পুণ্যস্নানে শেষ হবে সুন্দরবনের রাসমেলা

আগের সংবাদ

মিলছে আইএমএফের ঋণ > বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো : রাহুল আনন্দ

পরের সংবাদ

বুয়েট শিক্ষার্থী পরশের ঘাতক কে

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক ও ঢাবি প্রতিনিধি : রাজধানী থেকে নিখোঁজ হওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের (২৩) মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ময়নাতদন্তে তার মাথার বিভিন্ন অংশে ও বুকে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। কারা কী কারণে তাকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দিয়েছে- তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ, র‌্যাবসহ একাধিক সংস্থা।
এরইমধ্যে পরশের এক বান্ধবীসহ একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিশ্লেষণ করা হচ্ছে রাজধানীর রামপুরা ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন স্পটের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ। পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনাটিকে পরিকল্পিত বলায় আরো কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পরশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। তার মাথার বিভিন্ন অংশে ও বুকে আঘাতের চিহ্ন থাকায় হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসক শেখ ফরহাদ জানান, ৩ দিন আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। আঘাতগুলো স্বাভাবিক না হওয়ায় আমরা ধারণা করছি এটি হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করে দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের আইনে আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বুয়েটের শিক্ষার্থী ও পরশের পরিবারের সদস্যরা।
জানা গেছে, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়া ওই তরুণীর সঙ্গে গত ৪ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল পরশের। পাশাপাশি তারা একটি ডিবেট ক্লাবেরও সদস্য। ওই তরুণী ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। ৪ নভেম্বর ঘোরাফেরার পর রাত সোয়া ১০টায় ওই তরুণী বাসায় ফিরে আসেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি। পরশের বাবা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পর ওই তরুণীসহ অন্যদের সঙ্গে পরশের মোবাইল কল রেকর্ডের সূত্র ধরে তদন্ত করছে পুলিশ।
পরশের বাবা কাজী নুরুউদ্দিন ভোরের কাগজকে জানান, সোমবার লাশ উদ্ধারের পর গতকাল মঙ্গলবার বুয়েট ক্যাম্পাস ও আগের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডেমরার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে পরশের জানাজা হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার দেলপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরশের মরদেহ পচে ফুলে গেছে। আমার ধারণা, তাকে শুক্রবার হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয়। তার ব্যবহৃত ফোন, ঘড়ি ও মানিব্যাগ সঙ্গেই পাওয়া গেছে। ফলে আমরা নিশ্চিত পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরশকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ, তারা দোষীদের দ্রুত খুঁজে বের করুক। আমরা এই হত্যার সর্বোচ্চ বিচার চাই।
গতকাল দুপুরে বুয়েটের শহীদ মিনারে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে পরশ ‘হত্যার’ সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীরা এই ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের ভাষ্য থেকে স্পষ্ট যে এটা একটা হত্যাকাণ্ড। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত

অপরাধীদের চিহ্নিত করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি। পরশ ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত মেধাবী এবং নির্ঝঞ্ঝাট একজন মানুষ ছিল।
গতকাল দুপুর ২টার দিকে ফারদিনের মরদেহ বুয়েট ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয় এবং কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজায় বুয়েটের ছাত্র-শিক্ষক, পরশের বাবাসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় বুয়েট ছাত্র পরশের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা তদন্তে র‌্যাব কাজ করছে। তাকে কেউ হত্যা করেছে কিনা, কীভাবে তার মরদেহ নদীতে পাওয়া গেল- এসব বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, পরশের মোবাইল ফোনের লোকেশন চেক করে দেখা গেছে, গত সোমবার ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিচরণ। কে ওই ফোন বহন করেছে তা তদন্তসাপেক্ষ। তিনি বলেন, পরশ নিখোঁজের ঘটনায় রামপুরা থানায় জিডি করেছেন তার বাবা। মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় আমরা বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এরইমধ্যে তার বান্ধবী, যাকে ৪ নভেম্বর রাতে রামপুরা ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে নামিয়ে দিয়েছিল তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। বান্ধবীকে নামিয়ে দেয়ার পর সে কোথায় কোথায় গেছে, সে বিষয়ে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। সেসব বিষয় তদন্ত করে পরবর্তী সময়ে বোঝা যাবে যে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নাকি এর পেছনে অন্য কোনো ঘটনা ঘটেছে।
নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পরশের লাশ কীভাবে শীতলক্ষ্যা নদীতে এলো, সেটি জানতে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণসহ সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, নিখোঁজের ৩ দিন পর সোমবার সন্ধ্যার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের বনানী ঘাট সংলগ্ন ল²ীনারায়ণ কটন মিলের পেছন দিক থেকে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র পরশের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়