স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : আতঙ্কিত হওয়ার মতো অবস্থায় নেই বাংলাদেশ

আগের সংবাদ

সরকারি ওষুধ সিন্ডিকেটের পেটে : রোগীর ভাগ্যে জোটে যৎসামান্য, বিনামূল্যে মিলে কোন ওষুধ জানেন না রোগী, তিন স্তরে পাচার হয়

পরের সংবাদ

উপাচার্যের অপসারণ দাবি : জামালপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইমুম সাব্বির শোভন, জামালপুর থেকে : ২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর জামালপুরের মেলান্দহে ৫শ একর জায়গা নিয়ে স্থাপিত হয় বঙ্গমাতা শেখ ফুজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর প্রথম উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন প্রফেসর ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ। বর্তমানে তার অপসারণ ও ১০ দফা দাবিতে গত ২ নভেম্বর থেকে কর্মবিরতি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয়টির সব শিক্ষক। পাঠদান ও পরীক্ষা বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী মো. ইমাম হোসেন বলেন, গত ৪ বছরে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা তা আমরা পাচ্ছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে আমরা ভিসির পদত্যাগ চাই। আরেক শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদ লালন বলেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে আমাদের ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যেতে চাই।
শিক্ষকদের অভিযোগ, যোগদানের পর থেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়োগ বাণিজ্য, পদোন্নতি বাণিজ্য, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতি করেছেন উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাতের অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ জেলা রাজশাহীর বিভিন্ন ব্যাংকের ২৫টি একাউন্টে রাখার পাশাপাশি হাজারো অনিয়মের অভিযোগ উপাচার্যের বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, সিন্ডিকেট সদস্য ড. মাহমুদুল আলম বলেন, যোগদানের পর উপাচার্যের যে পরিমাণ অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে তা একজন শিক্ষকের পক্ষে কর্মজীবনে উপার্জন করা সম্ভব নয়। এ ছাড়াও তিনি প্রভাব খাটিয়ে তার ছেলে সৈয়দ তাহসিন আহমেদকে সহকারী নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার অনেক পছন্দের কর্মকর্তা আছেন যারা প্রাধিকারভুক্ত না হয়েও গাড়ি ও এসি ব্যবহার করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গাড়ি রাজশাহীতে ভিসি সাহেবের স্ত্রীর জন্য ব্যবহার হয়। তার ৪ বছরের মেয়াদকালে প্রায় ১ হাজার দিন তিনি ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন। সরকারি বিভিন্ন দিবসেও অনুপস্থিত থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ঢাকায় গেস্ট হাউস ভাড়া করে থাকলেও সেখানে কোনো শিক্ষক কোনো দিন থাকেননি এবং সেই গেস্ট হাউসের ভাড়া এখনো বাকি আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, আমরা উপাচার্যের অপসারণ চাই। আমাদের ১০ দফা দাবি পূরণের জন্য পরবর্তী যিনি আসবেন, তার কাছে আমরা দাবি জানাব।
ফিশারিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আব্দুস সাত্তার বলেন, আন্দোলন থামানোর জন্য বিভিন্ন মহল থেকে টেলিফোনে হুমকি-ধমকি দেয়া হয়। তবে প্রয়োজনে আমরা আরো কর্মসূচি ঘোষণা করব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান বলেন, ২ নভেম্বর থেকে আমরা কর্মবিরতিতে আছি। উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে।
তবে দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করে উপাচার্য প্রফেসর ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, দাবি-দাওয়া তারা যেগুলো দিয়েছিল সেগুলো সব আমরা আগেই মেনে নিয়েছি এবং বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে।
এরইমধ্যে ৫টি বাস্তবায়ন চলছে। আর বাকিগুলো আমরা সিন্ডিকেটের আগেই শেষ করব। হঠাৎ করে এটা কেন হলো তা আমারও মাথায় আসছে না। আমি প্রায় ৩৫-৩৬ বছর চাকরি করছি। আমি দেশের বাইরে গিয়েছি। আমি কনসালটেন্সি করি, আমার পৈত্রিক সম্পত্তি আছে। সেই জায়গা থেকে যদি আমার কিছু আর্নিং হয়, সেই আর্নিংটা কি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্নিং। এই বিষয়গুলো তারা সংগ্রহ করে বিভিন্ন জায়গায় পোস্ট করছে। এটা আমার জন্য খুবই কলঙ্কজনক। খুবই দুঃখজনক, খুবই মানহানিকর ঘটনা।
উল্লেখ্য, বঙ্গমাতা শেখ ফুজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি বিভাগে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮শ এবং শিক্ষক রয়েছেন ৪৭ জন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়