স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : আতঙ্কিত হওয়ার মতো অবস্থায় নেই বাংলাদেশ

আগের সংবাদ

সরকারি ওষুধ সিন্ডিকেটের পেটে : রোগীর ভাগ্যে জোটে যৎসামান্য, বিনামূল্যে মিলে কোন ওষুধ জানেন না রোগী, তিন স্তরে পাচার হয়

পরের সংবাদ

করোনায় বন্ধ হয়ে গেছে ১০ হাজার কিন্ডারগার্টেন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইফুল ইসলাম : বাংলাদেশে কিন্ডার গার্টেন তথা ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা ১০ লাখ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই এগুলো সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হয়ে আসছে, যার সবটাই শিক্ষার্থীদের বেতনের উপর নির্ভরশীল। প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত। তবে সরকারের সব নির্দেশনা মেনেই এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে আসছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ভূমিকা রাখা এই বিশাল খাতটি করোনা মহামারির শুরু থেকেই দুরাবস্থায় পড়ে, যা এখনো চলছে। জানা গেছে, করোনার মধ্যে প্রায় ১০ হাজার কিন্ডার গার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষকদের বেতন, বাড়িভাড়াসহ নানা খরচ দিতে না পেরে অনেকেই শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ করে মেস, গোডাউন বা ফ্ল্যাট হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন। সরজমিনে এমন অনেক বিদ্যালয়ের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিকে দীর্ঘদিন বেতন না পেয়ে আর্থিক সংকটে পড়ে প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষক শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ দোকানদার, সবজি বিক্রেতা, পাঠাওচালক হিসেবে কাজ করছেন। তাদের অনেকেই হয়ত আর শিক্ষাকতা পেশায় ফিরবেন না। স্কুলগুলোতেও কমেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। অনেক শিক্ষার্থী আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে এর মধ্যে শিশুশ্রমে যুক্ত হয়েছে। অনেক মেয়ের বাল্যবিয়ে হয়ে গেছে।
রাজধানীর গাবতলীর ইউএনএ মডেল স্কুল, খিলক্ষেতের নিউ প্রত্যাশা স্কুল, ভাটারার জোয়ারসাহারায় পপুলার স্কুল, বাড্ডার শিশু নিকেতন, মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ে ফুলকুঁড়ি কিন্ডার গার্টেন এন্ড হাই স্কুল, গুলশানের লন্ডন ইন্টারন্যাশনাল মডেল একাডেমি, মাটিকাটায় আইডিয়াল পাবলিক স্কুল, মিরপুরের আসমা বিদ্যানিকেতন, ইনোভেশন পাইলট, জুনিয়র হাই স্কুল, আদাবরের তানজুরান রেসিডেনশিয়াল মডেল স্কুল, জুরাইনের নলেজ হ্যাভেন আইডিয়াল স্কুল, সাভারের বাইপাইলে সৃজন সেন্ট্রাল স্কুল এন্ড কলেজসহ অসংখ্য কিন্ডার গার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে।
রাজধানীর রূপনগরে অবস্থিত আশার আলো বিদ্যানিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন। তিনিসহ কয়েকজন মিলে ২০১৮ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে স্কুলটি বেশ জমজমাট ছিল। করোনার প্রভাবে বর্তমানে এই স্কুলটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। গত বুধবার সন্ধ্যায়

মোবাইল ফোনে ভোরের কাগজে তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে ভাড়া বকেয়া থাকায় বাড়ির মালিক অন্যদের কাছে বাসাটি ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন। নতুন করে বাসা ভাড়া নেয়া, আবার অগ্রিম দেয়া, সব কিছু মিলিয়ে ব্যয়বহুল হয়ে গেছে। বর্তমানে সব যায়গায় মন্দা চলছে। আগে যারা পার্টনার ছিল সবাই চলে গেছে। তবে ইচ্ছে আছে নতুন করে আবারো একটা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকার।
রাজধানী মিরপুর এলাকার শতদল কিন্ডার গার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বীরেন

চন্দ্র হালদার বলেন, করোনার প্রভাবে বন্ধ হওয়ার পর আর স্কুলটি খোলা যায়নি। তবে আগামী বছর শিক্ষার্থী পেলে আবারো চালু করার ইচ্ছা আছে। তিনি জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় স্কুলটিকে বন্ধ করে ফ্ল্যাট হিসেবে ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন বাড়ির মালিক।
করোনা পরবর্তী সময়ে গাবতলীতে অবস্থিত হোমল্যান্ড স্কুলটি চালু হলেও অবস্থা খুবই খারাপ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার আগে আমাদের ২৫০ জন শিক্ষার্থী ছিল। এখন তা ৫০ জনে চলে এসেছে। যেখানে শিক্ষক ছিল ১০ জন, তা এখন ৪ জনে। শিক্ষকদের ঠিকমতো বেতন দেয়া যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের বেতন থেকে বাড়ি ভাড়াই ওঠে না। এমন করে চললে আগামীতে প্রতিষ্ঠান চালানো কঠিন হয়ে যাবে, শিক্ষার্থী না পেলে স্কুল চালু রাখার কোনো মানে হয় না। তিনি বলেন, বর্তমানে ৯৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান করোনা দশার মধ্যে আছে। মান-সম্মানের ভয়ে অনেকই মুখ খুলে কিছু বলতে পারছেন না।
বাংলাদেশে কিন্ডার গার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে কিন্ডার গার্টেনগুলোয় ১ কোটির মতো শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে ও বেকারত্ব নিরসনেও কিন্ডার গার্টেনগুলো প্রসংশনীয় ভূমিকা রেখে আসছে। করোনা মহামারির শুরু থেকেই আমরা দুরাবস্থার মধ্যে আছি। দীর্ঘ সময় বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে না পারার ফলে এর মধ্যে চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ১০ হাজার স্কুল। ধারণা করা হচ্ছে, ৬০ শতাংশ শিক্ষক শিক্ষকতা পেশা ছেড়েছেন।
ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, আমরা নিজেদের উদ্যোগে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশাল অবদান রেখে আসছি। সরকার যদি এই ১ কোটি শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাত, তাহলে তাদের জন্য নতুন করে অবকাঠামো তৈরি করতে হত। শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের ট্রেনিং, বেতনভাতা বাবদ সরকারকে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হতো। করোনাকালে সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, সরকার আমাদের কোনো সহায়তা করেনি। স্কুলগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের কাছে সহজ শর্তে ব্যাংকঋণ চেয়েও পাইনি।
তিনি বলেন, কিন্ডার গার্টেন তথা ব্যক্তিমালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটা আলাদা মন্ত্রণালয় অথবা একটা অধিদপ্তর গঠনের জন্য আমি জোর দাবি জানাচ্ছি। এটা না হওয়া পর্যন্ত অন্তত প্রতি ৩ মাস পর পর রিভিউ কমিটির মিটিংয়ের মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের নামে হয়রানি না করে সব স্কুলকে নিবন্ধনের আওতায় আনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, নিবন্ধনের নীতিমালা থাকলেও এর কোনো বাস্তবায়ন নেই। সব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত থাকলে কিন্ডার গার্টেনগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আমরা নিরপেক্ষ শিক্ষক ও উদ্যোক্তা হিসেবে কিন্ডার গার্টেনগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য নির্বাচনের আগে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়