পুণ্যস্নানে শেষ হবে সুন্দরবনের রাসমেলা

আগের সংবাদ

মিলছে আইএমএফের ঋণ > বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো : রাহুল আনন্দ

পরের সংবাদ

ফেনী কাস্টমসের নিলাম সিন্ডিকেটের দখলে!

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দ মনির আহমদ : ফেনী কাস্টমসের নিলামে প্রতিবারই ঘুরেফিরে একটি সিন্ডিকেটের হাতেই পণ্য ওঠে। অয়ন এন্টারপ্রাইজ নামের এই প্রতিষ্ঠানটির দখলে ফেনী কাস্টসের নিলাম। এই প্রতিষ্ঠানের ছত্রছায়ায় কাগজে-কলমে ৩টি প্রতিষ্ঠান নিলামে অংশগ্রহণ করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দরদাতা দেখিয়ে অয়ন এন্টারপ্রাইজকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
গত ১০ বছর প্রতিবারই এই প্রতিষ্ঠানটি দুই ধরনের টেন্ডারে বিজয়ী হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, তাদের সহযোগিতা করছে কাস্টমসের এক উপ-পরিদর্শক ও গুদাম কর্মকর্তাসহ কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। নিলাম প্রক্রিয়া সিন্ডিকেটের কবলে পড়ায় ন্যায্য মূল্য বা সঠিক রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার।
জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী নিলামের আগে পণ্যের বাজারদর যাচাই-বাছাই করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরপর কাস্টমস ডিউটি ও চার্জ যুক্ত করে সংশ্লিষ্ট পণ্যের প্রাক্কলিত দর নির্ধারণ করার কথা বলা রয়েছে আইনে। কোনো পণ্যের প্রথম নিলামে প্রাক্কলিত দরের ৬০ শতাংশ দর পেলে তা বিবেচনায় আনা হয়। অন্যথায় দ্বিতীয় দফা নিলাম আহ্বান করতে বলা হয়েছে।
প্রথমবারের চেয়ে দ্বিতীয় দফায় বেশি দর পেলে নিলামে ওঠা পণ্য বিক্রি করা যাবে। অন্যথায় আহ্বান করতে হবে তৃতীয় দফা টেন্ডার বা দরপত্র। সর্বশেষ এ দরপত্রে যা দাম উঠবে তাতেই পণ্য দিতে বাধ্য থাকবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আইনের এ ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়ে ইচ্ছামতো দামে পণ্য ভাগিয়ে নিচ্ছে নিলাম থেকে। এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে বার বার একই প্রতিষ্ঠান সুবিধা নিচ্ছে।
নিলামে অংশ নেয়া ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় কাস্টমসের অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে চুক্তি করে নিলামে অংশ নিচ্ছে। গত ১০ বছর ধরে এ অনিয়ম চললেও নিলাম প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ঘুরেফিরে একই প্রতিষ্ঠান কেন নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হচ্ছে সেটিও খতিয়ে দেখা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি লাইসেন্সের এক স্বত্বাধিকারি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কাস্টমসের নিলাম ঘিরে সক্রিয় রয়েছে একটি সিন্ডিকেট। দর নিয়ে এসব সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে যথাসময়ে অনেক নিলামই সম্পন্ন করা যায় না। ওই সিন্ডিকেটের ভয়ে কেউ দরপত্র দাখিল করতে সাহস পায় না। নিলাম প্রস্তুতের সঙ্গে সঙ্গে ওই সিন্ডিকেট সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে রাখে। দপ্তরে গেলেও তথ্য দিতে রাজি হয় না কাস্টসের কর্মকর্তারা। সম্প্রতি সিন্ডিকেটের এক কর্তা নিলামে অংশ নিতে আগ্রহী কয়েকজনকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ করেন। এসব কারণে নিলামে অংশগ্রহনকারীর সংখ্যা কমছে। সেই সঙ্গে কমছে রাজস্ব আদায়।
সম্প্রতি নিলামে বিজয়ী অয়ন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আমির হোসেন বাহার ভোরের কাগজকে বলেন, কাস্টমস নিলামে নিয়মিত আমরা অংশগ্রহণ করার জন্য কোটেশন জমা দিয়ে থাকি। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমান বাজার যাচাই বাচাই ও বিশ্লেষণ করে থাকি। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে কত টাকার দরপত্র দিলে ব্যবসায় লাভবান হবো এবং নিলাম পাবো সে বিষয়টি লক্ষ্য রেখে এই নিলামে অংশগ্রহণ করি। অভিজ্ঞতার কারণেই নিলাম প্রতিযোগিতায় আমরা বিজয়ী হই।
ফেনী কাস্টমসের গুদাম কর্মকর্তা মকবুল হোসেন বলেন, কাস্টমসে সিল নিলাম প্রায় ৫ বছর আগে হয়েছে। ওপেন নিলাম হয়েছে অক্টোবরে বিজিবির জব্দকৃত ছয়টি গরু। সেই নিলাম সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে অয়ন এন্টারপ্রাইজ পেয়েছে।
এ ব্যাপারে ফেনী কাস্টমসের উপ-কমিশনার বাবুল ইকবাল ভোরের কাগজকে বলেন, কাস্টমস নিলামে ই-টেন্ডার করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ঘরে বসেই অনলাইনে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রেরণ করে নিলামে অংশগ্রহণ করা যাবে।
অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা, নিলাম প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা, পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতেই অনলাইনে নিলাম করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কোন সিন্ডিকেট বা চক্র আছে কী না আমাদের জানা নেই। যে প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ দরদাতা হবে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়