স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : আতঙ্কিত হওয়ার মতো অবস্থায় নেই বাংলাদেশ

আগের সংবাদ

সরকারি ওষুধ সিন্ডিকেটের পেটে : রোগীর ভাগ্যে জোটে যৎসামান্য, বিনামূল্যে মিলে কোন ওষুধ জানেন না রোগী, তিন স্তরে পাচার হয়

পরের সংবাদ

নিউমোনিয়া দিবস আজ : অক্সিজেনে বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নিউমোনিয়া। সব বয়সি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হলেও শিশুদের মধ্যে এর প্রকোপ অনেক বেশি দেখা যায়। প্রাণও হারায় অনেক শিশু। বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে নিউমোনিয়া শিশুদের জন্য জটিল এক রোগ। তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। আর গড়ে প্রতি ১ হাজার শিশুর মধ্যে ৮ জন জন্মের ৫ বছরের মধ্যে নিউমোনিয়ায় মারা যায়। নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হাইপোক্সেমিয়া। অর্থাৎ রক্তে অক্সিজেনের অভাব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাইপোক্সেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর জন্য চিকিৎসা হিসেবে অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিস্থিতিতে নবজাতক থেকে শুরু করে যে কোনো বয়সের মানুষ হাইপোক্সেমিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। কোভিড মহামারির কারণে সারাবিশ্ব অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তার কথা নতুনভাবে জানতে পারেছে। বুঝতে পেরেছে মৌলিক চিকিৎসার মধ্যে অক্সিজেনও রয়েছে। করোনাকালে বিশ্বজুড়ে অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। চাহিদা মেটাতে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগও নেয়। কিন্তু সেগুলোও যথেষ্ট নয়। অক্সিজেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু অক্সিজেন স্বল্পতায় ভুগছে কিনা, পালস অক্সিমিটার দিয়ে মাপা যায়। কিন্তু শিশুদের পরিস্থিতি মাপার জন্য এই যন্ত্র পাওয়া দুষ্কর। তবে কিছু লক্ষণ দেখে এটি বোঝা সম্ভব- শিশুদের বুকের খাঁচার নিচে দেবে যায়, শিশুর মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে যায়, মাথায় অক্সিজেন কম থাকে বলে শিশু কাঁদতেই থাকে, শিশু দ্রুত শ্বাস নেয়, তার গলার মাংস ফুলে যায়।
আইসিডিডিআর,বির (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশ) নিউট্রিশন এন্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিস বিভাগের সিনিয়র বিজ্ঞানী ডা. মোহাম্মাদ জোবায়ের চিশতি জানান, বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে-২০১৭ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এক-চতুর্থাংশেরও কম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ৩টি অক্সিজেন উৎসের যে কোনো একটি রয়েছে। যার মধ্যে ১৩ ভাগে কনসেনট্রেটর, মাত্র ২১ ভাগের ফ্লো মিটারসহ অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়া মাত্র ৬ ভাগের অক্সিজেন সরবরাহ বা বিতরণের ব্যবস্থা এবং পালস অক্সিমিটার ছিল। ২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসে পরিচালিত আইসিডিডিআর,বির নেতৃত্বাধীন আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৬০টি জেলা হাসপাতালের মধ্যে ৭২ ভাগে হাসপাতালে পালস অক্সিমেট্রি যন্ত্রটি রয়েছে এবং মাত্র ৭ ভাগের আর্টারিয়াল ব্লাড গ্যাস অ্যানালাইসিস (রক্তে অক্সিজেন, কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ, অক্সিজেনের ঘনত্ব, এসিড-ক্ষারের ব্যালেন্স ইত্যাদি পরিমাপ করার পরীক্ষা) করার ব্যবস্থা রয়েছে। করোনার সময় বেশ কিছু বিক্ষিপ্ত উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে, পালস অক্সিমিটার এবং বাবল সি-প্যাপের মতো স্বল্পমূল্যের উদ্ভাবনমূলক বিষয়টি গ্রহণ করার মাধ্যমে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। মেডিকেল অক্সিজেনের জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আইসিডিডিআর,বির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান। তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণ শুরুর আগে দেশে ৫০ থেকে ৭০ টন অক্সিজেনের চাহিদা ছিল। কিন্তু কোভিডের সময় তা ১০ গুণ চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদা মেটাতে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। প্রতিটি হাসপাতালে অক্সিজেন সহজলভ্য করার জন্য একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন।
জানা যায়, করোনাকালে হাসপাতালে আসা কোনো রোগীর অক্সিজেনের প্রয়োজন আছে কিনা, তা পরীক্ষা বা যাচাই করার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই সময় এই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল অনলাইনে। অনলাইনে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশিক্ষণের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। নিউমোনিয়া কেবলমাত্র একটি অসুখ নয়, নানামুখী শারীরিক জটিলতা থেকে এই রোগ হয়। দেশে এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিংয়ের হার, এন্টিবায়োটিক ও টিকাদানের আওতা এবং সর্বোপরি স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়ানো হলে নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি কমানো সম্ভব। কেউ কেউ আবার পরিবেশ দূষণ এবং মারাত্মক তীব্র অপুষ্টিকেও নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর কারণ হিসেবে মনে করেন।
এই প্রেক্ষাপটে আজ পালিত হচ্ছে নিউমোনিয়া দিবস। ২০০৯ সালে ১২ নভেম্বরকে ‘নিউমোনিয়া দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ। এরপর থেকে বাংলাদেশে দিবসটি প্রতি বছর পালন করা হয়। এ উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়