার নির্মাণের পর অসংখ্য নাটক, চলচ্চিত্র তৈরি হলেও হুমায়ূন আহমেদ তার নিজস্ব নান্দনিক সৃষ্টিশৈলীর জন্য দর্শকের কাছে অমর হয়ে আছেন।

:: সোহানুর রহমান সোহাগ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়