পুণ্যস্নানে শেষ হবে সুন্দরবনের রাসমেলা

আগের সংবাদ

মিলছে আইএমএফের ঋণ > বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো : রাহুল আনন্দ

পরের সংবাদ

পুলিশে ‘বাড়ি ফেরা’ আতঙ্ক : ৩ শতাধিক কর্মকর্তার ব্যাপারে চলছে অনুসন্ধান

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পুলিশের মধ্যে যাদের নিয়ে আস্থা সংকট রয়েছে তাদের নিয়ে ঝুঁকি নিতে চায় না সরকার। ছেঁটে ফেলতে চায়। এর মধ্যে চাকরির নির্ধারিত মেয়াদ শেষের আগে বাধ্যতামূলক অবসরে বাড়ি পাঠানো নিয়ে পুলিশের ভেতরে উদ্বেগ বাড়ছে। কারা এই তালিকায় আছে তা জানতে নিজেদের মধ্যে চলছে কানাকানি। সম্প্রতি পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে বাড়ি পাঠানোর পর তালিকায় আরো নাম রয়েছে এমন খবরে সন্দেহভাজন অনেকে গোপনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। তালিকার ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরে খোঁজখবর করছেন।
বাধ্যতামূলক অবসর প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, যারা নিয়মিত অফিস করেন না, কাজ করেন না, তাদের অবসরে পাঠানো হয়েছে। দক্ষতা ও দেশপ্রেমে ঘাটতি ছিল বলেই পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানো হয়েছে।
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (৫৭ নম্বর আইন)-এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। ৪৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর হলে যে কোনো সময় সরকার জনস্বার্থে কারণ দর্শানো ছাড়া চাকরি থেকে অবসরে পাঠাতে পারবে। তবে এর জন্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হবে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রায় ৩ শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার ব্যাপারে অনুসন্ধান করছে। এদের মধ্যে ইন্সপেক্টর থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তার নাম রয়েছে। এই তালিকা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আছে। পুলিশ সদর দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও বিষয়টি অবগত। স¤প্রতি পুলিশে বড় ধরনের কয়েকটি পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিএনপি, জামায়াত ইসলামী, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার মধ্যে ১৮, ২০, ২১, ২২, ২৪, ২৫, ২৭ ও ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তা আছেন। এমনকি তাদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন। পাশাপাশি তাদের স্বজনরাও সরকারবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এসব অভিযোগ সরকারের হাইকমান্ডকে জানানো হয়েছে। এজন্য তাদের আমলনামা আবারো যাচাই-বাছাই করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকারবিরোধীদের ব্যাচ ধরে ধাপে ধাপে বাধ্যতামূলক

অবসরে পাঠানো হবে। এক্ষেত্রে পুলিশের ১২, ১৫, ১৭ ও ১৮তম ব্যাচ থেকে বেশি বাধ্যতামূলক অবসর হতে পারে। ১২ ও ১৫তম ব্যাচের অনেক কর্মকর্তা অতিরিক্ত আইজিপি হয়েছেন। কিন্তু ওই ব্যাচের অনেকে এখনো এসপি ও অতিরিক্ত ডিআইজি রয়েছেন। যাদের দীর্ঘদিন পদোন্নতি হয়নি, তাদের মধ্য থেকে আরো কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে। যাদের মধ্যে অনেকে ১৫-১৬ বছর ধরে এসপি পদমর্যাদায় রয়েছেন। তাদের ব্যাচমেটরা পদোন্নতি পেয়ে ডিআইজি ও অতিরিক্ত আইজিপি হয়েছেন। এছাড়া ১৭ ও ১৮তম ব্যাচে যারা পদোন্নতি পাননি, জট কমাতে তাদেরও অবসরে পাঠানো হতে পারে। পুলিশ প্রশাসনের ১৫তম ব্যাচের ৩৩ জন কর্মকর্তা রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন কারণে নানা সময়ে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন। তারাই এখন মূলত সরকারের অবসরে পাঠানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অবসরে পাঠানো হলে পুলিশের ক্ষেত্রে এই হিসাব ২৭তম ব্যাচ পর্যন্ত যেতে পারে বলে গুঞ্জন আছে। কারণ এই ব্যাচের কর্মকর্তারা এখন মাঠ পর্যায়ে পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেক্ষেত্রে ২৭তম ব্যাচ পর্যন্ত ধরলে পুলিশে বঞ্চিত কর্মকর্তার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২২৫ জনের মতো। কিন্তু একসঙ্গে এত কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানো সম্ভব না হলেও যারা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ তারা চাকরিতে থাকতে পারবেন না বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, অবসরে পাঠানো কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বড় কোনো অভিযোগ না থাকলেও সরকার মূলত তাদের আস্থায় নিতে পারছে না। এদের কেউ কেউ এই সরকারের আমলে বিপিএম ও পিপিএম পেলেও তাদের নিয়ে সরকার নির্বাচনকালে ঝুঁকি নিতে চাইছে না। কারণ, নির্বাচনের সময় প্রশাসনে রদবদলের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের আওতায় থাকবে, তখন সরকারবিদ্বেষী কেউ যদি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান, তাহলে তা গলার কাঁটা হতে পারে। তাই এই কর্মকর্তাদের এখনই সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে সরকার কাউকে বেতনভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত করবে না।
পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার মতে, পদোন্নতি না পাওয়ায় অনেকের কর্মস্পৃহা লোপ পেয়েছে, হতাশা ভর করেছে। যারা পদ নিয়ে বসে আছেন, ফেসবুকে বিভিন্ন বিদ্বেষমূলক কথা প্রচার করছেন, নিয়মিত অফিস করছেন না, তাদের বাহিনীতে রেখে কোনো লাভ নেই। তাই সব সুবিধা দিয়ে তাদের অবসরে পাঠানো হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পুলিশের আরো কয়েকজন কর্মকর্তা বাধ্যতামূলক অবসর ও ওএসডি হতে পারেন। দায়িত্বরত অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার না করতে পুলিশের সবকটি ইউনিটের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। এর আগেও একই ধরনের বার্তা দেয়া হয়েছিল। নির্দেশনা না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পুলিশের ১২তম ব্যাচ ১৯৯১ সালের ২০ জানুয়ারি, ১৫তম ব্যাচ ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর, ১৭তম ব্যাচ ’৯৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৮তম ব্যাচ ’৯৯ সালের ২৫ জানুয়ারি, ২০তম ব্যাচ ২০০১ সালের ৩১ মে, ২১তম ব্যাচ ২০০৩ সালে মে মাসে, ২২তম ব্যাচ একই বছরের ১০ ডিসেম্বর, ২৪তম ব্যাচ ২০০৫ সালের ২ জুলাই, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট, ২৭তম ব্যাচ ২০০৮ মালের সেপ্টেম্বরে ও ২৮তম ব্যাচ ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগ দেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়