স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : আতঙ্কিত হওয়ার মতো অবস্থায় নেই বাংলাদেশ

আগের সংবাদ

সরকারি ওষুধ সিন্ডিকেটের পেটে : রোগীর ভাগ্যে জোটে যৎসামান্য, বিনামূল্যে মিলে কোন ওষুধ জানেন না রোগী, তিন স্তরে পাচার হয়

পরের সংবাদ

জনসমুদ্র সোহরাওয়ার্দী উদ্যান : অপশক্তি রুখে দেয়ার প্রত্যয়

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরতে পরতে ইতিহাস, যেখানের সবুজ ঘাসেরা বাঙালির মুক্তির কথা বলে, যেখানে দাঁড়িয়ে ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, আমাদের স্বাধীন দেশটির নাম হবে বাংলাদেশ, যেখানে একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন বাঙালির স্বাধীনতার বীজমন্ত্র, সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উত্তাল জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ফের অঙ্গীকার করেছে, সব অপশক্তি রুখে দিয়ে সোনার বাংলা গড়ার। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা থেকে

ুতৃণমূল কর্মী, উদ্যানের সব কটি প্রবেশ মুখ- টিএসসি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, মৎস্যভবন- সবখানে শুধু মানুষ আর মানুষ। যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তীতে সারা দেশের নেতাকর্মীদের বাহারি রঙের টি-শার্ট ও ক্যাপে পুরো এলাকা যেন রামধনু আঁকা ক্যানভাস। সেই ক্যানভাসে দাঁড়িয়ে সব ষড়যন্ত্র রুখে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ক্ষমতাসীনদের। কোনো অপশক্তি বাংলাদেশকে দাবায় রাখতে পারবে না- এই দৃঢ় ঘোষণা করে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন তারা।
আগামী দিনে অপশক্তির সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, জঙ্গিবাদ, সা¤প্রদায়িক গোষ্ঠীর আস্ফালনকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার দীক্ষা নিতে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা গতকাল ছুটে আসেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সকালেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় যুবলীগের মহাসমাবেশ। সারাদেশের যুবাদের স্রোত এসে মিলিত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মোহনায়। উদ্যানটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, সেগুনবাগিচাসহ আশপাশের রাস্তায় কর্মীরা অবস্থান নেন। কেউ বাস, কেউ পিকআপ ভ্যানে, কেউ মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে মহাসমাবেশস্থলে পৌঁছান। কারো পরনে লাল-সবুজ টি-শার্ট। মাথায় লাল-সবুজ টুপি। কোনো ইউনিট সবুজ, কোনো ইউনিট কমলা, কোনো ইউনিট হলুদ, কোনো ইউনিট নীল, কোনো ইউনিট হলুদ, কোনো ইউনিট গোলাপী, কোনো ইউনিট বেগুনি। কেউ আবার মাথায় লাল-সবুজের ব্যাজ পরেছেন। কারো হাতে পতাকা, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার। দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত এলাকায় যুবলীগের লাখো নেতাকর্মী অবস্থান করছেন। নেতাকর্মীর পদচারণা-স্লোগানে মুখরিত উদ্যান ও আশপাশের এলাকা।
বেলা আড়াইটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন এসে পৌঁছান, চারদিক থেকে মিছিল-স্লোগানে মুখরিত ছিল সমাবেশস্থল। বিকাল পৌনে ৫টায় সরকারপ্রধানের বক্তব্যের আগ পর্যন্ত চলে বিভিন্ন স্লোগান। এ সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশে ছিল লাখো কর্মী-সমর্থক।
অপশক্তি রুখে দেয়ার প্রত্যয় : প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত হওয়ার পর যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিলকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে মহাসমাবেশের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। এরপর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা। আয়োজনে ছিল সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও। বক্তৃতায় অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। জাতির পিতার বক্তব্যের উদ্ধৃতি টেনে ধরে তিনি বলেন, আমিও বিশ্বাস করি বাংলাদেশকে কেউ দাবায় রাখতে পারবে না। বিএনপি যত কথাই বলুক বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি আমরা এগিয়ে যাব।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, বিএনপি যখনই ক্ষমতা এসেছে তখনই অনেক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করেছে। ২০১৩, ১৪ ও ১৫-তে এদেশে অনেক মানুষকে হত্যা করেছে। মনে রাখবেন, আজকের এই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি সুষ্ঠু সুন্দর, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ বঙ্গবন্ধুর সমস্ত আদর্শিক সৈনিকরা ঐক্যবদ্ধ। যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ওরা ভয় দেখায়। হুমকি মারে। ১০ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার পতন ঘটাবে। তারেক জিয়া দেশে আসবে। আর বিএনপি ক্ষমতায় চলে যাবে। পাগলে কী না বলে, ছাগলে কিনা খায়।
যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, যারা আজ দেশে আতঙ্ক ছড়াতে চায়, আগুন সন্ত্রাস করতে চায়, মানুষ খুন করতে চায় এই যুবলীগ তাদের প্রতিহত করতে প্রস্তুত।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে। খেলা হবে বিএনপির বিরুদ্ধে, আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, খেলা হবে ভোট চুরির বিরুদ্ধে, ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে। তৈরি হয়ে যান। প্রস্তুত হয়ে যান। জবাব দেব।
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, পারস্পরিক দ্ব›দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জনগণের কাছে সরকারের উন্নয়ন এবং বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল যেন ক্ষমতায় না আসতে পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
সম্রাটের শোডাউন : মহাসমাবেশ শোডাউন করেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। তবে সমাবেশে নিজের উপস্থিতির জানান দেয়ার মতো কোনো ফটোসেশন করেননি তিনি। এমনকি নিজের সমর্থকদেরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি আপলোড দিতে নিষেধ করেছেন সম্রাট। সকালেই সমাবেশস্থলে আসেন তিনি। গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সম্রাট জুমার নামাজের পর প্রধানমন্ত্রী সমাবেশে আসার আগেই মন্দির গেট দিয়ে প্রবেশ করেন। তিনি যুবলীগ দক্ষিণের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অবস্থা করছেন। সমাবেশে প্রবেশের গেটগুলোর মধ্যে শুধু মন্দির গেটে সম্রাটের ছবি সংবলিত ব্যানার ফেস্টুন লাগানো ছিল। নিজের সমর্থক ও কর্মীদের পরনে ছিল উপহারের লাল টি-শার্ট। সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীদের মাঝে টি-শার্ট, গেঞ্জি উপহার দিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি করেন স¤্রাট।
কঠোর নিরাপত্তা বলয় : মহাসমাবেশ ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। উদ্যানের আশপাশের প্রতিটি মোড়ে ছিল চেকপোস্ট। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা সাদা পোশাকে ছিলেন। সাইবার ক্রাইম ইউনিট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটরিং করেছে। ডিএমপির সদস্য ছাড়াও ঢাকা জেলা পুলিশ ও গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করেছেন। র?্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, র?্যাবের গোয়েন্দা দলসহ ঢাকার ৪টি ব্যাটালিয়ন এবং আশপাশের র?্যাব সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করেছেন। র?্যাবের ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট কাজ করেছে। পাশাপাশি প্রস্তুত ছিল র?্যাবের হেলিকপ্টার উইং।
তবে সমাবেশের মূল আনুষ্ঠানিকতা ও নেতাদের বক্তব্য শুরুর আগেই কিছু লোক সভাস্থল থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। প্রথমে তারা রমনা গেট দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাধা দিলে অনেকে দেয়াল টপকে বাইরে চলে যান। এ সময় সংঘর্ষে ১০ থেকে ১৫ জন হালকা আহত হন। অন্যদিকে মহাসমাবেশে এসে অসুস্থ হয়ে জিন্নাত আলী হারুন (৫০) নামে এক নেতার মৃত্যু হয়েছে। তিনি রাজশাহী যুবলীগের ইউনিয়ন সভাপতি ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়