পুণ্যস্নানে শেষ হবে সুন্দরবনের রাসমেলা

আগের সংবাদ

মিলছে আইএমএফের ঋণ > বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো : রাহুল আনন্দ

পরের সংবাদ

সিলেটে বিএনপি নেতা খুন : খুনি শনাক্ত হলেও নেই গ্রেপ্তার, হয়নি মামলা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাহিদুল ইসলাম, সিলেট ব্যুরো : সিলেটে বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল খুনের ঘটনার তিনদিন পেরুলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কোনো মামলাও হয়নি। তবে পুলিশ বলছে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া পাঁচজনকেই শনাক্ত করা হয়েছে।
গত রবিবার রাত ৮টার দিকে সিলেট নগরীর বড়বাজার এলাকায় খুন হন সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামাল (৪৫)। তিনি সিলেট ল কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক ভিপি।
পুলিশসহ একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল সিলেট বিমানবন্দর এলাকা থেকে আম্বরখানা বড়বাজার হয়ে গোয়াইটুলার দিকে যাচ্ছিলেন। তার গাড়িকে অনুসরণ করছিল দুটি মোটরসাইকেল। তাতে আরোহী ছিলেন তিনজন। পরে আরেকটি মোটরসাইকেলে থাকা দুই ব্যক্তি বড়বাজার ১১৮নং বাসার সামনে কামালের গাড়ির গতিরোধ করে এবং কামালকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা কামালকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মূলত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে কামালের মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শামছুল ইসলাম। তিনি জানান, কামালের শরীরে ২৫টি ছুরিকাঘাত করা হয়। তার বাঁ হাতে ১৬টি, বাম বগলের নিচে দুটি, বুকের বামপাশে একটি ও বাম পায়ে ছয়টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
পুলিশ সূত্র বলছে, কামাল খুনের ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয় পাঁচজন। এর মধ্যে আজিজুল হক সম্রাট, শাকিল ও রাজু নামের তিনজন ছিল। এদের মধ্যে সম্রাট ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আম্বরখানা এলাকায় সম্রাটের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি ছোট গ্রুপ আছে বলেও জানা গেছে।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কামাল খুন কোনো রাজনৈতিক কারণে নয়, ব্যবসায়িক কারণে ঘটতে পারে। রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসায়ও জড়িত ছিলেন তিনি। জিন্দাবাজারে তার ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা রয়েছে। তিনি পাথর ব্যবসায়ও জড়িত ছিলেন। গেল অক্টোবরে কামালের সঙ্গে ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে সম্রাটের ঝামেলাও হয়েছিল। সম্রাট কোতোয়ালি থানায় কামালসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলাও করেছিলেন। এরই জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে কামাল খুনের ঘটনায় রবিবার সন্ধ্যা থেকেই সিলেট নগরী উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন। এছাড়া নগরীর রিকাবীবাজারে আওয়ামী লীগের জেলা সম্মেলন উপলক্ষে লাগানো ব্যানার, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন তারা। এরমধ্যে কাজী নজরুল অডিটরিয়ামের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও ভাঙচুর করেন।
গতকাল মঙ্গলবার দিনভর এ বিষয়ে আলোচনা হলেও মামলা করেনি আওয়ামী লীগ। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চার ছাত্রদল নেতাকর্মীকে মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। কারাগারে যাওয়া চারজন হলেন- ইশতিয়াক আহমদ রাজু, বদরুল ইসলাম নজরুল, মিলাদ আহমদ ও রাজীব আহমদ।
এ ব্যাপারে সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ ভোরের কাগজকে বলেন, এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার আদালতে তোলা হয়। এরপর আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠায়। তবে এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ কোনো মামলা না করায় ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখাতে হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাত ৮টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহত কামালের স্বজনদের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়নি। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই কামাল খুনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ‘ছাত্রলীগ নেতা’ আজিজুর রহমান সম্রাট গ্রেপ্তারের গুঞ্জন ওঠে। সুনামগঞ্জ থেকে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একটি বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা দেয়নি।
এ বিষয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানার ওসি খান মো. মাইনুল জাকির বলেন, ‘কামাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার ভাই মইনুল এজাহার নিয়ে থানায় আসবেন বললেও এখনো আসেননি। আর স¤্রাটের গ্রেপ্তারের কথা আমিও আপনাদের মতো শুনেছি, অফিসিয়ালি আমাদের কিছু জানানো হয়নি। তবে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়