স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : আতঙ্কিত হওয়ার মতো অবস্থায় নেই বাংলাদেশ

আগের সংবাদ

সরকারি ওষুধ সিন্ডিকেটের পেটে : রোগীর ভাগ্যে জোটে যৎসামান্য, বিনামূল্যে মিলে কোন ওষুধ জানেন না রোগী, তিন স্তরে পাচার হয়

পরের সংবাদ

ভয়াল ১২ নভেম্বর আজ : উপকূলের মানুষ এখনো আঁতকে ওঠেন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এইচ এম নাহিদ, ভোলা থেকে : আজ ১২ নভেম্বর, ১৯৭০ সালের এই দিনে ভোলায় ঘটেছিল ঘূর্ণিঝড় গোর্কির তাণ্ডব। সেই স্মৃতি মনে পড়লে এখনো আঁতকে ওঠেন উপকূলবাসী। একদিকে স্বজনহারা মানুষের কান্না, এর ওপরে তীব্র শীত ও খাদ্য সংকট বেঁচে থাকা অবশিষ্ট মানুষদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় বহু মানুষ খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
সেদিনের কালরাতে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে এমন করুণ দৃশ্যের বর্ণনাও শোনা গেছে যে মা নিজে বাঁচতে গিয়ে তার কোলের সন্তানকে ছেড়ে দিয়েছেন সামুদ্রিক জোয়ারের স্রোতে। সন্তান ছেড়ে দিয়েছে তার বাবা-মাকে। স্বামী তার স্ত্রীকে। আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবে মানুষ জীবন বাঁচিয়েছে গাছের ডালে চড়ে। দিনের পর দিন কলার থোড় কিংবা গাছের পাতা খেয়ে জীবনধারণ করেছে। বিশেষ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দূরবর্তী দ্বীপগুলোর বেঁচে থাকা প্রতিটি মানুষের দিন কেটেছে অনাহারে।
১০ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার এই জলোচ্ছ¡াসে সেদিন স্রোতের টানে একই সঙ্গে ভেসে যায় বহু গবাদি পশু ও ঘর-বাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজার হাজার একর জমির ফসল। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূলীয় এলাকার জনপদ। এতে গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার। স্বজন হারানো মানুষের কান্নায় সেদিন উপকূলীয় এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
জলোচ্ছ¡াস পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীসহ জাতীয় নেতারা ভোলায় এসে পাক সরকারের অবহেলা এবং দায়িত্বহীনতা দেখে হতবাক হয়ে যান। ভোলাবাসী মনে করে ঘূর্ণিঝড় গোর্কি মোকাবিলায় তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের উদাসীনতা মুক্তিযুদ্ধকে সেই সময় ব্যাপকভাবে তরান্বিত করেছে। বর্তমানে দুর্যোগ মোকাবিলায় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে জনগণকে অনেক বেশি সচেতন করা হলেও এখনো ঘূূর্ণিঝড়ের সিগনাল দেখলে আতঙ্কের মধ্যে থাকেন সত্তরের প্রত্যক্ষদর্শীরা। ভোলা চরফ্যাশনের আবুল হোসেন (৭৫), লালমোহনের কাঞ্চন মাঝি (৮০), তজুমুদ্দিনের মহিউদ্দিন (৭২), ভোলা সদরের দীলিপ (৮৫) বলেন, যারা সত্তরের বন্যা চোখে দেখেনি তারা সেদিনের ভয়াবহতা বিশ্বাস করবে না। মানুষের লাশ কচুরিপানার মতো নদীতে ভাসছে। চারদিকে শুধু স্বজন হারানোর চিৎকার। অভুক্তদের মুখে দু’মুঠো খাবার দেয়ার মানুষ ছিল না।
ভোলার প্রবীণ সাংবাদিক এম এ তাহের বলেন, ভয়াল সেই রাত কেটে গেলে পরদিন শুক্রবার ভোলা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। চারধারে শুধু লাশ আর লাশ। গাছে ঝুলে ছিল অনেকের মরদেহ। বাঁচার লড়াই করেছেন অনেকে। কেউ বেঁচেছেন, তবে বেশিরভাগই তাদের স্বজনদের হারিয়েছেন। ঝড়ের কয়েকদিন পর সামান্য কিছু সাহায্য মিলেছে।
মহাপ্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় গোর্কির ৫২ বছর কেটে গেছে, তবুও ঝড়-জলোচ্ছ¡াস বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে চরাঞ্চলের মানুষ নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারে না। দ্বীপজেলা ভোলার অর্ধশতাধিক চরাঞ্চলের ৩ লক্ষাধিক মানুষ এখনো চরম ঝুঁকিতে অবস্থান করছেন। সেখানে নেই পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার। যা আছে সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। কিছু কিছু সাইক্লোন শেল্টার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় মানুষ সেখানে যেতে চায় না।
তবে ভোলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলগুলোয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে ব্যাপক বনায়ন করা হয়েছে। এর ফলে ক্ষয়ক্ষতি কিছু কম হচ্ছে। যেসব খালি জায়গায় এখনো বনায়ন করা হয়নি সেখানে বেশি বেশি গাছ লাগানোর দাবি জানান ভোলার সচেতন মহল। এছাড়াও পর্যাপ্ত সংখ্যক সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের দাবি তাদের। গোর্কির মতো যেন এমন নির্মম ধ্বংসযজ্ঞের কবলে ভোলাবাসিকে আর পড়তে না হয় সেটাই জেলার ২২ লাখ মানুষের দাবি। বর্তমানে ৭৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র থাকলেও তা যথেষ্ট নয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়