স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : আতঙ্কিত হওয়ার মতো অবস্থায় নেই বাংলাদেশ

আগের সংবাদ

সরকারি ওষুধ সিন্ডিকেটের পেটে : রোগীর ভাগ্যে জোটে যৎসামান্য, বিনামূল্যে মিলে কোন ওষুধ জানেন না রোগী, তিন স্তরে পাচার হয়

পরের সংবাদ

বাজারে আগুন : ভোজ্যতেল উধাও, বেশি দামেও মিলছে না চিনি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাজারে হু হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় তেল মিলছে না। সেই সঙ্গে ৯০ টাকার চিনি ১২০ টাকা দিয়ে কিছু কিছু দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তা। এরইমধ্যে জাতি সংঘ বিশ্বমন্দার আশঙ্কা প্রকাশের পর বিভিন্ন পণ্যের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
সূত্রমতে, মূলত বিশ্বমন্দা ও খাদ্য সংকটের আশঙ্কা নিয়ে জাতি সংঘের সতর্ক বার্ত প্রকাশের পর থেকে হু হু করে বাড়ছে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। ইতোমধ্যে তেল ও চিনি বাড়তি দামেও বাজারে মিলছে না। শুধু তেল বা চিনি নয়, বাজারে নতুন করে সংকট হচ্ছে আটা ও ময়দাতেও। পাড়া-মহল্লার দোকানে ক্রেতারা কোনো একটি দোকানে আটা-ময়দা পেলেও হয়তো চিনি পাচ্ছেন না। আবার কোথাও গিয়ে চিনি মিললেও সেখানে নেই সয়াবিন তেল কিংবা আটা। আবার কোথাও এসব পণ্যের মোড়কজাত দুয়েকটি প্যাকেট থাকলেও নেই খোলা পণ্য। এ কারণে কাক্সিক্ষত পণ্য পেতে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছুটতে হচ্ছে ক্রেতাদের। কেউ আবার বাধ্য হয়ে বেশি দামে পণ্য কিনছেন।
রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, দুয়েকটি দোকান বাদে অধিকাংশ দোকানেই কোনো না কোনো পণ্য নেই। বিশেষ করে, বেশি সংকট সয়াবিন তেলের। মাত্র একটি দোকানে ভোজ্যতেল পাওয়া গেলেও সেখানে বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে। নেই খোলা কোনো সয়াবিন বা পাম তেল। রামপুরার মুদি দোকানি এজাজ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে কোম্পানির প্রতিনিধিরা আসছেন না। মাঝেমধ্যে এলেও কাক্সিক্ষত পণ্য দিতে পারছেন না। বিশেষ করে, তেল দেয়া প্রায় বন্ধ রেখেছে কোম্পানিগুলো। যাদের কাছে আগের কেনা তেল রয়েছে, তারা কিছু কিছু করে বিক্রি করছেন এখন। তিনি বলেন, পুরনো কাস্টমারদের কাছে তেল বিক্রি করছি। পাইকারি অথবা একজন ক্রেতার কাছে বেশি পণ্য বিক্রি বন্ধ এখন। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একেক দোকানে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। কোথাও রূপচাঁদার ২ লিটারের তেলের বোতল ৩৬০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে, আবার কোথাও একই তেল ৩৮৪ টাকা। বসুন্ধরা ব্র্যান্ডের একই পরিমাণ তেল ৪১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তীর ব্র্যান্ডের এক লিটার বোতলজাত তেল ১৭৮ টাকা। আবার কোথাও একই তেল ১৯২ টাকাও লেখা বোতলের গায়ে। বিক্রেতারা বলছেন, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তিন দফা তেলের দাম বেড়েছে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ের তেলগুলো ভিন্ন ভিন্ন রেটের। একেক দোকান একেক দামে এসব তেল কেনায় বিক্রিও করতে হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন দামে। এটিই দামে তারতম্যের কারণ। একই অভিযোগ রাজধানীর তালতলা বাজারে এসবি স্টোরের কর্মচারী বিপুল হোসেনের। তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০৫ টাকা লিটার দরে তেলও বাজারে এসেছে। দাম আরো বাড়বে বলে কোম্পানিগুলো জানিয়েছে। সে কারণে তেলের বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে তারা।
মালিবাগ বাজারে নোয়াখালী স্টোরের মালিক এনামুল হক বলেন, দেড় যুগের ব্যবসায়িক জীবনে পণ্যের এমন সংকট দেখিনি। সরকার যখন থেকে দুর্ভিক্ষের কথা বলেছে, তখন থেকে বাজারে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। পণ্য সরবরাহ ঠিকমতো না দিয়ে বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে জিম্মি করে রেখেছে কিছু কোম্পানি। প্রকৃতপক্ষে পরিস্থিতি কী, সেটা জানার উপায় আর নেই।
রাজধানীর খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। তিনদিন আগেও এ চিনির দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা কম ছিল। আর প্রতি কেজি খোলা আটা ৬৫ টাকার নিচে মিলছে না। যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরের ব্যবধানে বাজারে আটার দাম ৭৯ দশমিক ১০ শতাংশ বেড়েছে। মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ। শুধু আটা নয়, একইভাবে ময়দার দামও বেড়েছে বাজারে। খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে। টিসিবি বলছে, বছরের ব্যবধানে ময়দার দাম ৭০ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১৬ শতাংশ।
আটার বিষয়ে মুদি দোকানিরা বলছেন, প্যাকেটজাত আটার সরবরাহ কিছুটা কম। এক সপ্তাহ আগে খুচরা ব্যবসায়ীরা ডিলারদের কাছ থেকে যেসব আটা ও ময়দা সংগ্রহ করেছেন, সেগুলোই বিক্রি করছেন দোকানিরা। অন্যদিকে, পাইকারি বাজারে খোলা আটা-ময়দার চড়া দামের কারণে অনেকে রাখছেন না। এছাড়া বাজারে মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া ডিমের ডজন ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। এই দুই পণ্যও আটকে আছে বাড়তি দামে। সেই সঙ্গে রয়েছে সবজির বাড়তি দামও। সব মিলে চরম অস্বস্তিতে রয়েছেন ভোক্তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়