স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : আতঙ্কিত হওয়ার মতো অবস্থায় নেই বাংলাদেশ

আগের সংবাদ

সরকারি ওষুধ সিন্ডিকেটের পেটে : রোগীর ভাগ্যে জোটে যৎসামান্য, বিনামূল্যে মিলে কোন ওষুধ জানেন না রোগী, তিন স্তরে পাচার হয়

পরের সংবাদ

নদীতে মাছ ধরে সংসার চলে না জেলেদের : মৌসুম শেষে তারা কামলা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আব্দুল হামিদ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী) থেকে : নদীই যাদের জীবিকার প্রধান উৎস, সেসব জেলের জীবন এখন অনিশ্চিত। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া ঋণের কিস্তি তো আছেই। সরজমিন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর ইউনিয়নের কালিদাশখালি এলাকায় দেখা যায়, কয়েকটি নৌকা নদীর পাড়ে তুলে রাখা। খুঁজতে খুঁজতে বেলা পৌনে ২টার দিকে পাওয়া গেল ওই গ্রামের (কালিদাশখালি) জেলে মজনু ফকিরকে। নিজের ছোট নৌকা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করতেই জানালেন, রাত ৩টায় নিজের ডোঙা নৌকা নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে নেমেছিলেন। ১০০ গ্রাম ওজনের দেড় কেজি ইলিশ মাছ পেয়েছেন। বাজারে যা বিক্রি হবে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। আর যে দিন মাছ পান না, সেদিন সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারেন না। মাছ পাওয়া যায় না বলে তার দলের ২ জেলে নদীতে নামেন না। তারা বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা। চার সদস্যের সংসার চলে নদীতে ধরা মাছ বিক্রি করে। নিবন্ধিত জেলে হলেও কোনো প্রণোদনা পাননি। তিনি জানান, জিনিসপত্রের যে দাম, তাতে মাছ ধরে সংসারের সব চাহিদা মেটাতে পারছেন না। কোনো কোনো দিন শুধু লবণ দিয়ে ভাত খেয়ে জীবন চালাতে হচ্ছে।
কালিদাশখালি গ্রামের নদীর পাড়ে বাড়ি জেলে আতিয়ার রহমানের। বয়স ৩৫ বছর হবে। নিজের আয়ে সংসার চলে না বলে ১৩ বছর বয়সের ছেলে মজনু রহমানকে সেলুনে কাজে লাগিয়েছেন। ১৮ বছর বয়সে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন এক বছর আগে। ছোট ছেলে শান্ত চতুর্থ শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। তিনি জানান, প্রণোদনার ২৫ কেজি চাল পেয়েছিলেন নিষেধাজ্ঞার শেষ সময়ের দিকে। কিন্তু তার মতো চাল পাওয়া জেলের সংখ্যা হাতেগোনা। জেলে আজগর আলী সেখ বলেন, নিজের জাল ও নৌকা নেই। অন্যের সঙ্গে ভাগে মাছ ধরার সুযোগ পাওয়ার আশায় বসে থাকতে হয় তাকে। কিন্তু নদীতে জাল ফেলেও মাছ পাচ্ছেন না। জাল নিয়ে মাছ ধরার জন্য নদীর পাড় দিয়ে ঘুরছিলেন আরেক জেলে জামাল উদ্দীন। দুপুর ১টা পর্যন্ত কোনো মাছই পাননি। তিনি জানান, তার কোনো কার্ড হয়নি। জেলে আতিয়ার রহমান বলেন, নিজের জাল, নিজের নৌকা। নিজেই মাছ ধরেন। ২২ দিন নদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার আগে ৩০ হাজার টাকা ঋণ করেছেন। এই টাকা দিয়ে সংসারের খরচসহ জাল ও নৌকা মেরামতের কাজ করেছেন। আশা ছিল নদীতে ধরা মাছ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করবেন। কিন্তু সারা দিনে যে মাছ পাওয়া যায় তাতে নৌকার ইঞ্জিনের তেলের খরচ আসে না। তাই নদীতে নামছেন না। তার দলে যে ২ জন ছিল, তারা এলাকার বাইরে কাজে গেছে। জেলে শাকিম আলী বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে বউ-বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে মরা ছাড়া কোনো উপায় নেই। মাছ ধরার জন্য জাল ঠিক করছিলেন জেলে মালেক বেপারিসহ কয়েকজন। তারা জানান,বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি যখন স্বচ্ছ হয়ে ওঠে, আর সেই পানিতে যখন মাছ আসে, তখন নদীতেই সারা দিন কাটে তাদের। অন্য সময় কখনো হয়তো ভাড়ায় মাছ ধরতে যান কোনো পুকুর বা ঘেরে অথবা কামলা খাটেন। কোষা নৌকায় ভেসে কচাল পাতেন, মাইজাল ফেলে মাছ ধরেন কিশোরপুর গ্রামের জেলে অদৈত্য হোলদার। ভাগে মাছ ধরে কখনো ৫০০ টাকার মাছ পান দিনে। কার্তিকের পর পানি নেমে গেলে সে সুযোগও চলে যায়। তিনি বলেন, কার্তিক গেলেই আজন্ম জেলে তখন হয়ে পড়েন পরনির্ভরশীল কামলা।
এলাকার জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওলিউর রহমান বলেন, চরাঞ্চলে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৩৬০ জন। এর বাইরেও অনেক জেলে আছেন। নদীতে মাছ না পাওয়ায় অনেক জেলে বাধ্য হয়ে এলাকার বাইরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।
মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ হাজার ৩০৫ জন। এর মধ্যে ইলিশ আহরণকারী জেলে ৮৮৫ জন। প্রণোদনা পেয়েছেন ৭৫৫ জন।

ইউপি চেয়ারম্যান ডি এম বাবুল মনোয়ার জানান, এই গাঁয়ের তিন ভাগের দুই ভাগ ঘর-গৃহস্থালির সবটাই নদীতে। অনেকের মতো ভাঙনে জেলেরাও ভিটেমাটি হারিয়েছেন। তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ২৪৬ জনের তালিকা করেছি। কিন্তু মেলেনি সরকারি কোনো সহায়তা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়